আন্তর্জাতিক আইন তারা অগ্রাহ্য করতে পারে না
Published: 30th, May 2025 GMT
সীমান্ত দিয়ে ৯৭৫ জনকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ (ঠেলে দেওয়া) করেছে। বাংলাদেশ চার দফা কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানালেও ভারত সরকার সেটা আমলে নেয়নি। এটা দুই দেশের সীমান্ত প্রটোকল ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে পুশ ইন শুরু করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ৪ মে থেকে শুরু করে গত ২৪ দিনে দেশের ১৭টি জেলা দিয়ে ৯৭৫ জনকে পুশ ইন করেছে। এর বাইরে সুন্দরবন দিয়ে আরও ৭৮ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে।
ভারতের এই পদক্ষেপ ১৯৭৫ সালের যৌথ সীমান্ত নির্দেশিকা, ২০১১ সালের সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনার চুক্তিগুলোর সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। কূটনীতিকদের মতে, বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির নতুন কৌশল হিসেবে ‘পুশ ইন’ শুরু করা হয়েছে। পুশ ইন ইস্যুতে ৮, ১৩, ১৫ ও ২০ মে ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠিতে পুশ ইনের পদক্ষেপগুলো গভীর উদ্বেগের, যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করছে। পুশ ইন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে সীমান্ত পর্যায়ে সমন্বয় জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কূটনৈতিক চ্যানেল ছাড়াও পুশ ইন নিয়ে বিজিবিও প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিজিবি জানিয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পুশ ইন করায় বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মৌখিক ও লিখিতভাবে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো বাংলাদেশে পুশ ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে ইউএনএইচসিআরের কার্ডধারী কিছু রোহিঙ্গাও রয়েছে। আবার যারা ভারতীয় রোহিঙ্গা, তাদেরও পুশ ইন করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ১৭ মে বলেছেন, বাংলাদেশি কেউ যদি অবৈধভাবে ভারতে থেকে থাকেন, তবে ভারত যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠায়। আর বাংলাদেশে যদি অবৈধ ভারতীয় নাগরিক থেকে থাকেন, তাঁদেরও যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে।
এভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশের মানুষকে ঠেলে পাঠানো যায় না। যদি কেউ বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হন, তাঁকে ফেরত পাঠানোর কূটনৈতিক ব্যবস্থা আছে। আমরা আশা করব, ভারত সেটা অনুসরণ করবে। সীমান্তে এভাবে লোক ঠেলে দেওয়ার বিপদ অনেক। ভারতের সীমান্তে লোক ঠেলে দেওয়ার বিরুদ্ধে এখানে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠার পাশাপাশি সীমান্তে একধরনের উত্তেজনা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় ঠেলে দেওয়া মানুষকে ফেরত পাঠানোর ঘটনাও ঘটেছে।
দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সমস্যা থাকবে। কিন্তু সেটা সমাধান করতে হবে কূটনৈতিকভাবে। পুশ ইন বন্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক চিঠিই যথেষ্ট নয়। দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যার সমাধান না হলে সরকারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতারও প্রয়োজন হতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাববেন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন আশা করি। যেকোনো মূল্যে অবিলম্বে পুশ ইন বন্ধ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাকিমপুর সীমান্ত থেকে আটক ১৫ বাংলাদেশিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাতক্ষীরার তলুইগাছা সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি
অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তথ্য সহায়তার আহ্বান বিজিবির
ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিদের মধ্যে আটজন নারী, দুইজন পুরুষ ও পাঁচজন শিশু। তারা সাতক্ষীরা সদর, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বাসিন্দা। তাদের রাতে সাতক্ষীরা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার হাকিমপুর সীমান্ত পার হওয়ার সময় বাংলাদেশি নাগরিকরা বিএসএফের কাছে আটক হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালী গ্রামের মো. শাহীন সানা, তার স্ত্রী নিলুফা ও কন্যা শাহিনা সুলতানা, একই উপজেলার নওয়াবেকি গ্রামের মিস সুরাইয়া ইয়াসমিন, মোছা. রাবিয়া বেগম, বড়কুপট গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, লিপিকা খাতুন, নাজমা খাতুন, জিম তরফদার, বয়ারসিং গ্রামের মোছা. ফারহানা আক্তার ও তার ছেলে ফারহান ঢালী, উত্তর আটুলিয়া গ্রামের সেমিনা খাতুন, আশাশুনি উপজেলার হিজলিয়া গ্রামের রাবিয়া খাতুন ও রিয়াদ হাসান এবং সদর উপজেলার পায়রাডাঙ্গা গ্রামের ফুলমতি খাতুন।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামিনুল হক বলেন, “ভারতের হাকিমপুর সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকরা বিএসএফের হাতে আটক হন। পরবর্তীতে বিএসএফের আমুদিয়া কোম্পানি কমান্ডার বিকাশ কুমার সাতক্ষীরার তলুইগাছা কোম্পানি কমান্ডার আবুল কাশেমের নিকট পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এসব বাংলাদেশিদের হন্তান্তর করেন।”
তিনি আরো বলেন, “বিজিবি ফেরত আনা নারী-পুরুষ ও শিশুদের সাতক্ষীরা থানায় হন্তান্তর করেছে। পরিচয় যাচাই শেষে তাদের পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হবে।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ