১১৭ বছর ধরে সোনালী ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষিত ঢাকার নবাব পরিবারের ঐতিহাসিক হীরকখণ্ড ‘দরিয়া-ই-নূর’-এর প্যাকেট খুলে দেখতে যাচ্ছে সরকার। প্যাকেটে থাকা দরিয়া-ই-নূরসহ নবাব পরিবারের মোট ১০৯ ধরনের রত্নালংকার ব্যবস্থাপনায় ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়।

গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি করে এ–সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন শাখা। প্যাকেটে যেসব রত্নালংকার থাকার কথা, তা প্যাকেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।

কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যানকে। কমিটির বাকি ৯ সদস্য হলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন রত্নবিশেষজ্ঞ।

কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিটি ঢাকা নওয়াব এস্টেটের অস্থাবর সম্পত্তি ‘দরিয়া-ই-নূর’সহ ১০৯ ধরনের রত্নের তালিকা তৈরি করবে এবং সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত যত্নসহকারে রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশনা দেবে।

বিষয়টি নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও কমিটির সদস্য এ এস এম সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে ভল্টে থাকা প্যাকেট যাচাইয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করবেন। এরপর তাঁরা রত্নগুলো যাচাই করে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর প্রতিবেদন জমা দেবেন।

প্যাকেটে যেসব রত্নালংকার থাকার কথা

ভূমি সংস্কার বোর্ডের ‘কোর্ট অব ওয়ার্ডস: ঢাকা নবাব স্টেটের ইনডেনচারের’ বিবরণ অনুযায়ী ওই ১০৯ ধরনের রত্নের মূল্য ১০ লাখ ৯ হাজার ৮৩৫ রুপি। নথিপত্র বলছে, যেগুলোর মধ্যে হীরকখণ্ড দরিয়া-ই-নূরের মূল্যই ৫ লাখ রুপি। দামের দিক থেকে দরিয়া-ই-নূরের পরেই রয়েছে একটি হীরার তারা। এতে ৯৬টি মুক্তা রয়েছে। এটি একসময় ফ্রান্সের সম্রাজ্ঞীর মালিকানাধীন ছিল বলে নথিপত্রে উল্লেখ রয়েছে। এর মূল্য ৯৬ হাজার রুপি।

হীরার তারার পরেই রয়েছে পান্না পাথর খোদাই করা হীরার বাজুবন্ধ, যার মূল্য ধরা হয়েছিল ৫০ হাজার রুপি। এরপরেই রয়েছে রুবি পাথর এবং হীরার একটি অলংকার, যা নারীরা মাথায় পরেন। এটিকে ‘রোজ অব করসিকা’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মূল্য ছিল ৪৮ হাজার রুপি।

প্যাকেটে আরও থাকার কথা মুক্তা ও হীরার তৈরি একটি ফেজ টুপি, যার সঙ্গে ঝুলন্ত মুক্তা ও পান্না রয়েছে। এর মূল্য ছিল ৩৪ হাজার রুপি। রয়েছে ২৮ হাজার রুপির একটি সোনার বেল্ট, যাতে পান্না ও হীরা যুক্ত রয়েছে। পাগড়িতে যুক্ত করতে হয় এমন অলংকারও থাকার কথা ওই প্যাকেটে, যা হীরা ও পান্না দিয়ে তৈরি এবং মূল্য ২৫ হাজার রুপি।

নথিপত্র বলছে, প্যাকেটে থাকা বেশির ভাগ অলংকারই হীরা কিংবা পান্না দিয়ে তৈরি। প্যাকেটে একটি হীরাখচিত তরবারিও থাকার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। প্যাকেটে থাকা সবচেয়ে কম দামি বস্তুটি হলো একটি, বাদ্যযন্ত্র ম্যান্ডলিনের খুদে সংস্করণ, যার মূল্য ছিল মাত্র ৫ রুপি। এ ছাড়া আংটি, হার, হাতবন্ধনী, মূল্যবান পাথরসহ বিভিন্ন ধরনের অলংকার ওই প্যাকেটে থাকার কথা।

আরও পড়ুনঢাকার নবাবদের ‘দরিয়া-ই-নূর’ হীরা কি সোনালী ব্যাংকের ভল্টে আছে১২ মে ২০২৫যেভাবে ব্যাংকের ভল্টে রত্নগুলো

ভূমি সংস্কার বোর্ডের নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ১৯০৮ সালে ঢাকার তৎকালীন নবাব সলিমুল্লাহ আর্থিক সংকটে পড়লে পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের কাছ থেকে ১৪ লাখ রুপি ঋণ নেন। বার্ষিক শতকরা ৩ টাকা সুদে ৩০ বছরে এই ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। সম্পাদিত বন্ধকি চুক্তি অনুসারে অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে হীরকখণ্ড দরিয়া-ই-নূর এবং আরও রত্ন ঋণদাতার কাছে বন্ধক থাকে। সে সময় এই হীরার মূল্য ধরা হয় ৫ লাখ রুপি। নবাবের ঋণ নেওয়া সেই ১৪ লাখ রুপির সুদাসল এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

নিয়ম অনুযায়ী দরিয়া-ই-নূরসহ নবাব পরিবারের ব্যবহৃত ১০৯ ধরনের বন্ধকি রত্ন দেশভাগের আগে ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, মুক্তিযুদ্ধের আগে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সোনালী ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়। সেই থেকে মূলত অন্ধকার কুঠুরিতেই পড়ে আছে বাংলার হীরা দরিয়া-ই-নূর।

১৪ মে ‘ঢাকার নবাবদের ‘দরিয়া-ই-নূর’ হীরা কি সোনালী ব্যাংকের ভল্টে আছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন ত র অল ক র কম ট র সদস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার নবাবদের হীরা ‘দরিয়া–ই–নূর’-এর প্যাকেট যাচাই করবে সরকার, কী কী রত্নালংকার থাকার কথা

১১৭ বছর ধরে সোনালী ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষিত ঢাকার নবাব পরিবারের ঐতিহাসিক হীরকখণ্ড ‘দরিয়া-ই-নূর’-এর প্যাকেট খুলে দেখতে যাচ্ছে সরকার। প্যাকেটে থাকা দরিয়া-ই-নূরসহ নবাব পরিবারের মোট ১০৯ ধরনের রত্নালংকার ব্যবস্থাপনায় ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়।

গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি করে এ–সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন শাখা। প্যাকেটে যেসব রত্নালংকার থাকার কথা, তা প্যাকেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।

কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যানকে। কমিটির বাকি ৯ সদস্য হলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন রত্নবিশেষজ্ঞ।

কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিটি ঢাকা নওয়াব এস্টেটের অস্থাবর সম্পত্তি ‘দরিয়া-ই-নূর’সহ ১০৯ ধরনের রত্নের তালিকা তৈরি করবে এবং সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত যত্নসহকারে রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশনা দেবে।

বিষয়টি নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও কমিটির সদস্য এ এস এম সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে ভল্টে থাকা প্যাকেট যাচাইয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করবেন। এরপর তাঁরা রত্নগুলো যাচাই করে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর প্রতিবেদন জমা দেবেন।

প্যাকেটে যেসব রত্নালংকার থাকার কথা

ভূমি সংস্কার বোর্ডের ‘কোর্ট অব ওয়ার্ডস: ঢাকা নবাব স্টেটের ইনডেনচারের’ বিবরণ অনুযায়ী ওই ১০৯ ধরনের রত্নের মূল্য ১০ লাখ ৯ হাজার ৮৩৫ রুপি। নথিপত্র বলছে, যেগুলোর মধ্যে হীরকখণ্ড দরিয়া-ই-নূরের মূল্যই ৫ লাখ রুপি। দামের দিক থেকে দরিয়া-ই-নূরের পরেই রয়েছে একটি হীরার তারা। এতে ৯৬টি মুক্তা রয়েছে। এটি একসময় ফ্রান্সের সম্রাজ্ঞীর মালিকানাধীন ছিল বলে নথিপত্রে উল্লেখ রয়েছে। এর মূল্য ৯৬ হাজার রুপি।

হীরার তারার পরেই রয়েছে পান্না পাথর খোদাই করা হীরার বাজুবন্ধ, যার মূল্য ধরা হয়েছিল ৫০ হাজার রুপি। এরপরেই রয়েছে রুবি পাথর এবং হীরার একটি অলংকার, যা নারীরা মাথায় পরেন। এটিকে ‘রোজ অব করসিকা’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মূল্য ছিল ৪৮ হাজার রুপি।

প্যাকেটে আরও থাকার কথা মুক্তা ও হীরার তৈরি একটি ফেজ টুপি, যার সঙ্গে ঝুলন্ত মুক্তা ও পান্না রয়েছে। এর মূল্য ছিল ৩৪ হাজার রুপি। রয়েছে ২৮ হাজার রুপির একটি সোনার বেল্ট, যাতে পান্না ও হীরা যুক্ত রয়েছে। পাগড়িতে যুক্ত করতে হয় এমন অলংকারও থাকার কথা ওই প্যাকেটে, যা হীরা ও পান্না দিয়ে তৈরি এবং মূল্য ২৫ হাজার রুপি।

নথিপত্র বলছে, প্যাকেটে থাকা বেশির ভাগ অলংকারই হীরা কিংবা পান্না দিয়ে তৈরি। প্যাকেটে একটি হীরাখচিত তরবারিও থাকার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। প্যাকেটে থাকা সবচেয়ে কম দামি বস্তুটি হলো একটি, বাদ্যযন্ত্র ম্যান্ডলিনের খুদে সংস্করণ, যার মূল্য ছিল মাত্র ৫ রুপি। এ ছাড়া আংটি, হার, হাতবন্ধনী, মূল্যবান পাথরসহ বিভিন্ন ধরনের অলংকার ওই প্যাকেটে থাকার কথা।

আরও পড়ুনঢাকার নবাবদের ‘দরিয়া-ই-নূর’ হীরা কি সোনালী ব্যাংকের ভল্টে আছে১২ মে ২০২৫যেভাবে ব্যাংকের ভল্টে রত্নগুলো

ভূমি সংস্কার বোর্ডের নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ১৯০৮ সালে ঢাকার তৎকালীন নবাব সলিমুল্লাহ আর্থিক সংকটে পড়লে পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের কাছ থেকে ১৪ লাখ রুপি ঋণ নেন। বার্ষিক শতকরা ৩ টাকা সুদে ৩০ বছরে এই ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। সম্পাদিত বন্ধকি চুক্তি অনুসারে অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে হীরকখণ্ড দরিয়া-ই-নূর এবং আরও রত্ন ঋণদাতার কাছে বন্ধক থাকে। সে সময় এই হীরার মূল্য ধরা হয় ৫ লাখ রুপি। নবাবের ঋণ নেওয়া সেই ১৪ লাখ রুপির সুদাসল এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

নিয়ম অনুযায়ী দরিয়া-ই-নূরসহ নবাব পরিবারের ব্যবহৃত ১০৯ ধরনের বন্ধকি রত্ন দেশভাগের আগে ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, মুক্তিযুদ্ধের আগে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সোনালী ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়। সেই থেকে মূলত অন্ধকার কুঠুরিতেই পড়ে আছে বাংলার হীরা দরিয়া-ই-নূর।

১৪ মে ‘ঢাকার নবাবদের ‘দরিয়া-ই-নূর’ হীরা কি সোনালী ব্যাংকের ভল্টে আছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ