মে মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮ মৃত্যু, ৬ জনই নিহত বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে
Published: 31st, May 2025 GMT
মে মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় আটজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে এক কিশোরসহ ছয়জন প্রাণ হারান। পাশাপাশি কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে এক কিশোর আর দলটির সঙ্গে সংঘর্ষে জামায়াতে ইসলামীর একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৪টি ঘটনায় অন্তত ৩৫১ জন আহত হন।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মে মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। আজ শনিবার মানবাধিকার সংগঠনটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন দিয়ে থাকে সংগঠনটি।
এমএসএফ বলছে, চলতি মাসে রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের ওপর দুষ্কৃতকারীদের হামলার ২০টি ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চারজন বিএনপি এবং একজন আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দুজন কর্মী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে প্রাণ হারান।
নির্যাতনের শিকার ৩৬৮ নারী ও শিশু
মে মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩৬৮টি ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে এমএসএফ। সংগঠনটি বলছে, এই সংখ্যা গত মাসের তুলনায় ছয়টি বেশি। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৯টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ ১৬টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৫টি। ছয়জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এ মাসে ২১ জন কিশোরীসহ মোট ৪২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অপহরণের শিকার হয়েছেন পাঁচজন কিশোরী ও দুজন নারী। এ ছাড়া দুই শিশু ও দুই কিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। মে মাসে এক শিশু, পাঁচ কিশোরী ও ১০ জন নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৮৬ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ শিশু ও কিশোরী রয়েছে।
গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এমএসএফ বলছে, প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত, হতাশা ও অভিমান ইত্যাদি কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার তিনটি ঘটনা সমাজপতিরা আপস করেছেন, যা প্রচলিত আইনের প্রতি অবজ্ঞার শামিল।
গণপিটুনির ৩৪টি ঘটনা
এমএসএফ জানায়, মে মাসে অন্তত ৩৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাতজন নিহত ও ৩৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। গণপিটুনির শিকার ৩০ জনকে আহত অবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। ডাকাতির অভিযোগে দুজন, ছিনতাইকারী সন্দেহে একজন আর চুরির সন্দেহে চারজনকে হত্যা করা হয়।
মানবাধিকার সংগঠনটি আরও জানায়, মে মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমের একটি ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজারের টেকনাফে কোস্টগার্ডের সদস্যদের গুলিতে মোহাম্মদ তাহের নামে এক জেলের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় আটক করা হয় তিন জেলেকে। এ ছাড়া মে মাসে দুটি ঘটনায় পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে দুজন মারা যান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র শ ক র হয় র জন ত ক স গঠনট
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে