অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সম্প্রতি হাতে এসেছে। পড়তে গিয়ে মুখ্য সুপারিশমালার ১১ নম্বরে চোখ আটকে যায়। এখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে হাসপাতালের অধীনে নির্দিষ্ট ইউনিটে কিছু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘মেডিকেল পুলিশ’ নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এই ইউনিট জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত; হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অনাকাঙ্ক্ষিত হামলা, হুমকি ও সহিংসতা প্রতিরোধ করবে।
গভীরভাবে খতিয়ে দেখলে মেডিকেল পুলিশের সুপারিশ দুটি বার্তা দেয়। এক.
মেডিকেল পুলিশ ধারণাটি অবশ্য নতুন নয়। উনিশ শতকের শুরুতে জার্মানি ও ফ্রান্সে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে একটি ইউনিট চালু ছিল। যারা মহামারি নিয়ন্ত্রণ, স্যানিটেশন ও টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করত। আধুনিক বিশ্বে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, কোয়ারেন্টাইন অফিসার বা খাদ্য নিরাপত্তা বাহিনী অনেকটা একই কাজ করে। এমনকি কভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সেনাবাহিনী পর্যন্ত মাঠে নামে।
স্পষ্টতই মেডিকেল পুলিশের ঐতিহাসিক ধারণা ও কমিশনের প্রস্তাবে ফারাক বিস্তর। যতটুকু বুঝতে পারি, কমিশনের প্রস্তাব হলো, হাইওয়ে পুলিশ, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ কিংবা ট্রাফিক পুলিশের মতো বিশেষায়িত বাহিনী তৈরি করা। অথচ স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধারণাটি হওয়া উচিত জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে। আমরা প্রায়ই জনস্বাস্থ্যকে হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলি। কিন্তু জনস্বাস্থ্য শুরু হয় তার অনেক আগেই– নিরাপদ খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পরিষ্কার পরিবেশ, ইনজেকশন ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, জীবাণু নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এমনকি ছাদে জমে থাকা পানিতে জন্ম নেওয়া মশার নিয়ন্ত্রণও এর অংশ।
বাংলাদেশের বাস্তবতা দাবি করে এমন একটি প্রশাসনিক কাঠামো যেখানে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য পরিদর্শক ও আইন প্রয়োগকারী দল হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, খাদ্য প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, ল্যাব ও পরিবেশজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত তদারক ও হস্তক্ষেপ করতে পারে। আজকের দিনে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও পাবলিক হেলথ এনফোর্সমেন্ট ইউনিট এনভায়রনমেন্টাল হেলথ ইন্সপেকশন টিমের মতো। তবে বাংলাদেশে এমন ব্যবস্থার কিছু খণ্ডিত অংশ রয়েছে। ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকারের স্যানিটেশন পরিদর্শক, পরিবেশ অধিদপ্তর; সবাই কিছু ভূমিকা পালন করে। কিন্তু তারা সম্পদহীন, সমন্বয়বিহীন এবং সংখ্যায় অপ্রতুল।
এ দেশের পথেঘাটে সিকি-অর্ধশতাব্দী পুরোনো গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় ও বাড়ির পাশে খোলা ড্রেনের আকাশ ভারি করা গন্ধের মতোই মিশে থাকে অসংখ্য অদৃশ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি– জলে কলেরা, ফলে-মাছে-খাবারে ফরমালিন, বাতাসে ডেঙ্গু। অন্যদিকে ওষুধের দোকানে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, হাসপাতালের উঠান থেকে বেড পর্যন্ত নানান অমানবিকতা, লোভ ও অনিয়মের আস্ফালন, হোটেল-রেস্টুরেন্টে পচা-দূষিত খাবার, ফসলি মাঠের বুক চিরে জ্বলছে ইটভাটার চিমনি। সব কিছুতেই স্বাস্থ্যঝুঁকি। বাড়ির বাইরের ঝুঁকি; বাড়ির খাবারের টেবিলে ঝুঁকি, হাসপাতালে ঝুঁকি, ওষুধের দোকানে ঝুঁকি, মাছের বাজার থেকে শুরু করে সবজির বাজারে ঝুঁকি। প্রতিনিয়ত মনে হয়, দেখার কি কেউ নেই? খোঁজ নিয়ে দেখেছি; আইন ও নীতিমালা এবং সরকারি ঘোষণা আছে– তবু কেন সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না?
প্রতিটি আধুনিক সমাজের কেন্দ্রে রয়েছে এমন একটি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যা প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। একটি আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনস্বাস্থ্যের মূল ভিত্তি চিকিৎসা নয়; বরং রোগ প্রতিরোধ, নিয়মনীতি ও তার কঠোর প্রয়োগ। বাংলাদেশে আমরা স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছি। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অগ্রগতিও অনেক– নতুন হাসপাতাল, বেশি সংখ্যক চিকিৎসক, আধুনিক প্রযুক্তি। এমনকি জনস্বাস্থ্য-বিষয়ক উন্নত আইনও রয়েছে। এমন জনস্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করেছি, যা কাগজ-কলমে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অগ্রগামী। তবুও একটি মূল উপাদান আজও অনুপস্থিত– জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী বাস্তবায়ন কাঠামো ও কার্যকর আইন প্রয়োগ ব্যবস্থা।
দেশে জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত আইন ও সংস্থা। কিন্তু স্বাস্থ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে বর্তমান বাস্তবতা হলো, নিয়ম লঙ্ঘনের সংস্কৃতি, ওষুধ ও খাদ্যে অনিয়ম, পরিবেশ স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পর্যাপ্ত জনবল ও পরিদর্শকের অভাব। হাসপাতালে ইনফেকশন কন্ট্রোল নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে খুব কমই অনুসরণ করা হয়। ক্লিনারদের গ্লাভস নেই; বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ন্যূনতম সতর্কতা নেই। সারাদেশে এখনও ভুয়া ওষুধ তৈরি ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন বিক্রি হয়। খাদ্যপণ্যে ভেজাল এক অলিখিত নিয়ম। সিটি করপোরেশনগুলো নিয়মিত ফগিং বা মশক নিধন কর্মসূচি চালালেও তা যথাযথ না হওয়ায় ডেঙ্গু প্রতিনিয়ত মহামারির রূপ নেয়। স্বাস্থ্য পরিদর্শক বা পরিবেশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পর্যাপ্ত নেই। যারা আছেন, তাদের ক্ষমতা সীমিত; কাজের পরিধি অস্পষ্ট।
বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য অব্যবস্থাপনার কেন্দ্রে রয়েছে একটি মৌলিক অনুপস্থিতি– স্বাস্থ্য আইন প্রয়োগে কার্যকর কাঠামো নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘জনস্বাস্থ্য বাস্তবায়ন সংস্থা’র কাঠামো কেমন হতে পারে? এটি হবে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী। এর কাজের ক্ষেত্রে থাকবে স্বাধীনতা, জবাবদিহি ও জনসম্পৃক্ততা। এ বাহিনী জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য আইন, পরিবেশ বিজ্ঞান ও হেলথ রিস্ক কমিউনিকেশন সম্পর্কে প্রশিক্ষিত। বহুমাত্রিক ক্ষমতার অংশ হিসেবে তারা পরিদর্শন, জরিমানা, বন্ধ করে দেওয়া ও মামলা– এই চারটি কাজ করতে পারবে। এর দায়িত্ব হবে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসি ও খাদ্য প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। তারা সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে, কিন্তু স্থানীয় সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় থাকবে। জনগণের অভিযোগ গ্রহণের জন্য হটলাইন, অ্যাপ বা ওয়েব পোর্টাল থাকবে, যেখানে যে কোনো নাগরিক অভিযোগ জানাতে পারবেন।
এই ব্যবস্থায় ঝুঁকিও রয়েছে। তা হলো, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব। এ ক্ষেত্রে বৃহৎ সংস্কার প্রয়োজন। যে কোনো বাহিনীর মতোই এটি যদি জবাবদিহির বাইরে চলে যায়, তবে তা হয়রানির কারণ হতে পারে। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল যদি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকে, তাহলে সেখানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এটি বাস্তবায়নের জন্য আইন সংস্কার, বাজেট বরাদ্দ, জনবল নিয়োগ ও বড় ধরনের প্রশাসনিক প্রস্তুতি দরকার।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে অনেক অর্জন করেছে– টিকাদান, শিশুমৃত্যুহার হ্রাস, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ণ, জনসংখ্যার চাপ, ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণ– সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুগুণ।
শুধু চিকিৎসাসেবা দিয়ে এসব রোধ করা সম্ভব নয়। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগের সমন্বয়ই এখন জরুরি। কিন্তু প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি বড় শূন্যতা রয়ে গেছে– কার্যকর, দায়িত্বশীল ও দৃশ্যমান আইন প্রয়োগ কাঠামো। স্বাস্থ্য বাস্তবায়ন সংস্থা হতে পারে এই শূন্যতা পূরণের এক সম্ভাব্য পথ; যদি তা হয় সুশৃঙ্খল, মানবিক ও নাগরিক অধিকারবান্ধব। ‘জনস্বাস্থ্য বাস্তবায়ন সংস্থা’ সেই বৃহৎ কাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হতে পারে। যতদিন আইন প্রয়োগকারী একটি নিবেদিত ও জবাবদিহিমূলক বাহিনী না থাকবে, ততদিন জনস্বাস্থ্য রক্ষা হবে না।
মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম: জনস্বাস্থ্য ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ; শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনস ব স থ য স ব স থ য স রক ষ জনস ব স থ য র জনস ব স থ য ব য ব যবস থ ক র যকর পর ব শ র জন য য আইন সরক র ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি