বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর ফারুক আহমেদের প্রথম শিকার হয়েছিলেন জাতীয় দলের সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ক্রিকেটার নাসুম আহমেদকে ঢাল বানিয়ে চাকরিচ্যুত করেছিলেন কোচকে। বিসিবির পট পরিবর্তন হওয়ায় হাথুরুর প্রতি অবিচার করার ঘটনা উঠে এসেছে। গতকাল এই খবর শোনার পর দারুণ খুশি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ফোনে নিজের অভিব্যক্তিতে বলেন, ‘প্রকৃতির বিচার পেলেন ফারুক।’ জাতীয় দলের সাবেক প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে অস্ট্রেলিয়া থেকে গতকাল খোলামেলা কথা বলেন সেকান্দার আলীর সঙ্গে

সমকাল: বাংলাদেশের খবরের কাগজগুলো দেখেছেন, আপনাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছিলেন ফারুক আহমেদ?
হাথুরুসিংহে:
হ্যাঁ, অনলাইনে আমি কিছু খবর পড়েছি। ভালো লেগেছে। সত্য প্রকাশ পেয়েছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। ওটা ফিরে আসবে না। আমার একার না, বাংলাদেশের ক্রিকেটেরও বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এভাবে নিজেদের ক্ষতি করা উচিত হয়নি। তবে স্বস্তির খবর হলো মানুষ অন্তত জানতে পারল আমি অন্যায় করিনি। আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, খলনায়ক বানানো হয়েছে আমি ওই ধরনের মানুষ নই। দেখেন, যে আমার অন্যায়ভাবে ক্ষতি করেছে তার ক্ষতিটা করেছে প্রকৃতি। যেমন কর্ম তেমন ফল। 

সমকাল: বাংলাদেশের ক্রিকেটের খোঁজ রাখেন। আপনি যাওয়ার পর থেকে তো খারাপ সময় পার করছে।
হাথুরুসিংহে:
বাংলাদেশের ক্রিকেট আমার কাছে আবেগের জায়গা। পেশাদারিত্বের চেয়েও বেশি কিছু। দেশটির ক্রিকেট সম্প্রতি ভালো করতে না পারা হতাশার। ক্রিকেট বোর্ডের ভেতরে অনেক কিছু হলে মাঠে তার প্রভাব পড়ে। কোনো কিছুই আস্থার জায়গায় থাকে না। ম্যানেজমেন্ট ঠিক থাকলে আশা করি দ্রুত ভালো করবে। 

সমকাল: পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পর ভারতে রেজাল্ট হয়নি। ঢাকায় ফিরে জানলেন বরখাস্ত হচ্ছেন। সে সময় মনের অবস্থা কেমন ছিল? 
হাথুরুসিংহে:
তিনি (ফারুক আহমেদ) পাকিস্তান সিরিজের শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন আমাকে বরখাস্ত করবেন। লোক দিয়ে সে তথ্য আমার কান পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আমি বলেছিলাম, আমি আশা করি ব্যক্তিগত কোনো কিছু পেশাদারিত্বে প্রভাব ফেলবে না। আমার অনুমান ভুল ছিল। তিনি নিজের ব্যক্তিগত হতাশা থেকে আমাকে চাকরিচ্যুত করেন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে। ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। ভীষণ হতাশায় কয়েকটি দিন পার করেছি। আসলে ক্রিকেট বোর্ডের মূল মানুষটি যদি নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিশোধপরায়ণ হন তাহলে কোনো কিছু করার থাকে না। বিশ্বকাপ-পরবর্তী যে তদন্ত হয়েছিল সেই রিপোর্টে কোনো কিছু ছিল না বলে জেনেছি। ফারুক সেটিকে আমলে না নিয়ে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিসিবির কারও কথা তিনি শোনেননি। তিনি পেশাদার আচরণ করেননি। আসলে যে যা করেন তার ফল তাঁকে ভোগ করতে হয়। তাঁকেও (ফারুক) বিতর্কিত হয়ে যেতে হলো। 

সমকাল: ফারুক আহমেদের সঙ্গে আপনার বিবাদ ছিল কোথায়? 
হাথুরুসিংহে:
আমি জানি না। আমার জানা মতে কোনো বিবাদ ছিল না। প্রথম মেয়াদে আমি কোচ ছিলাম, তিনি প্রধান নির্বাচক। আমি কোচের চাকরিটা করতে চেষ্টা করেছি। ওই সময় নিজেকে প্রমাণের একটি ব্যাপার ছিল। সে কারণে আমি চেয়েছিলাম টিম সিলেকশনে থাকতে। বিসিবির সাবেক সভাপতিকে বিষয়টি বলার পর তিনি রাজি হন। এখানে আমার দোষ কোথায়? বোর্ড সুযোগ না দিলে আমি সিলেকশন কমিটিতে থাকতাম না। এই একটি কারণে কোনো কোচ কারও শত্রু হতে পারে না। তিনি সভাপতি হওয়ার পরই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর নিজের পছন্দের বাইরে কিছু হবে না। সভাপতি হিসেবে যেভাবে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তা অন্যায্য। 

সমকাল: অন্য কোনো কারণ নেই বলতে চাচ্ছেন?
হাথুরুসিংহে:
আমার কোনো ধারণা নেই। কারও সঙ্গেই আমার ব্যক্তিগত ঝামেলা ছিল না। কোচিং করাতে গিয়ে মনোমালিন্য হয়ে থাকতে পারে। সেগুলো মনে রাখার মতো না। আমার ফোকাস ছিল কোচিং এবং দলের উন্নতি। কারণ আমি জানি দল ভালো না করলে আমার কোনো মূল্য থাকবে না। তাই সবসময় দল নিয়ে চিন্তা করেছি। বাংলাদেশ দলের সুবিধা অসুবিধার কথা ভেবেছি। 

সমকাল: মিডিয়াতে দেখেছি, বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার আগে আপনি অনিরাপদ বোধ করছিলেন। কিন্তু কেন?
হাথুরুসিংহে:
বাংলাদেশ থেকে চলে আসার আগে আমাকে সতর্ক করা হয়েছিল– আমার ওপর আক্রমণ হতে পারে। শেষ দিকে আমাকে আড়ালে চলে যেতে হয়েছিল। সত্যিই ভয়ের মধ্যে কেটেছে কিছু সময়।

সমকাল: বাংলাদেশের প্রতি অনুযোগ বা অভিযোগ আছে? 
হাথুরুসিংহে:
বাংলাদেশ বা দেশটির মানুষের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। মানুষরা ভালো। একটি স্বাধীন কাজের পরিবেশ ছিল। আমাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করার জন্য দেশটির মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। একজন ছাড়া বোধহয় কারও চোখে খারাপ ছিলাম না। 

সমকাল: বাংলাদেশে কাজের সুযোগ পেলে আবার আসবেন?
হাথুরুসিংহে:
হাসি। এই মুহূর্তে কোনো কিছু নিয়ে ভাবছি না। অনাগত দিনে কী হতে পারে কেউ জানি না। ভালো দিক হলো মানুষ জানতে পারল আমার দোষ নেই। এটি দারুণ স্বস্তির। 

সমকাল: সত্যি সত্যি যদি প্রস্তাব পান?
হাথুরুসিংহে:
বোর্ডে আপনার সভাপতি হওয়ার সুযোগ থাকলে আমি আসব। হাসি.

..। আসলে আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য। এই যে জানতে পারলাম আমাকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে, আমাকে অনৈতিকভাবে বরখাস্ত করার বিষয়টি ইস্যু হয়েছে। আমি তাতেই খুশি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ র ক আহম দ ফ র ক আহম দ হয় ছ ল আম র ক সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াতের নিবন্ধন ফেরতে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিবাদ

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটি বলেছে, এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধী দলটির কর্মকাণ্ডের অপকর্মের ইতিহাসকে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হলো। সোমবার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। 

এতে বলা হয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এদেশের লুটেরা শাসক গোষ্ঠীগুলো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনায় দেশ পরিচালনা করেনি। ফলে ওই অন্ধকারের শক্তি দিনে দিনে সাম্রাজ্যবাদী ডলার পেট্রোডলার ও পলিটিক্যাল ইসলামে পরিপুষ্ট হয়ে আবার জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্রাজ্যবাদ তাদের পুরনো মিত্রদের পুনরুদ্ধারে আপাতত সফল হলেও এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ধর্ষিতা মাতারা এখনও বেঁচে আছেন। তাদের নতুন প্রজন্মের সন্তানেরাও বেঁচে আছেন, যারা পুনরায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ওই অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। সাম্রাজ্যবাদী সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করবে। আগামী রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক  ও গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ন্যায় ও সাম্যের মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ