মে মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় আটজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে এক কিশোরসহ ছয়জন প্রাণ হারান। পাশাপাশি কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে এক কিশোর আর দলটির সঙ্গে সংঘর্ষে জামায়াতে ইসলামীর একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৪টি ঘটনায় অন্তত ৩৫১ জন আহত হন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মে মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। আজ শনিবার মানবাধিকার সংগঠনটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন দিয়ে থাকে সংগঠনটি।

এমএসএফ বলছে, চলতি মাসে রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের ওপর দুষ্কৃতকারীদের হামলার ২০টি ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চারজন বিএনপি এবং একজন আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দুজন কর্মী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে প্রাণ হারান।

নির্যাতনের শিকার ৩৬৮ নারী ও শিশু

মে মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩৬৮টি ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে এমএসএফ। সংগঠনটি বলছে, এই সংখ্যা গত মাসের তুলনায় ছয়টি বেশি। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৯টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ ১৬টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৫টি। ছয়জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

এ মাসে ২১ জন কিশোরীসহ মোট ৪২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অপহরণের শিকার হয়েছেন পাঁচজন কিশোরী ও দুজন নারী। এ ছাড়া দুই শিশু ও দুই কিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। মে মাসে এক শিশু, পাঁচ কিশোরী ও ১০ জন নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৮৬ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ শিশু ও কিশোরী রয়েছে।

গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এমএসএফ বলছে, প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত, হতাশা ও অভিমান ইত্যাদি কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার তিনটি ঘটনা সমাজপতিরা আপস করেছেন, যা প্রচলিত আইনের প্রতি অবজ্ঞার শামিল।

গণপিটুনির ৩৪টি ঘটনা

এমএসএফ জানায়, মে মাসে অন্তত ৩৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাতজন নিহত ও ৩৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। গণপিটুনির শিকার ৩০ জনকে আহত অবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। ডাকাতির অভিযোগে দুজন, ছিনতাইকারী সন্দেহে একজন আর চুরির সন্দেহে চারজনকে হত্যা করা হয়।

মানবাধিকার সংগঠনটি আরও জানায়, মে মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমের একটি ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজারের টেকনাফে কোস্টগার্ডের সদস্যদের গুলিতে মোহাম্মদ তাহের নামে এক জেলের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় আটক করা হয় তিন জেলেকে। এ ছাড়া মে মাসে দুটি ঘটনায় পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে দুজন মারা যান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র শ ক র হয় র জন ত ক স গঠনট

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক আনোয়ারাকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় এইচআরএফবির নিন্দা

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এস এম আনোয়ারা বেগমকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ৬৯ বছর বয়সী একজন নারীকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্তে তারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর রায়সাহেব বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলির ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা আহত হন। পরে তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি সূত্রাপুর থানায় অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার সঙ্গে আনোয়ারা বেগমের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতকে লিখিতভাবে জানান।

বিবৃতি অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এরপর পুলিশ চলমান মামলার আওতায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে হাজির করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এইচআরএফবি জানায়, আনোয়ারা বেগম রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন এবং ২০২১ সালে অবসরে যান। তিনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জামিনের বিষয়টি আদালতের বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে-যা এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল বলেও সংগঠনটি উল্লেখ করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছে এইচআরএফবি। পাশাপাশি সংগঠনটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাছবিচারহীনভাবে শত শত ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠালে মামলাগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হতে পারে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের পথ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

তাদের মতে, যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়া প্রয়োজন। এমনকি জুলাই হত্যাকাণ্ডের মতো স্পর্শকাতর মামলায় অনিয়মিত গ্রেপ্তারের ঘটনা বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, আনোয়ারা বেগমসহ সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর আসামি নির্ধারণ, গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণের ক্ষেত্রে অধিক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পুলিশ ও আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপকর্ম, চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংগঠন ছাড়লেন বরিশালের তিন নেতা
  • জবির ওয়েবসাইটে শিক্ষকদের প্রোফাইল হালনাগাদের দাবি
  • অধ্যাপক আনোয়ারাকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় এইচআরএফবির নিন্দা
  • মে মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮ মৃত্যু
  • কৃষি খাতে বিনিয়োগে সরকারি-বেসরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি
  • প্রজেক্ট এসথার: যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন দমাতে যেভাবে কাজ করছে সংগঠনটি
  • ভিন্নমত দেখলেই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে ছাত্রশিবির: গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ
  • ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করছে জামায়াত-শিবির: ছাত্র ইউনিয়ন
  • যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে শর্ত মানা হয়নি: হামাস