বগুড়ায় ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ৪ পুলিশ ও আনসার সদস্য কারাগারে
Published: 31st, May 2025 GMT
বগুড়ায় ৮৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ তিন পুলিশ ও এক আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুক্রবার বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- বগুড়া পুলিশ লাইনসে কর্মরত নায়েক আব্দুল আলীম (৩৩), জয়পুরহাট সদর ট্রাফিকে কর্মরত কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন (৩৭), রাজশাহী রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) আব্দুল ওয়াহাব (৪০) এবং শফিপুর আনসার একাডেমির ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য আবু সুফিয়ান (৪২)।
গ্রেপ্তার আবু সুফিয়ান গোয়েন্দা পুলিশকে জানান, কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন ও আব্দুল ওয়াহাব ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করে বিকাশে টাকা নেন। পরে কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেনের বিকাশ নম্বর চেক করে ২৭ হাজার টাকার লেনদেন দেখা যায়।
তারা আরও জানান, বগুড়ায় কর্মরত পুলিশের নায়েক আব্দুল আলীম তাদের কাছ থেকে কিছুক্ষণ আগে ১৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট কিনে নিয়ে গেছেন। পরে তাকে শহরের নবাববাড়ী সড়কের পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে আটক করা হয়। তার হাতে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ১৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়।
আটক চারজনের মধ্যে নায়েক আব্দুল আলীমকে তাৎক্ষণিক বগুড়া পুলিশ লাইনস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং অপর তিনজনকে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরে মাটিডালি এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে গোয়েন্দা পুলিশ নায়েক আব্দুল আলীমকে আটক করে। পরে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে চারজনের নামে সদর থানায় একটি মামলা করেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন, আব্দুল ওয়াহাব ও আনসার সদস্য আবু সুফিয়ানের বাড়ি বগুড়া জেলার সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলায়। নায়েক আব্দুল আলীমের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায়।
আনসার সদস্য আবু সুফিয়ান বিগত সরকারের আমলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বাসভবনে ডিউটি করতেন, কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন বঙ্গভবনে ডিউটি করতেন। অপর দুজন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
তারা একে অপরের সঙ্গে পূর্বপরিচিত এবং ঢাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর চারজন চার জেলায় বদলি হলেও তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল এবং তারা মাদক কারবার করতেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, তাদের অপরাধের দায় বাহিনী নেবে না। তাদের গ্রেপ্তার করে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আনস র আনস র সদস য ট য বল ট
এছাড়াও পড়ুন:
লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।
তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।
শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।
তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।
তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।
ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।
রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”
“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”
“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”
টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”
“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।”
সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।
ঢাকা/আমিনুল