দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি উপেক্ষা করেই উপজেলার বিভিন্ন হাটে ভিড় করছেন ক্রেতারা। চাহিদার চেয়ে বেশি পশু থাকায় এবার গরুর দাম কম বলে হতাশ খামারিরা।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে উপজেলায় এ বছর পশুর চাহিদা রয়েছে ১২ হাজার ৬১৩টি। কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৯৮টি পশু। এর মধ্যে বেশির ভাগই দেশি জাতের গরু-ছাগল।
স্থানীয় খামারিদের ভাষ্য, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশি জাতের গরু পালন করেছেন। পশু খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ভালো দাম না পেলে তাদের লোকসানে পড়তে হবে। ঈদের আগে দেশের বাজারে যাতে ভারতীয় গরু প্রবেশে না করে, এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি করেছেন তারা।
উপজেলায় আটটি পশুর হাট রয়েছে। এর মধ্যে বারাই হাট, আমডুঙ্গি হাট, মাদিলা হাট, আটপুকুর হাট ও পৌরসভা পরিচালিত পশুর হাটে ক্রেতার বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে পছন্দের পশু কিনছেন তারা। কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গরুর দাম নিয়ে তারা খুশি নন। প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌর শহরের স্বজন পুকুর গ্রামে আমিন এগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা গেছে, গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারের লোকজন। খামারের মালিক রুহুল আমিন জানান, এবার দেশিসহ ক্রশ ব্রাহামা, শাহিওয়াল, নেপালি, হরিয়ানাসহ বিভিন্ন উন্নতজাতের ১১০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তত করেছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসছেন। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়েছে।
ফুলবাড়ী ২৯ বিজিবির অধিনায়ক লে.
ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার হাসান জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ও প্রাকৃতিক উপায়ে পশু পালন এবং বাজারজাতকরণে খামারিদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর উপজেলায় চাহিদার চেয়েও ৩ হাজার ১৮৫টি পশু বেশি রয়েছে, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক রব ন র হ ট গর ক রব ন র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।