এমন বৃষ্টিমাখা ভোগান্তির দিন জীবনে না আসুক
Published: 31st, May 2025 GMT
আমি একজন স্কুলশিক্ষক। দীর্ঘদিন এ পেশায় যুক্ত আছি। শীত হোক বা গরম, আমাকে সব ধরনের আবহাওয়া সহ্য করে স্কুলে যেতে হয় সময়মতো। এটা অনেকের জন্য হয়তো স্বাভাবিক, তবে পরিবেশ পরিস্থিতি সবার সমান হয় না। শুধু একজন নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে চলার পথে মাঝেমধ্যে এমন কিছু পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, যাতে বিড়ম্বনা বাড়ে বৈ কমে না।
বৃহস্পতিবারের (২৯ মে ২০২৫) কথাই ধরা যাক, সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলো। আমি যেহেতু স্কুলে চাকরি করি, তাই সকাল ৯টার আগেই আমাকে স্কুলে থাকতে হয়। সকালে রেডি হয়ে বের হতে গিয়ে দেখলাম, এই বৃষ্টিতে ছাতা ছাড়া যাওয়া সম্ভব নয়। ছাতা নিয়ে নাহয় বের হলাম। রাস্তায় গিয়ে অবস্থা দেখে তো চোখ কপালে ওঠার দশা। একে বৃষ্টি, তার ওপর রাস্তায় কাদা, যেতে হবে অটোরিকশায় করে—কী বেসামাল অবস্থা! অটোরিকশা খুঁজে পেতেই জীবন শেষ হয়ে যাবে মনে হচ্ছিল। এর মধ্যে ভাড়া চায় দুই থেকে তিন গুণ। যাহোক, ধৈর্যের অসীম পরীক্ষা দিয়ে অটোরিকশা পেলাম। বৃষ্টি তখনো চলমান। আমার গন্তব্য সাটিরপাড়া কালীকুমার ইনস্টিটিউশন।
স্কুলটি আমাদের নরসিংদী সদর উপজেলার বেশ পুরোনো প্রতিষ্ঠান। আমি সম্প্রতি এই স্কুলে বাংলা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছি। স্কুলের দূরত্ব আমাদের বাড়ি থেকে বেশি নয়। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে এটাকেই মনে হচ্ছে শত মাইল। কারণ, সকালে সবাই অফিসে যায়, গাড়ির চাপ থাকে, মানুষের চলাচলও থাকে অনেক। কখনো সামান্য কারণেই ঝগড়া লেগে যায় অটোরিকশা আর নছিমনের চালকদের মধ্যে, মাঝখান থেকে আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি। গতকালও (বৃহস্পতিবার) যখন অটোরিকশায় করে বৃষ্টির মধ্যে যাচ্ছিলাম, তখন আমাদের নরসিংদী পৌরসভার মোড়ে এসে দেখি, বিশাল যানজট। বড় দু-তিনটা মালবাহী ট্রাক এসে আটকে গেছে। অথচ আমরা জানি, এসব মালবাহী ট্রাক আসে গভীর রাতে, তখন রাস্তায় যানজট থাকে না।
বৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমে যাওয়ায় অনেকে ভিজে যাতায়াত করেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫