আর্থিক বিবরণী সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে নিরপেক্ষভাবে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পেতে সহায়ক হবে। আর্থিক বিবরণী খুবই স্পর্শকাতর ও জটিল বিষয়। এ সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে কোম্পানিগুলো নিয়ে ভালো রিপোর্ট করা সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) এবং পুঁজিবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) যৌথ উদ্যোগে ‘ফরেনসিক এনালাইসিস অব ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টস’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন।
রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ বিআইসিএম-এর মাল্টিপারপাস হলে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, ‘‘এসব বিষয়ে অর্থনৈতিক সাংবাদিক ও পুঁজিবাজারে নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের প্রতিনিয়ত হালনাগাদ থাকা প্রয়োজন। একইসঙ্গে দরকার সম্যক জ্ঞান।
কর্মশালায় ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টসে কী কী দুর্বলতা রয়েছে এবং সেসব বিষয় বোঝার উপায় সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিষদ ধারণা দেওয়া হয়।
বিআইসিএম-এর প্রভাষক ফাইমা আক্তারের সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিআইসিএম-এর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুছ সালেহীন, সিএমজেএফ-এর সভাপতি এস এম গোলাম সামদানী ভুইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিআইসিএম-এর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুছ সালেহীন বলেন, ‘‘এ ধরনের যৌথ কর্মশালা সিএমজেএফ'র সদস্যদের আরো বেশি সম্মৃদ্ধ করবে। যা তাদের পেশাগত জীবনে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। লেখার মান আরো উন্নত ও তথ্যসমৃদ্ধ করবে।’’
সিএমজেএফ সভাপতি এস এম গোলাম সামদানি ভুইয়া বলেন, ‘‘ফরেনসিক এনালাইসিস অব ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টস’ সম্পর্কে ধারণা থাকা সিএমজেএফসহ পুঁজিবাজার নিয়ে যারা সাংবাদিকতা করছেন তাদের জন্য জরুরি। সঠিক ধারণা না থাকলে সংবাদ লেখার ক্ষেত্রে ভুল হবার আশঙ্কা রয়েছে। এই কর্মশালা অবশ্যই পেশাগত কাজে সহায়ক হবে।’’
সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলী বলেন, সাংবাদিকদের মূল কাজ হচ্ছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা। সেটি নিশ্চিত করতেই ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের কাজ করে যাচ্ছে। সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য তুলে ধরবেন। এক্ষেত্রে জানার এবং প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। অর্থনৈতিক সাংবাদিকতার জন্য আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ জরুরি। আশাকরি আজকের কর্মশালা আমাদের পেশাগত কাজে বড় ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা/এনটি//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫