‘আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট, সবই পাওয়া যায়’
Published: 1st, June 2025 GMT
জীবনের প্রতিটি দিনই হলিডে হতে পারে—তা মার্কিন গায়ক বিল উইদারসের ‘লাভলি ডে’ গানটি শুনলেই বোঝা যায়। নাগরিক ঠাসবুনটের ভিড়ে, প্রিয় মুখের উপস্থিতি একটি দিনকে যে সুন্দর ও প্রাঞ্জল করে তুলতে পারে, গানটির কথা ও সুরে তা–ই বলা হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের হলিডে মার্কেটে গিয়ে কথা হয় রিশাদ জামানের সঙ্গে। অনেকটা বিলের গানের কথার মতো বলছিলেন তাজমহল রোডের এই বাসিন্দা। বললেন, ‘সল্লিমুল্লাহ রোডের এই মাঠে সপ্তাহের প্রতি রোববার হলিডে মার্কেট বসে। এটি আমাদের কাছে নাগরিক মেলার মতো। খোকার বাঁশি থেকে রুটির বেলনা, হলিডে মার্কেটে সবই পাওয়া যায়। নাগরিক ব্যস্ততার মধে৵ও এ দিনটির জন্য আমি অপেক্ষা করি। মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার সময় নিয়ম করে মেলায় ঢুঁ মারি। টুকটাক কেনাকাটার মধে৵ দেখা হয় একঝাঁক প্রিয়মুখের সঙ্গে। এদের কেউ হয়তো মাস দুয়েক আগেই আমার পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন। ছিলেন ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। দিনটা সুন্দর হয়ে যায় তখন।’
সকাল থেকে রাত
মায়ের হাত ধরে ছেলে, বন্ধুবান্ধব দল বেঁধে, কেউবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন হলিডে মার্কেটে। মাঠটি বালিতে আবৃত। পলিথিনের ওপর চাদর বিছিয়ে নানা পণ্যের ঝাঁপি খুলে বসেছেন দোকানিরা। মেলায় আগত ব্যক্তিরা কেউ ঘুরে দেখছেন, কেউ কিনছেন। অনেকে কেনাকাটার ফাঁকে খোশগল্পে মেতে উঠছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সলিমুল্লাহ রোডের পাশের তাজমহল রোড, বাবর রোড, ইকবাল রোড, হুমায়ূন রোডের বাসিন্দারা মেলায় নিয়মিত আসেন। বৃহত্তর মোহাম্মদপুরের আবাসিক এলাকা শেখেরটেক, বছিলা, মোহাম্মদী হাউজিং, বায়তুল আমান হাউজিংয়ের বাসিন্দারাও হলিডে মার্কেটে নিয়মিত আসেন।
২০২০ সাল থেকে সাপ্তাহিক এই বাজারে নিয়মিত দোকান নিয়ে বসেন তানজিব আহমেদ। থাকেন কামরাঙ্গীরচরে। নারীদের লং ও শর্ট গেঞ্জি বিক্রি করেন। তিনি জানান, সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত এখানে বেচাবিক্রি হয়। শতাধিক দোকানি হলিডে মার্কেটে এক দিনে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন।
শিশুদের খেলনা থেকে গৃহস্থালির টুকিটাকি-সবই পাওয়া যায় হলিডে মার্কেটে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।
আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।