কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নানা চমক গত কয়েক বছরে পৃথিবীজুড়ে দেখা যাচ্ছে। ডা. হুয়া নামে একজন এআই চিকিৎসক এবার রীতিমতো ক্লিনিকে রোগী দেখবে বলে জানা গেছে। সৌদি আরবে এআই চিকিৎসক আছে এমন একটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। সৌদি আরব বিশ্বের প্রথম এআই ক্লিনিক চালু করছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে রোগীদের রোগ নির্ণয় করা হবে। সিনি এআই নামে একটি চীনভিত্তিক চিকিৎসা প্রযুক্তি সংস্থা আলমুসা হেলথ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই ক্লিনিক চালু করেছে। গত মাসে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় আল-আহসা প্রদেশে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করেছে এআই ক্লিনিক।

এআই ক্লিনিকের লক্ষ্য রোগীদের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য প্রথম যোগাযোগের জন্য মানব চিকিৎসকদের বদলে এআই চিকিৎসক ব্যবহার করা। এআই এখানে অনেক কাজ করলেও মানবচিকিৎসক পর্যবেক্ষক হিসেবে পুরো সিস্টেমে নজর রাখছেন। সিনি এআই জানিয়েছে, এআই ক্লিনিক একটি উদ্ভাবনী চিকিৎসা সেবাব্যবস্থা। এখানে এআই ডাক্তাররা স্বাধীনভাবে রোগের সন্ধান থেকে শুরু করে প্রেসক্রিপশন পর্যন্ত দিতে পারে। এআই যে পরামর্শ দিচ্ছে, মানব ডাক্তাররা তা পর্যালোচনা করেন।

রোগীরা ক্লিনিকে আসার পর একটি ট্যাবলেট কম্পিউটার ব্যবহার করে ডা.

হুয়াকে সব তথ্য দেন। এআই রোগীর সব তথ্য ও লক্ষণ পর্যালোচনা করে। এআই প্রকৃত ডাক্তারের মতো রোগীদের নানা প্রশ্ন করে। মানব সহকারীর সাহায্যে রোগীর বিভিন্ন তথ্য ও ছবি বিশ্লেষণ করে রোগীকে বিভিন্ন পরামর্শ দেয় ডা. হুয়া। এআই যে চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রদান করে, তা পরবর্তী সময়ে একজন মানব ডাক্তার পর্যালোচনা করে স্বাক্ষর করেন। মানব ডাক্তাররা এমন জরুরি অবস্থার জন্য এখানে উপস্থিত থাকেন, যা হয়তো এআই করতে পারে না।

বর্তমানে এআই ডাক্তার শুধু শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করছে। হাঁপানি ও ফ্যারিঞ্জাইটিসের মতো প্রায় ৩০টি রোগের চিকিৎসা করতে পারে এআই ডাক্তার। সিনি এআই ভবিষ্যতে আরও নতুন ৫০টি শ্বাসযন্ত্র, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিক্যাল ও চর্মরোগ–সংক্রান্ত রোগকে চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এআই ডাক্তারের ডেটাবেস প্রসারিত করার লক্ষ্যে এখন কাজ করছে বলে জানা গেছে। পাইলট প্রোগ্রামের ডায়াগনস্টিক ডেটা ১৮ মাসের মধ্যে অনুমোদনের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে। সিনি এআই জানিয়েছে, চলমান পরীক্ষার আগে প্রযুক্তিটির ত্রুটির হার ০.৩ শতাংশ ছিল।

সিনি এআইয়ের সিইও ঝাং শাওডিয়ান বলেন, ‘অতীতে এআই যা করেছে, তা শুধু ডাক্তারদের সহায়তা করার কাজ। এখন আমরা এআইকে সরাসরি রোগীদের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা করার সুযোগ দিতে কাজ করছি।’

টেনসেন্ট, হংশান ক্যাপিটাল, জিজিভি ক্যাপিটাল ও চীনের সরকার এআই চিকিৎসকের বিকাশে অর্থায়ন করছে বলে জানা গেছে।

সূত্র: এনডিটিভি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এআই ড ক ত র এআই ক ল ন ক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স