সোনারগাঁয়ে ঐতিহ্যবাহী পাগলা গাছের মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়
Published: 16th, May 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের হামছাদী গ্রামে গাছের খুঁটিকে পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এই পূজা করছেন।পূজা উপলক্ষে সেখানে আয়োজন করা হয় মেলা। স্থানীয়রা মেলাটিকে ‘পাগলা গাছের মেলা’ নামেই চেনেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া মেলায় যোগ দিতে আশপাশের এলাকার মানুষ ভিড় করছেন হামছাদী গ্রামে। শনিবার (১৭ মে) শেষ হবে মেলার আনুষ্ঠানিকতা।
প্রতি বছর ৩১ বৈশাখ থেকে জৈষ্ঠ মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়। মূলত ৩১ বৈশাখ দুপুর থেকে হামছাদী গ্রামের বটতলায় মেলার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। মেলার আনুষ্ঠানিকতা পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
আরো পড়ুন:
মঙ্গলবার দিনব্যাপী কবি সুকান্ত মেলা, প্রস্তুতি সম্পন্ন
টাঙ্গাইলে জামাই মেলায় দর্শনার্থীদের ঢল
এলাকাবাসী জানান, ৫০০ বছর আগে হামছাদী গ্রামের ফনি সেন ও সুরেন্দ্র সেন নামের দুই ভাই ঘর তৈরির জন্য বার্মা থেকে ২০টি খুঁটি কিনে আনেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের ১ তারিখ রাতে তারা দুই ভাই স্বপ্নে দেখেন, তাদের কেনা খুঁটি থেকে দুইটি খুঁটি নিজেদের দেবতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। খুঁটি দুইটি পাগল রূপ ধারণ করে তাদের উদ্দেশ্যে বলছিল, আমাকে ঘরের খুঁটির কাজে লাগাবে না। আমি তোমাদের দেবতা। আমাদের উপাসনা কর। এতে তোমাদের মঙ্গল হবে। পাপ থেকে মুক্তি পাবে। রোগ নিরাময় হবে।
এ ঘটনার পরের দিন দুই ভাই বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে একটি পুকুর পাড়ে খুঁটি দুইটি দেখতে পান। এরপর থেকে তারা দুই ভাই খুঁটিগুলোকে দেবতা মনে করে পূজা করতে থাকেন। তখন থেকে ওই এলাকার হিন্দুরা গাছের খুঁটি দুইটিকে প্রতিবছর পহেলা জ্যৈষ্ঠে পূজা করতে শুরু করেন। পরে একটি খুঁটি হারিয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানান, খুঁটিটি পূজামণ্ডপের পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে সারা বছর ডুবিয়ে রাখা হয়। পাগল ভক্তরা প্রতিবছর পুকুর থেকে খুঁটিটি উঠিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করান। তারা ফল, ঘি, খাসি ও পাঠা পাগলা খুঁটির নামে উৎসর্গ করেন। পূজা শেষে খুঁটিটি আবারো ওই পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়।
পূজা উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হিন্দুরা যোগ দিতে আসেন। অন্য ধর্মের লোকরাও আসেন।
শুক্রবার (১৬ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় নাগর দোলা, বাঁশের বাঁশি, কাঠের চেয়ার, হাতপাখা, চৌকি, মোড়া, চুড়ি, প্লাস্টিকের খেলনা, মিষ্টির দোকানসহ বিভিন্ন সামগ্রী সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
হামছাদী গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, “পূজা উপলক্ষে মেলার আয়োজন হয়। এই মেলায় যোগ দিতে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই আসেন আত্মীয়-স্বজনরা। প্রতিবছর এ মেলার জন্য স্বজনরা অপেক্ষায় থাকেন।”
পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, “এ মেলা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য বহন করে। মেলার আনুষ্ঠানিকতা পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।”
তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে মেলা উদযাপনের লক্ষ্যে এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় গীতা পাঠ ও কীর্তন পরিবেশিত হয়। এই পাগলা গাছের মেলা দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিণত হয়।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ল র খবর
এছাড়াও পড়ুন:
শাসনগাঁও সপ্রাবির শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী ও গাছ বিতরণ
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ৬৬নং শাসনগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল সু, ক্রীড়া সামগ্রী ও গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই ২০২৫) সকাল ১০টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “তোমরা যেভাবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছ, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তোমাদের নিষ্ঠা ও প্রচেষ্টাই হবে আগামীর বাংলাদেশ গঠনের মূল শক্তি। আমরা শুধু ভালো ছাত্র নয়, ভালো মানুষ হতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা ও আচরণ গঠনের বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখার দায়িত্ব আমাদের শিক্ষকদের। তোমরা যে আদর্শে বড় হচ্ছো, ভবিষ্যতে সেই আদর্শই সমাজে ছড়িয়ে পড়বে। তাই শিক্ষকদের উচিত আদর্শ দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোসাম্মত জাহানারা খানম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল দেবযানী কর, উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছবি রানী, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ।
অনুষ্ঠান শেষে জেলা প্রশাসক প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে একটি করে স্কুল সু, ক্রীড়া সামগ্রী এবং একটি করে গাছের চারা তুলে দেন। পরে তিনি নিজ হাতে বিদ্যালয় মাঠে একটি সফেদার চারা রোপণ করেন, যা শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সচেতনতা ও বৃক্ষরোপণের প্রতি উৎসাহ জোগাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।