জেনিনে কূটনীতিকদের ওপর ইসরায়েলের গুলিবর্ষণ ‘অগ্রহণযোগ্য’: ইইউ
Published: 22nd, May 2025 GMT
অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরের প্রবেশপথে বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের সতর্কতামূলক গুলিবর্ষণকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। খবর আনাদোলুর।
ইইউ পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা ক্যালাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “কূটনীতিকদের জীবনের ওপর যেকোনো হুমকি অগ্রহণযোগ্য।” তিনি ইসরায়েলকে এই ঘটনার তদন্ত করতে এবং দায়ীদের জবাবদিহি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার জেনিন শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করতে গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব ও এশীয় দেশগুলোর একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল ইসরায়েলি হামলা শিকার হন। ওই এলাকা থেকে কূটনৈতিক দলটিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি সেনারা সতর্কতামূলক গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে স্পেনের পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩০ মিনিটের মধ্যে ৩৮ জন নিহত
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভোট ‘এক্স’ এ একটি পোস্ট করে এই ঘটনায় ইসরায়েলের কাছ থেকে ‘স্পষ্ট’ ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি এক্স পোস্টে লিখেছেন, “আমরা ইসরায়েল সরকারকে অবিলম্বে কী ঘটেছে তা স্পষ্ট করতে বলছি। কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে হুমকি অগ্রহণযোগ্য।”
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাসচিবকে রোমে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ঘটনার ‘সরকারি ব্যাখ্যা’ পেতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট এক্স পোস্টে লিখেছেন, “জেনিনে আমাদের একজন কূটনীতিক অংশ নিচ্ছিলেন, সেখানে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালিয়েছে। এটা অগ্রহণযোগ্য। ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হবে।”
তিনি ‘চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে’ কাজ করা ফরাসি কর্মীদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
আয়ারল্যান্ডের তানাইস্তে (উপ-প্রধানমন্ত্রী) এবং পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “জেনিনে দুই আইরিশ কূটনীতিকসহ একদল কূটনীতিকের ওপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছে এমন খবরে আমি হতবাক ও আতঙ্কিত। সৌভাগ্যবশত, কেউ আহত হয়নি। এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।”
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ‘বিনা উস্কানিতে গুলি চালানোর’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলি সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
তিনি আরো বলেছেন, “স্থলে কূটনীতিকদের স্বাধীন পর্যবেক্ষক ভূমিকা অপরিহার্য এবং কোনোভাবেই ইসরায়েলি নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য হুমকি নয়।”
স্পেনের সরকার এক লিখিত বিবৃতিতে গুলিবর্ষণের ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা এই অত্যন্ত গুরুতর ঘটনার তাৎক্ষণিক ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক এজেন্টদের সুরক্ষার জন্য তাদের বাধ্যবাধকতাকে সম্মান জানাবে।”
নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প ‘এক্স’ পোস্টে বলেছেন, “কূটনীতিকদের তাদের কাজ করতে সক্ষম হওয়া উচিত এবং তাদের হুমকি দেওয়া অগ্রহণযোগ্য।”
ভেল্ডক্যাম্প আরো বলেন, তিনি ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ডাচ প্রতিনিধি এবং ইসরায়েলে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন, প্রতিনিধিদলের কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডস গুলিবর্ষণের নিন্দা জানায়, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনা স্পষ্ট করার অনুরোধ করেছে এবং প্রতিক্রিয়ায় আরো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি ঘটনাটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, কূটনীতিক দলটির মধ্যে ডেনিশ মিশন প্রধান ছিলেন, ‘সৌভাগ্যবশত নিরাপদ’ আছেন।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে, আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করতে বলেছি যাতে আমরা একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পেতে পারি।”
অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিয়েট মেইনল-রাইঞ্জার গুলি চালানোর সমালোচনা করেছেন। তিনি ‘এক্স’ পোস্টে লিখেছেন, “একটি বিষয় একেবারে স্পষ্ট: এরকম কিছু ঘটতে দেওয়া উচিত নয়। এই কারণেই আমরা আশা করি যে ঘটনাটি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তদন্ত করবে।”
একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা আনাদোলুকে বলেন, জেনিন শরণার্থী শিবিরের প্রবেশপথে একটি বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল পৌঁছানোর পর ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ভয় দেখানোর জন্য গুলি চালিয়েছে।
ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফার মতে, প্রতিনিধিদলটিতে মিশর, জর্ডান, মরক্কো, ইইউ, পর্তুগাল, চীন, অস্ট্রিয়া, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, তুর্কিয়ে, স্পেন, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, রাশিয়া, জাপান, রোমানিয়া, মেক্সিকো, শ্রীলঙ্কা, কানাডা, ভারত, চিলি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকরা ছিলেন এবং আরো বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র পরর ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র ক টন ত ক ইসর য় ল পর ইসর মন ত র কর ছ ন বল ছ ন র জন য র ওপর ইসর য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কের কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্রমজীবী ভোটারদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য জোহরান মামদানি
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনের দলীয় বাছাইয়ে সবাইকে চমকে দিয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে প্রাথমিক জয়ী হন জোহরান মামদানি। গত ২৪ জুন এই দলীয় বাছাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
গত মঙ্গলবার র্যাঙ্কড চয়েস পদ্ধতিতে (পছন্দের ক্রমানুযায়ী পাঁচজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া) তৃতীয় ধাপে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে চূড়ান্ত জয় নিশ্চিত করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান। প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট।
জোহরানের এই সুষ্পষ্ট বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। তবে একই সঙ্গে ভোটের মাঠে তাঁর দুর্বলতা কোথায় থাকতে পারে, তা নিয়েও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
ভোটের প্রথম ধাপের ফলাফলে দেখা গেছে, ব্রাউনসভিল এবং ইস্ট ফ্ল্যাটবুশের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ–অধ্যুষিত এলাকায় খুব একটা ভালো করতে পারেননি জোহরান। এসব এলাকায় বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন অ্যান্ড্রু কুমো।
ব্রাউনসভিল ও ইস্ট ফ্ল্যাটবুশের ৬০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা কৃষ্ণাঙ্গ। এসব এলাকায় দারিদ্র্যের হারও বেশি। নিউইয়র্ক নগরে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার যেখানে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ, সেখানে ব্রাউনসভিলে এই হার ৩২ দশমিক ৪ এবং ইস্ট ফ্ল্যাটবুশে সেই হার ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত ব্যাপক আলোচিত এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি, সেসব এলাকার মধ্যে ৪৯ শতাংশের সমর্থন পেয়েছেন কুমো, আর মামদানির পক্ষে সমর্থন ছিল ৩৮ শতাংশ।
অন্যদিকে যেসব এলাকায় কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেখানে কুমোর পক্ষে সমর্থনের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ শতাংশে।
তবে এখানেই মামদানি অনেককেই চমকে দিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার ২০ ও ৩০ বছর বয়সী তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি, যা ২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনকে ছাড়িয়ে গেছে।এসব পরিসংখ্যানের কারণে প্রশ্ন উঠেছে, নিউইয়র্ক নগরে বসবাসের জন্য সাশ্রয়ী শহরে পরিণত করার যে প্রতিশ্রুতি জোহরান দিয়েছিলেন, তা কি কোনো কাজেই আসেনি? নাকি এসব পরিসংখ্যানের পেছনে লুকিয়ে আছে আরও জটিল কোনো গল্প।
পরিচিত মুখ, কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা
নির্বাচনের প্রাথমিক ফল ঘোষণার আগেই কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল, নিম্ন আয়ের ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সমর্থন আদায়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন জোহরান।
মার্চ মাসে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, যেসব ভোটারের পরিবারের আয় ৫০ হাজার ডলারের নিচে, তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ প্রথম পছন্দ হিসেবে কুমোকে বেছে নিয়েছেন।
জরিপে দেখা যায়, মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের দলীয় বাছাইয়ে নয়জন প্রার্থীর মধ্যে জোহরান ছিলেন অনেক পিছিয়ে। তখন মাত্র ১১ শতাংশ সমর্থন ছিল তাঁর প্রতি। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল আরও নিচে—মাত্র ৮ শতাংশ। অথচ জরিপে কুমো পেয়েছেন ৫০ শতাংশ ভোট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু বিষয়ের কারণে কুমো সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। রাজনৈতিক পরামর্শক জেরি স্কারনিক বলেন, ‘কুমো এই নির্বাচনের আগেই পরিচিত মুখ ছিলেন। শুধু দুবারের গভর্নরই নন, বরং সাবেক গভর্নর মারিও কুমোর ছেলে এবং প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রশাসনেও কাজ করেছেন তিনি।’
আরও পড়ুনজোহরান মামদানি: প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতার দোটানায় নিউইয়র্কের নতুন স্বপ্ন০২ জুলাই ২০২৫ডেমোক্র্যাট প্রাইমারি নির্বাচনে জয়ের খবরে সমর্থকদের সঙ্গে উল্লাস করছেন জোহরান মামদানি। ২৫ জুন ২০২৫