সৈয়দপুরে মরুর প্রাণী দুম্বার খামার, কোরবানি ঘিরে চাহিদা বাড়ার প্রত্যাশা
Published: 28th, May 2025 GMT
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় প্রথমবারের মতো গড়ে তোলা হয়েছে মরুভূমির প্রাণী দুম্বার খামার। উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কাথারিপাড়া গ্রামে গড়ে তোলা এ খামারে দুম্বা পালন করা হচ্ছে। আসন্ন পবিত্র কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে এসব প্রাণীর চাহিদা বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন খামারের মালিক। এরই মধ্যে বিক্রি হয়েছে একটি দুম্বা।
খামারটির মালিক কাথারিপাড়ার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। ২০২২ সালের পর তিনি গড়ে তোলেন ব্যতিক্রমী এই খামার। তাঁর খামারের অধিকাংশ দুম্বাই সাদা রঙের। বড় দুম্বাগুলোর ওজন দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ১০০ কেজিতে। খামারে মোট ২৭টি দুম্বা ছিল। ঈদ উপলক্ষে একটি বিক্রি হওয়ায় এখন আছে ২৬টি।
রবিউল জানান, খামার থেকে ইতিমধ্যে একটি দুম্বা বিক্রি হয়েছে। সৈয়দপুরের এক ব্যবসায়ী ৯০ হাজার টাকায় এটি কিনেছেন। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকা থেকে আরও পাঁচটি দুম্বা বিক্রির অর্ডার পেয়েছেন। বাকিগুলো কোরবানির হাটে তুলবেন। আশা করছেন ঈদের আগেই সব বিক্রি হয়ে যাবে।
আজ খামারে গিয়ে দেখা যায়, ঘাস খাচ্ছে দুম্বাগুলো। দুপুরের পরপর এগুলোকে পাশের মাঠে চরাতে নিয়ে যান খামারের মালিক।
দুম্বাগুলো দেখতে সেখানে ভিড় করেছেন আশপাশের উৎসুক মানুষ। তাঁদের একজন সৈয়দপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শায়লা খাতুন। তিনি বলেন, মরুর প্রাণী দুম্বা কীভাবে এ দেশের আবহাওয়ায় টিকে আছে, তা দেখার আগ্রহ ছিল। এবারের ঈদে তাঁর পরিবারের দুম্বা কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা আছে।
খামারের মালিক রবিউল ইসলাম জানান, তাঁর ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম সৌদি আরবে থাকেন। ২০২২ সালে তিনি দেশে ফেরার সময় দুটি দুম্বা এনেছিলেন।
মরু অঞ্চলের প্রাণীটিকে বাংলাদেশে লালন-পালন করতে গিয়ে প্রথম দিকে বেশ সমস্যায় পড়েন রবিউল। তিনি বলেন, প্রথম প্রথম দুম্বাগুলো বেশ চিৎকার-চেঁচামেচি করত। এ দেশের আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে সমস্যা হচ্ছিল। পরে মাসখানেকের মধ্যে এ দেশের আবহাওয়া সহ্য হয়। পরের বছর ছোট ভাই আরও ছয়টি দুম্বা নিয়ে দেশে আসেন। তখন খামারে দুম্বার সংখ্যা দাঁড়ায় আটে। দুম্বাগুলো সাধারণত কচি ঘাস খায়। এ ছাড়া ভুট্টা, ভুসি ও চোকর খায়। তবে তুলনামূলকভাবে কম পানি পান করে প্রাণীগুলো।
খামারে দর্শনার্থীদের পাশাপাশি কয়েকজন ক্রেতাও আসেন। তাঁরা প্রতিটি দুম্বার দাম হাঁকেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা।
রবিউলের দেখাদেখি দুম্বার খামার গড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রতিবেশী ও কলেজশিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন রবিউল ভাইয়ের দুম্বার খামার দেখতে আসি, নিজেও খামার গড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। রবিউল ভাই এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন।’
এটিকে নীলফামারীর একমাত্র দুম্বার খামার উল্লেখ করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সৈয়দপুরে দুম্বার খামারটি পরিদর্শন করেছি। এটি ভালো উদ্যোগ। তুর্কি জাতের এসব দুম্বা এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। এ বিষয়ে খামারিকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স য়দপ র ল ইসল ম ক রব ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক