আজ ২০ মে, ২০২৫ বিশ্ব মৌমাছি দিবস। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো এই দিনটি উৎসর্গ করেছে মৌমাছিদের জন্য। বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরির জন্য মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরাগায়ন কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার জন্য অত্যাবশ্যক, কারণ এটি বিশ্বের ৭৫ শতাংশেরও বেশি শস্য উৎপাদনে সহায়তা করে; যার মধ্যে ফল, সবজি, বাদাম ও বীজ অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বে বিশ হাজারের বেশি প্রজাতির পরাগায়নকারী মৌমাছি ফসলের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্যের গুণমান ও বৈচিত্র্যও উন্নত করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, মৌমাছিরা আজ হুমকির মুখে। মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমান প্রজাতি বিলুপ্তির হার স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০ থেকে ১ হাজার গুণ বেশি। এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে পুষ্টিকর ফসল ও বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্রমেই বৈচিত্র্য হারিয়ে প্রধান কয়েকটি খাদ্যশস্য দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, যার ফলে খাদ্যতালিকায় ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে।

কীটনাশকের ব্যবহার, নিবিড় কৃষি কার্যক্রম, ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তন, একফসলি চাষ এবং জলবায়ু পরিবর্তন– সবকিছুই মৌমাছি জনসংখ্যার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে আমাদের খাদ্যের মান ও পরিমাণের ওপর। পৃথিবীতে মৌমাছিসহ অন্য যেসব পতঙ্গ পরাগায়নে ভূমিকা রাখছে, সেসব প্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ ।

কৃষিতে বিপজ্জনক কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার মানবতা এবং পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি এক প্রকার অবহেলা। প্রতিবছর বিপজ্জনক কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় আনুমানিক ৩৮৫ মিলিয়ন দুর্ঘটনা ঘটে, যা বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলগুলোর ক্ষুদ্র কৃষক, গ্রামীণ নারী এবং শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ২০১৮ সালের জুনে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একই ধরনের সমস্যা নিয়ে ১৫টি শিশু ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ১৩ জনই ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা গেছে। এত বেশি শিশুর মৃত্যুর পর ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি টিম দিনাজপুরের আক্রান্ত এলাকাগুলোয় গবেষণা চালিয়ে শনাক্ত করে, লিচুতে বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহারের কারণেই এসব শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

কীটনাশকের পরিবেশগত প্রভাবও সমানভাবে গুরুতর। কীটনাশক নদী ও ভূগর্ভস্থ জলে মিশে বাস্তুতন্ত্র দূষিত করে এবং জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। মাটিতে অবশিষ্টাংশ বিষাক্ত খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবাহিত হয়ে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে, যার মধ্যে হরমোনজনিত অস্বাভাবিকতা ও ক্যান্সার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে: ১৯৭২ সালে ৪ হাজার টন থেকে ২০২২ সালে ৪০ হাজার টনে– পাঁচ দশকে দশ গুণ বৃদ্ধি। দেশীয় কীটনাশক আমদানিকারকের সংখ্যা ২০০০ সাল থেকে ২৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭০০-তে পৌঁছেছে। এই অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি কঠোর তদারকির জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। 

আশ্চর্যজনকভাবে, উন্নত দেশগুলোতে বিপজ্জনক কীটনাশক নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো নিয়মকানুন দুর্বল এমন দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এগুলো উৎপাদন এবং রপ্তানি করে যাচ্ছে। কোম্পানিগুলোর এমন আচরণ স্পষ্টতই দ্বিচারিতা। পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক অংশীদারদের দ্বারা পরিচালিত একটি জরিপ অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ১১টি কীটনাশক খুচরা দোকানে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সুরক্ষা শাখা এখন পর্যন্ত ৪০টি কীটনাশক নিষিদ্ধ করেছে, যার মধ্যে সর্বশেষ ছিল ২০২৩ সালে কার্বোফুরান। বিপজ্জনক রাসায়নিক শিল্পের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তারকে সুগম করতে বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো অনেক উন্নয়নশীল দেশে নীতি প্রণয়ন এবং কৃষি ব্যবস্থার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে। এটি কেবল কৃষকদের স্বাস্থ্য এবং জীবিকাকেই বিপন্ন করে না, জীববৈচিত্র্য এবং আমাদের গ্রহের স্থায়িত্বকেও হুমকির মুখে ফেলে। কৃষক, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশকে সংরক্ষণ করতে হলে আন্তর্জাতিক করপোরেশন এবং তাদের অংশীজনকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী ২০৩৫ সালের মধ্যে ভয়াবহ ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার রুখতে জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থার অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিষাক্ত রাসায়নিক উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং বিপজ্জনক কীটনাশক নির্মূলে সহযোগিতার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। বিপজ্জনক কীটনাশক নির্মূলে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়, অংশীজন এবং সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।

পরাগায়ন সংকট, জীববৈচিত্র্য ও জীবিকার সঙ্গে সম্পর্ক অনুধাবন করে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সনদ পরাগকারীদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছে। ২০০০ সালে পঞ্চম কনফারেন্স অব পার্টিজে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইপিআই চালু করা হয়। যার লক্ষ্য কৃষি ও সংশ্লিষ্ট পরিবেশে পরাগকারীদের টেকসই ব্যবহারে সহায়তা করা। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়—যেমন রানি মৌমাছি প্রজনন, কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি, মধু উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য টেকসই সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে। 

প্রকৃতিবান্ধব কৃষি পদ্ধতি যেমন এগ্রোইকোলজি, কৃষি-বনায়ন এবং সমন্বিত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা পরাগকারী প্রাণীদের টিকে থাকতে সহায়তা করে, যা শস্য উৎপাদনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে এবং খাদ্য ঘাটতি ও পরিবেশগত প্রভাব কমায়।

সাকিউল মিল্লাত মোর্শেদ: প্রধান উপদেষ্টা, নর্থবেঙ্গল হানি কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ ও নির্বাহী পরিচালক, শিসউক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র সহ য ত পর ব শ র জন য স রক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

সাত বছরে ‘সারা’ লাইফস্টাইল

সাত বছরের পথচলা পূর্ণ করল লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘সারা’। ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি অল্প সময়ের মধ্যে ফ্যাশনপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। সাশ্রয়ী দামে গুণগত পোশাক বিক্রি করার লক্ষ্য নিয়ে ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে স্নোটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘সারা’ লাইফস্টাইল। আজ দেশজুড়ে ক্রেতাদের কাছে একটি জনপ্রিয় লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘সারা’।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সারা আয়োজন করেছে পিকচার কনটেস্ট, বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফার এবং কুইজ প্রতিযোগিতা। 

পিকচার কনটেস্টে সারা’র ফেসবুক পেজে ব্র্যান্ডটির পোশাক পরে ছবি আপলোড করে যে কেউ অংশ নিতে পারবে এবং জিতে নিতে পারবে আকর্ষণীয় পুরস্কার। এছাড়া ন্যূনতম এক হাজার টাকার কেনাকাটায় নির্দিষ্ট একটি পণ্য দ্বিতীয়বার মাত্র সাত টাকায় কেনার সুযোগ থাকবে বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফারে। কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েও গ্রাহকরা জিতে নিতে পারবেন দারুণ সব পুরস্কার। 

এছাড়াও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ব্র্যান্ডটি রাজধানীর গুলশানের কদমতলী লেকের পাড়ে ৭০০ গাছ রোপণ করেছে। কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে, এই উদ্যোগ প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

স্নোটেক্স গ্রুপ ও সারা লাইফস্টাইলের পরিচালক শরিফুন রেবা বলেন, ‘সাত বছরের এই পথচলায় আমরা আমাদের গ্রাহক, অংশীদার ও টিমের কাছে ঋণী। সবার ভালোবাসা ও সমর্থন আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সামনে আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

প্রসঙ্গত, স্নোটেক্স গ্রুপের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘সারা’ কাজ শুরু করেছে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে। ঢাকার মিরপুর-৬-এ অবস্থিত ‘সারা’র প্রথম আউটলেট নিয়ে কাজ শুরুর পর বসুন্ধরা সিটির লেভেল-১, ব্লক-এ-এর ৪০ এবং ৫৪ নম্বর শপটি ছিল ‘সারা’র দ্বিতীয় আউটলেট। ধীরে ধীরে আউটলেট সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হয়। সারার সর্বশেষ আউটলেট নারায়ণগঞ্জে। এছাড়াও খুব শীঘ্রই খুলনা শহরের শিববাড়ী মোড়ে সারা'র আরও একটি নতুন আউটলেট চালু হতে যাচ্ছে।

আউটলেটে কেনাকাটার পাশাপাশি দেশের যে কোনো জায়গা থেকে অর্ডার করতে ভিজিট করুন সারা’র নিজস্ব ওয়েবসাইট- saralifestyle.com। ফেসবুক পেজ facebook.com/saralifestyle.bd এবং ইনস্টাগ্রাম instagram.com/saralifestyle.bd। এছাড়াও সহজে কেনাকাটার জন্য সারা অ্যাপ ডাউনলোড করুন প্লে স্টোর থেকে- https://play.google.com/store/apps/details?id=com.saralifestyle। আর দেশের যেকোনো জায়গায় বসে কুরিয়ারের মাধ্যমে আপনার অর্ডারকৃত পণ্য ডেলিভারি পেয়ে যান সহজে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রায়ের ৭ বছর পরও পলাতক মৃত্যুদণ্ডের ১৬ আসামি
  • সাত বছরে ‘সারা’ লাইফস্টাইল
  • আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হলেই বিপদ, পরের মৌসুমে পুড়বে কপাল
  • মানিকগঞ্জের ক্যাথল্যাব যাবে চমেক হাসপাতালে