আমি একজন স্কুলশিক্ষক। দীর্ঘদিন এ পেশায় যুক্ত আছি। শীত হোক বা গরম, আমাকে সব ধরনের আবহাওয়া সহ্য করে স্কুলে যেতে হয় সময়মতো। এটা অনেকের জন্য হয়তো স্বাভাবিক, তবে পরিবেশ পরিস্থিতি সবার সমান হয় না। শুধু একজন নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে চলার পথে মাঝেমধ্যে এমন কিছু পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, যাতে বিড়ম্বনা বাড়ে বৈ কমে না।

বৃহস্পতিবারের (২৯ মে ২০২৫) কথাই ধরা যাক, সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলো। আমি যেহেতু স্কুলে চাকরি করি, তাই সকাল ৯টার আগেই আমাকে স্কুলে থাকতে হয়। সকালে রেডি হয়ে বের হতে গিয়ে দেখলাম, এই বৃষ্টিতে ছাতা ছাড়া যাওয়া সম্ভব নয়। ছাতা নিয়ে নাহয় বের হলাম। রাস্তায় গিয়ে অবস্থা দেখে তো চোখ কপালে ওঠার দশা। একে বৃষ্টি, তার ওপর রাস্তায় কাদা, যেতে হবে অটোরিকশায় করে—কী বেসামাল অবস্থা! অটোরিকশা খুঁজে পেতেই জীবন শেষ হয়ে যাবে মনে হচ্ছিল। এর মধ্যে ভাড়া চায় দুই থেকে তিন গুণ। যাহোক, ধৈর্যের অসীম পরীক্ষা দিয়ে অটোরিকশা পেলাম। বৃষ্টি তখনো চলমান। আমার গন্তব্য সাটিরপাড়া কালীকুমার ইনস্টিটিউশন।

স্কুলটি আমাদের নরসিংদী সদর উপজেলার বেশ পুরোনো প্রতিষ্ঠান। আমি সম্প্রতি এই স্কুলে বাংলা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছি। স্কুলের দূরত্ব আমাদের বাড়ি থেকে বেশি নয়। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে এটাকেই মনে হচ্ছে শত মাইল। কারণ, সকালে সবাই অফিসে যায়, গাড়ির চাপ থাকে, মানুষের চলাচলও থাকে অনেক। কখনো সামান্য কারণেই ঝগড়া লেগে যায় অটোরিকশা আর নছিমনের চালকদের মধ্যে, মাঝখান থেকে আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি। গতকালও (বৃহস্পতিবার) যখন অটোরিকশায় করে বৃষ্টির মধ্যে যাচ্ছিলাম, তখন আমাদের নরসিংদী পৌরসভার মোড়ে এসে দেখি, বিশাল যানজট। বড় দু-তিনটা মালবাহী ট্রাক এসে আটকে গেছে। অথচ আমরা জানি, এসব মালবাহী ট্রাক আসে গভীর রাতে, তখন রাস্তায় যানজট থাকে না।

বৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমে যাওয়ায় অনেকে ভিজে যাতায়াত করেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

জীবিত ভাইকে 'জুলাই আন্দোলনে শহীদ' দেখিয়ে মামলা

জীবিত সোলাইমান হোসেন সেলিমকে (৫০) ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ’ দেখিয়ে মামলা করেছেন তারই বড় ভাই গোলাম মোস্তফা ওরফে মস্তু (৫২)। গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় সেই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। 

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সেলিম ফুলবাড়িয়া উপজেলার ধামর গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তার ধামর বেলতলি বাজারে একটি মুদিদোকান রয়েছে। ‘গত বছরের ৩ আগস্ট রাজধানীর কাজলা পেট্রোল পাম্পের সামনে সেলিম গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন’—এমন অভিযোগ এনে মস্তু ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলার সাক্ষী হিসেবে তাদের দুই সহোদর হেলাল উদ্দিন (৫৫) এবং আবুল হোসেনকে (৫৪) দেখানো হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানায়, প্রায় ২০ বছর আগে তাদের বাবা আব্দুল হাকিমের মৃত্যুর পর থেকেই ভাইদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। সেলিমের শুধু দুই কন্যাসন্তান থাকায় তার ভাগের সম্পত্তিতে নজর পড়ে বাকি তিন ভাইয়ের। এদিকে দুটি হত্যাসহ চারটি মামলায় জড়িয়ে আর্থিকভাবে নিঃস্ব মস্তু পূর্বপরিকল্পিতভাবে সেলিমকে নিয়ে মিথ্যা মামলা করেন।  

এ বিষয়ে সেলিম বলেন, ‘মস্তু এলাকায় একজন চিহ্নিত ডাকাত এবং তিনি বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গত ১৫ বছর ধরে মস্তু বাড়িতে আসে না। বাড়িতে না এলেও বাকি দুই ভাইকে দিয়ে আমার সম্পত্তি গ্রাস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মস্তু। আমার কোনো ছেলেসন্তান না থাকায় তারা আমাকে সব সম্পত্তি তাদের নামে লিখে দিতে চাপ দিচ্ছে। তাদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে আমি ধামর বেলতলি বাজারে আড়াই শতক জমি কিনে বাড়ি ও দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করছি। বাবার ভিটায় গেলেই ঝগড়া হয়, তাই যাওয়া হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাকে মামলায় মৃত দেখিয়েছে, সুযোগ পেলেই হয়তো মেরেই ফেলত। বিষয়টি বুঝতে পেরে এখন আমি সতর্ক। কিন্তু পুলিশ কীভাবে একটি মিথ্যা মামলা নিল বুঝতে পারছি না। মামলার কারণে আমি হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমাকে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে আমি বেঁচে আছি। এই পর্যন্ত পাঁচবার যাত্রাবাড়ী থানা এবং ডিবি অফিসে গিয়েছি।’

সেলিমের স্ত্রী হাজেরা খাতুন জানান, ‘সেলিমকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তার তিন ভাই এই নাটক সাজিয়েছে। এর আগেও তারা সেলিমের ওপর হামলা চালিয়েছিল। তখন এলাকাবাসীর সহায়তায় আমার স্বামী প্রাণে বাঁচেন। এ ঘটনায় সেলিম ২০২২ সালে হেলাল উদ্দিন এবং আবুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেন।

সেলিমকে নিহত দেখিয়ে মামলা করার বিষয়ে তার ভাই হেলাল উদ্দিনের মেয়ে ঝুমি আক্তার বলেন, বেশ কয়েকটি মামলায় আসামি হওয়ায় প্রায় ১৫ বছর ধরে কাকা মস্তু বাড়িতে আসেন না। বর্তমানে তিনি রাজধানীতে বাস চালান। শুনেছি মামলা হয়েছে, কিন্তু বাবাকে কেন সাক্ষী করা হলো জানি না। আমরা এই ঘটনার জন্য দায়ী নই। মস্তু কাকা এসব করলে করতেও পারে।’

মামলার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্য সচিব আলী হোসেন সমকালকে বলেন, আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেলিমের পাশে আছে এবং প্রয়োজনে তার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। আমাদের একটাই লক্ষ্য—কোনো মানুষ যেন মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার না হয় এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। 

ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারণেই জীবিত সেলিমকে মৃত দেখিয়ে তার ভাই মামলা করেছেন। 

তিনি বলেন, মস্তু এলাকায় একজন ডাকাত বলে পরিচিত। তার নামে দুটি হত্যা, একটি চাঁদাবাজি এবং একটি মারামারির মামলা রয়েছে। শুনেছি তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে এলাকায় আসেন না। তবে সেলিমের জমিজমা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্যই হয়তো এই মামলাটি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে মামলার বাদী মস্তু নিরুদ্দেশ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, সেলিম মৃত নন, এটা নিশ্চিত করতে আদালতের মাধ্যমে দুই ভাইকে সামনা-সামনি করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন করা হয়েছে। আদালত অনুমতি দিলে সিআইডি ডিএনএ পরীক্ষা করবে। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। মামলাটির তদন্ত কাজ আমি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। মামলার বাদী মস্তুর বিরুদ্ধে অন্য মামলা থাকায় তিনি পলাতক। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমার জন্য ও একজন ‘হিউম্যান গুগল’
  • নগদ নিয়ে গণমাধ্যমে ‘বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন’ এবং প্রকৃত ঘটনা
  • ঝিনাইদহে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, একজন নিহত
  • ঝিনাইদহে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৪
  • অবাধ্য নারীদের জন্য কুখ্যাত গোপন ‘কারাগার’, কী হয় সেখানে
  • ‘পথের বিপদ’ এবার কম
  • ৪টি থেকে ৪০ গরু আরাফাতের
  • ট্রাম্প নিজেই ভর্তি হতে পারেননি বলে কি হার্ভার্ডের ওপর এত ক্ষোভ
  • জীবিত ভাইকে ‘জুলাই আন্দোলনে শহীদ’ দেখিয়ে মামলা
  • জীবিত ভাইকে 'জুলাই আন্দোলনে শহীদ' দেখিয়ে মামলা