ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নাট্যশিল্পী প্রশান্ত হালদারের বাড়িতে আগুনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ৬২ জন শিল্পী-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মী। দ্রুততম সময়ে মধ্যে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন তারা।

থিয়েটার বিষয়ক পত্রিকা ক্ষ্যাপার নির্বাহী সম্পাদক অপু মেহেদী সোমবার বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন।

এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছি কতিপয় উগ্র মানুষ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়েছেন। এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও প্রতিক্রিয়াশীল কর্মকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় দুষ্কৃতকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে।’

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নাট্যশিল্পী, কবি ও কথাশিল্পী প্রশান্ত হালদারের ঝিনাইদহ, কালিগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি নানা রকম ‘সন্দেহের অবকাশ’ তৈরি করেছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জেনেছি বেশ কিছুদিন থেকে অজ্ঞাতনামা কে বা কারা রাতের অন্ধকারে প্রশান্ত হালদারের বাড়ির জানালায় উস্কানিমূলকভাবে ৩/৪ বার মানুষের মল মাখিয়ে যায়, বাড়ির উঠানে হাড় হাড্ডি নিক্ষেপ করে। একাধিকবার তাদের ঘরের চালে ইট ও ঢিল নিক্ষেপ করে।

পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রশান্ত হালদারের পরিবার এবং তাদের প্রতিবেশিদের সঙ্গে কথা বলে আমরা ধারণা করছি, এই আগুন লাগার ঘটনা পূর্বাপর এইসব ঘটনার ধারাবাহিকতা। সামাজিক শান্তি বিনষ্টের লক্ষে পরিকল্পিতভাবে এই আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুনে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার থেকেও এই পরিবার যে মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে তা অমানবিক। পুরো পরিবার আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছে।’
 
সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘এর পেছনে কারা, কী উদ্দেশ্যে এটা করেছে, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা রাষ্ট্রের আইনশৃংখলা বাহিনীর দায়িত্ব। আমরা দাবী করছি দ্রুত এই বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন নাট্যনির্দেশক ও অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, মোহাম্মদ বারী, অলক বসু, নাট্যগবেষক বাবুল বিশ্বাস, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, কবি আলফ্রেড খোকন, নাট্যশিক্ষক ইউসুফ হাসান অর্ক, নাট্যনির্দেশক ও অভিনেতা আমিনুর রহমান মুকুল, নাট্যশিক্ষক সাইদুর রহমান লিপন, নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক কামালউদ্দিন কবির, নাট্যনির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার, নাট্যসংগঠক আখতারুজ্জামান, নাট্যনির্দেশক ও অভিনেতা অনন্ত হিরা, শিক্ষক ও নাট্যকার শহিদুল মামুন, চিত্রশিল্পী শাহীনুর রহমান, উপস্থাপিকা ও আবৃত্তিশিল্পী দিপ্তী চৌধুরী, অভিনেত্রী ও নাট্যনির্দেশক নূনা আফরোজ, আইরিন পারভীন লোপা, থিয়েটারওয়ালা পত্রিকার সম্পাদক হাসান শাহরিয়ার, কথাসাহিত্যিক রাজীব নূর, নাট্যনির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দার, শিক্ষক ও নাট্যকার সামিনা লুৎফা নিত্রা, অপু শহীদ, নাট্যনির্দেশক সাইফ সুমন, রেজা আরিফ, কবি মাজহার সরকার, স্থপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সারা আফরীন, কামার আহমদ সাইমন, চলচ্চিত্র নির্মাতা জুয়েইরিযাহ মউ, নাট্যনির্দেশক বাকার বকুল, মুক্তনীল, শামীম সাগর, শিক্ষক ও আনন জামান, সুদীপ চক্রবর্তী, আশিকুর রহমান লিয়ন, কথাসাহিত্যিক ও গবেষক রাখাল রাহা, সংস্কৃতিকর্মী পাভেল রহমান, কবি ও অপু মেহেদী, নাট্যশিল্পী কাজী রোকসানা রুমা, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, মোজাফফর হোসেন, সুমন মজুমদার, হামিম কামাল, পলাশ মজুমদার, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ, শিক্ষক আর রাজী, প্রকাশক সাঈদ বারী, শিক্ষক সায়মা আলম, অভিনেতা ও সংগঠক কামাল বায়েজীদ, লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান, কবি ও সাংবাদিক শিমুল সালাহ্উদ্দিন, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী প্রশান্ত অধিকারী, আলোক পরিকল্পক ঠান্ডু রায়হান, কবি ও প্রাবন্ধিক সৈকত হাবীব, কবি মাশুক শাহী, নাট্যশিল্পী নাজনীন চুমকী, আলোক পরিকল্পক অম্লান বিশ্বাস, অভিনেতা ও সংগঠক আলী মাহমুদ, কবি রিসি দলাই, নাট্যশিল্পী ফৌজিয়া করিম অনু, সাকিল সিদ্ধার্থ এবং নাট্যনির্দেশক ও কথাসাহিত্যিক রেজানুর রহমান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আগ ন ন ট যশ ল প র রহম ন র ঘটন স গঠক

এছাড়াও পড়ুন:

এভারেস্ট দিবসঃ বাংলাদেশের প্রশ্ন -এভারেস্টে উঠলে কী হয়? 

এভারেস্টে উঠলে কী হয়?—আমাদের দেশে এখনো সিংগভাগ মানুষেরই ধারনার বাইরে পর্বতারোহন কি জিনিস। এমনটা হবারই কথা কারন আমরা সমদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি বসবাস করা মানুষ। পর্বতের সংজ্ঞায় যা বোঝায় তা আমাদের বাংলাদেশে নাই। হিমালয়ের পর্বত আছে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ গুলোতে - ভারত, নেপাল, ভূটান, তিব্বত, পাকিস্তান এবং চীন। গ্রেট হিমালয়া খ্যাত এই দেশগুলোর নানা অঞ্চলজুড়ে এই পর্বতশৃঙ্গের অবস্থান। তার মধ্যে মাউন্ট এভারেস্ট, লোৎসে, কে-টু, কাঞ্চনজঙ্ঘা, অন্নপূর্ণা অন্যতম। এখন কথা হলো এইসব পাহাড়ে উঠলে বা চড়লে কি হয়? কেনই বা এইসব পর্বতে চড়তে মৃত্যু ঝুঁকি থাকা সত্যেও মানুষ ছুটে যায়।

কী এমন আছে তাতে? এইসব প্রশ্নের সাথে সাথে অনেকে বলে থাকেন এগুলো ব্যক্তিগত লাভ। তাতে দেশের কি লাভ হয়? চাকতি নিক্ষেপ, তীর ধনুক নিক্ষেপ বা ভলিবল ফুটবল ক্রিকেটের মত খেলায় আপনার আমার কি লাভ হয়? যারা খেলে তাদের হয়ত লাভ হতে পারে। আপনি দেখলেন হাততালি দিলেন একটু আনন্দ পেলেন। বিশ্বের বুকে যখন দেশের পতাকা সবার সামনে দেখানো হয় তখন আপনার বুকটা গর্বে ভরে ওঠে। এভারেস্টে চড়া টিভিতে সরাসরি দেখা যায় না কারণ এটাকে এক্সট্রিম স্পোর্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। ভেতো বাঙালি বলে যে জাতিকে গালি দেওয়া হতো সেই জাতির ৭ জন সন্তান পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থানে পদচিহ্ন রেখে এলো এবং দেশের পতাকা সারা বিশ্বের কাছে পরিচয় করালো যে এই দেশের তরুণরাও কঠিনতর কাজ করতে পারে। তাতে করে দেশের তরুণরা একটা দিক নির্দেশনা পায় যে, এই দেশের মানুষ যেমন কঠিন পরিশ্রম করে কৃষিকাজ করে ফসল ফলাতে পারে তেমনি বিশ্ব রেকর্ড করে গিনেস বুকে নিজের নাম এবং দেশের নাম লিখাতে  পারে। এতে দেশেরই লাভ ,গিনেস বুকে বাংলাদেশের নাম যুক্ত হলো। 

এমন প্রশ্ন ১৯২৩ সালের দিকেও ছোঁড়া হয়েছিল যখন জর্জ ম্যালরি এভারেস্ট আরোহনের জন্য তৃতীয়বার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কেন বার বার পর্বতে যান? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, কারণ এভারেস্ট সেখানে আছে। এবারে সপ্তম বাংলাদেশী হিসেবে এভারেস্টের চূড়া ছুঁয়েছেন  ইকরামুল হাসান শাকিল। শুধু এভারেস্টে আরোহণই তার লক্ষ্য ছিল না, তিনি একটি বিশ্ব রেকর্ডও করেছেন। বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত থেকে হেঁটে যমুনা নদী সাঁতরে পার হয়েছেন। ভারত হয়ে নেপালে প্রবেশ করে ৮৪ দিনে প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এভারেস্টে আরোহণ করেছেন শাকিল। যা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। সম্প্রতি শাকিলের এই অর্জনের কথা প্রথম আলো-তে ছাপা হলে জনৈক শিক্ষিত খুব বাজে ভাবে স্যোসাল মিডিয়াতে মন্তব্য লিখেছেন- “এরা মানুষের কাছে হাত পেতে পেতে হিমালয়ে যায় কেন? জঘন্য লাগে ক্রাউড ফান্ডিং বিষয়টা। তিনি আরেক এভারেস্টার ডাক্তার বাবর আলীকে উদ্দেশ্য করে সেখানে লিখেছেন, ‘‘ক্রাউড ফান্ডিং করে অন্নপূর্ণা যায় তারপর ঘুরে ফিলিপিন, আজব লাগে!”

আরো পড়ুন:

শাকিলের এভারেস্ট জয়ে আবেগ আপ্লুত মা, এলাকাবাসীর উচ্ছ্বাস

নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে পারাও এভারেস্ট জয়ের সমান: বাবর আলী

প্রথমেই বলে নেই এই ধরনের এক্সট্রিম স্পোর্টস কখনই স্পন্সরশীপ ছাড়া সম্ভব না। কারণ যে ৪০লাখ টাকার মালিক সে কখনই এভারেস্ট চূড়াতে যাবে না। যার এই ক্ষমতা আর মনোবল আছে কিন্তু অর্থের যোগান নেই তাকে দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোর স্পন্সরশীপের জন্য হাত পাততে হবে। সাকিব আল হাসান কে ব্র্যান্ডগুলো স্পন্সর করার জন্য বসে থাকে কারণ সেখানে পণ্যের অনেক প্রচারণা হয়, তাতে ব্র্যান্ড ভ্যলু বাড়ে। কিন্তু এ ধরনের স্পোর্টসে মানুষ তেমনভাবে জানেনা বা দেখেনা, সুতরাং স্পন্সররাও এগিয়ে আসতে চায় না। ক্রাউড ফান্ডিং পৃথিবীব্যাপী একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। নানা কাজে বিদেশিরা ক্রাউড ফান্ডিং করে থাকে। যিনি মন্তব্য করেছেন তার হয়তো ধারনাই নাই এ ধরনের কাজ করতে কি পরিমাণ শারীরিক মানসিক আর আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন পড়ে। দুনিয়াব্যপী নানা অভিযাত্রা এবং সৃজনশীল কাজের জন্য তারা হাত পাততে একটুও দ্বিধা করে না। তারা শুধু ব্যক্তিগতভাবেই না, প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও হাত পাতে। এই ধরুন, গত ১৫মে পশ্চিমের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের খেলাধূলো ও নানা সৃজনশীল কাজে বৃত্তি দেয়ার জন্য হাত পাতলো, অভিভাবকসহ ক্যম্পাস 

সংশ্লিষ্টদের কাছে গণহারে ই-মেইল দিলো- 'গিভ ডে' নামের দিনটিতে দানের আহবান জানিয়ে, পরদিন ঘোষণা করলো তাদের তহবিলে উঠেছে  ২০লাখ ৬০ হাজার ২৯ ডলার, ভাবুন একবার!

ক্রাউড ফান্ডিং যে বা যারা দেন তাদের মূলত নিজস্ব স্বার্থ,উ‌দ্দেশ‌্য বা ভালবাসা থা‌কে। স্পন্সর বাছবিচার ছাড়া টাকা দেয়না! তা‌দের বিজ্ঞাপ‌নের জন‌্য দেয়। আর যারা ব‌্যা‌ক্তি পর্যা‌য়ে দেন তারা খেলাটা ভালবা‌সেন। নি‌জে কখনও ঐ শিখ‌রে যে‌তে না পার‌লেও, যে পা‌রে তা‌কে সাহায‌্য ক‌রেন খু‌শি মনে।  

পর্বত আরোহণের মত স্পোর্টসে যে ধরনের প্রস্তুতি তাতে করে পর্বতারোহীদের জন্য লংটার্মে সার্ভিস করা সম্ভব হয় না। আবার সার্ভিসে যুক্ত হলে প্রস্তুতিতে ঘাটতি হয়,অনেক সময় জীবন দিয়ে তার মূল্য দিতে হয়। 
এই কাজ একদিকে যেমন  ব্যয়বহুল তেমনি স্পন্সর এর সংখ্যাও খুব বেশি না। সারা পৃথিবীতেই অনেক পর্বতারোহী তাই ক্রাউড ফান্ডিং এর সাহায্য নেন এবং অনেক সফল পর্বতারোহী এর আগেও নিয়েছেন। বাবর আলীসহ আরো অনেক পর্বতারোহী রয়েছেন এদেশেই যারা নিজের অন্য প্রয়োজনকে ত্যাগ স্বীকার করে নিজের টাকা দিয়ে বা জিনিসপত্র বেঁচে পর্বতে গিয়েছেন, তার জন্য একটা বড় কলিজা লাগে যা সবার থাকে না। 

একজন পর্বতারোহী যতই স্টেবল হোক এক একটা অভিযানের যেই বিশাল খরচ,দিনের পর দিন ব্যক্তিগত অর্থে তা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বাবর শাকিলের মত আরও পর্বতারোহী আছেন যারা সমর্থন পেলে আরো অনেক রেকর্ড এই দেশকে এনে দিতে সক্ষম হবেন।

পৃথিবীতে ভিন্ন মত, ভিন্ন পথের অসংখ্য মানুষ রয়েছেন, যারা আম জনতার মত গৎবাঁধা কাজ করে না। সব ধরনের আরাম আয়েশ আর জাগতিক ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে পারে, তাইতো তারা রেকর্ডও গড়তে পারে। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে পৃথিবীব্যপী এমন ঘটনা অনেক আছে। সবাইকে এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা  ঠিক না। 

বাকিদের মন্তব্যের সাথে আমি একটু জুড়ে দিতে চাই, এডভেঞ্চার আর এক্সট্রিম স্পোর্টে ক্রাউডফান্ডিং করা জরুরি কারণ, তরুণ সমাজ আজ হতাশা গ্রস্ত। তারা এদের সাফল্য দেখে অনুপ্রেরণা নিবে যে মানুষ চাইলেই অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। মাদকের দিকে না ঝুঁকে সুন্দর একটা জীবনে পৃথিবীতে বিচরণ করে অনেক কিছু অর্জন করা সম্ভব। তরুণদের ভালো উদ্যোগে তাই নিজে থেকেই সহায়তা করা উচিত আর স্পন্সরদের এগিয়ে আসা উচিত। তাহলে দেশ ও জাতি পাবে একটি উপযুক্ত তরুণ সমাজ। 

বাংলাদেশের পর্বতারোহন যাত্রা: আজ ২৯শে মে এভারেস্ট দিবস। ১৯৫৩ সালে নিউজিল্যন্ড এর এডমন্ড হিলারি এবং দার্জিলিং এর শেরপা তেনজিং নোরগে প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দুতে তাদের পদচিহ্ন দিয়েছেন। ১৯৬৭ সাল থেকে হিমালয় ভ্রমণের সূচনা করেছেন বাংলা দেশের এক তরুণ ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ মুকুল। অন্নপূর্ণা ট্রেকিং এর উপর তিনি একটি বই লিখেছিলেন - “পাহাড় যখন ডাকে”।

এভারেস্ট বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ থেকে দুইজন তরুণ ২০০৩ সালে এভারেস্ট বেইজ ক্যম্পে গিয়েছিলেন। মুনতাসির মামুন ইমরান এবং রিফাত হাসান। ‘এভারেস্ট’ নামে মুনতাসির মামুনের বইয়ে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আছে। এরপর ২০০৪ সালে বাংলাদেশ থেকে চার জনের একটি দল যায় বেসিক মাউন্টেরিয়ারিং কোর্স করতে দার্জিলিং এর এইচএমআই অর্থাৎ হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট। ২০০৬ সালে মেয়েদের একটি দল যায় এভারেস্ট বেইজ ক্যম্পে। এরপর কয়েকটা এক্সপেডিশন হয় বাংলাদেশ থেকে। তারপর প্রথম বাংলাদেশের পতাকা এভারেস্ট এর চূড়াতে নিয়ে যান মুসা ইব্রাহিম ২৩শে মে ২০১০। তিব্বতের দিক থেকে ২০১১ সালে এভারেস্ট সামিট করেন এম এ মুহিত এবং ২০১২ সালে প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট সামিট করেন নিশাত মজুমদার এবং দ্বিতীয়বার নেপালের দিক থেকে সামিট করেন এম এ মুহিত। ২০১২ সালের ২৬শে মে ওয়াসফিয়া নাজরীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় নারী হিসেবে এভেরেস্ট সামিট করেন। ২০১৫সালে ওয়াসফিয়া সেভেন সামিট অর্থাৎ সাত মহাদেশের সাতটি চূড়ায় সামিটের রেকর্ড করেন। ২০মে ২০১৩ এভারেস্ট সামিট করেন সজল খালেদ। ফেরার পথে তিনি অসীম শূন্যতায় পাড়ি জমান। এরপর ১০ বছর কেটে যায় বাংলাদেশ থেকে কেউ সাহস করেনি এভেরেস্ট এক্সপেডিশনে যাবার। ২০২৪ সালের  ১৯শে মে ডাক্তার বাবর আলী ষষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে এভারেস্ট এর চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা তোলেন। এভারেস্ট থেকে নেমেই তিনি আবার ৮০০০ মিটারের লোৎসে পর্বতে আরোহন করেন। ২০২৫ এর ১৯শে মে সপ্তম বাংলাদেশী হিসেবে ইকরামুল হাসান শাকিল এভারেস্ট আরোহন করেন সঙ্গে একটি বিশ্ব রেকর্ডও করেন। 

বাংলাদেশে এখন পর্বতারোহণ জনপ্রিয় হচ্ছে। বেশ কিছু বছরে অনেক গুলো এক্সপেডিশন হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে পর্বতে যাচ্ছে। ২০১২ সালের মার্চে আমরা ৫জন বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং এ বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করতে গিয়েছিলাম। সেবার ৪জন শেষ করতে পেরেছিলাম। এরপর উত্তরকাশিতেও অনেকে গিয়েছেন কোর্স করার জন্য। ফিরে এসে এক্সপেডিশনে গিয়েছেন। পর্বতারোহন একটি দীর্ঘ সাধনার ব্যপার। জীবনযাপনের মধ্যে পর্বতারোহনের দর্শনকে লালন করতে হবে। এদেশের তরুণরা এডভেঞ্চারে এখন বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে, হয়ত ভবিষ্যতে পর্বতারোহনের ব্যপারেও তারা অনেক আগ্রহী হবে এবং সারা বিশ্বে এদেশের পতাকার সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখবে। 

লেখক: পর্বতারোহী 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এভারেস্ট দিবসঃ বাংলাদেশের প্রশ্ন -এভারেস্টে উঠলে কী হয়?