সম্পর্ক খারাপ করতে না চাইলে টেক্সটিংয়ে এসব ভুল এড়িয়ে চলুন
Published: 2nd, June 2025 GMT
জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত হয়েছিল ‘শর্টকাটস টু ইনসিনসিয়ারিটি’ শিরোনামে জরিপ ও গবেষণা। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী ও গবেষণাটির প্রধান লেখক ডেভিড ফ্যাংয়ের এই গবেষণা বলছে, টেক্সটিংয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু অভ্যাস আছে, যা নিঃশব্দে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে দেয় অন্যদের। অর্থাৎ সম্পর্কে দূরত্বের সৃষ্টি করে। চিন্তার বিষয়, এসব ভুল আমরা প্রায় সবাই করি।
ভুলটা কীমেসেজ লেখার সময় বাক্য ও শব্দের শর্টকাট বা সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা। কয়েক সেকেন্ড সময় বাঁচানোর জন্য অনেকে আজকাল ইংরেজিতে ‘Okay’ না লিখে ‘k’, ‘Thanks’–এর পরিবর্তে ‘tnx’, ‘What’–কে ‘wut’, ‘I don’t know’–কে সংক্ষেপে ‘idk’ ইত্যাদি লেখেন। আপাতদৃষ্টিতে এসব তেমন সমস্যাজনক মনে না হলেও সম্পর্ক নষ্টে এসবের ভূমিকা আপনার ধারণারও বাইরে।
ডেভিড ফ্যাং বলেন, ‘এসব শর্টকাট ব্যবহার করলে অপর প্রান্তের মানুষটি ভাবেন, তাঁকে কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বা কথায় আন্তরিকতার অভাব আছে। যা সম্পর্কের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করতে পারে।’
এ ধরনের অভ্যাস অনেক সময় মানুষকে উত্তর দিতে নিরুৎসাহিতও করে। সহজ কথায়, মন থেকে খোঁজ নিতেই হয়তো আপনি ‘hbu’ (How about you) লিখেছেন, কিন্তু এটা সেই সম্পর্কে ফেলতে পারে নেতিবাচক প্রভাব।
যেভাবে হয়েছে গবেষণাফ্যাং ও তাঁর সহগবেষকেরা পাঁচ হাজার তিন শর বেশি অংশগ্রহণকারীর ওপর আটটি আলাদা পরীক্ষা চালান। ল্যাব এক্সপেরিমেন্ট, অনলাইন জরিপ, ডিসকর্ড, টিন্ডারের মতো অ্যাপ, এমনকি স্পিড ডেটিংয়েও লক্ষ রাখা হয়েছিল। বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে সবার টেক্সটিং আচরণ। লক্ষ্য ছিল, মেসেজে শর্টকাট ব্যবহারে মানুষের আন্তরিকতার কতটা পরিবর্তন ঘটে, সেটা দেখা। গবেষণায় দেখা যায়, যিনি যত বেশি শর্টকাট ব্যবহার করেছেন, তাঁর গড় কথোপকথনের সময় ছিল তত সংক্ষিপ্ত। মজার ব্যাপার হলো, ৯৫ শতাংশ মানুষ শর্টকাট বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু তাঁরা কথা বাড়াতে আগ্রহ পাননি।
আরও পড়ুনই–মেইল লেখার সময় যা মাথায় রাখবেন২০ এপ্রিল ২০২৫সম্পর্কে কেমন প্রভাব ফেলেঅনেকে ভাবেন, কাছের বন্ধুর সঙ্গে শর্টকাট বা নিজেদের তৈরি শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করার মাধ্যমে আদতে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বোঝায়। কিন্তু গবেষক ফ্যাং তেমনটা মনে করেন না। তাঁর মতে, ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একই প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ অপর দিকের ব্যক্তিটি মনে করেন যে সম্পর্কে আন্তরিকতা কমছে।’
জেন-জির কাছে মেসেজে শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ মামুলি বিষয় হওয়ার কথা। অথচ দেখা গেছে, সব প্রজন্মই এ বিষয়ে একই আচরণ করেছে! সবাই মনে করেছে, এ ধরনের শব্দের ব্যবহার মানেই চেষ্টায় কমতি বা আন্তরিকতার ঘাটতি। ফলে মেসেজের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রেও কমেছে আগ্রহ।
আরও পড়ুনআপনিও কি চ্যাট করতে করতে ‘হাওয়া’ হয়ে যান?০৮ অক্টোবর ২০২৪তাহলে সমাধান কীএই গবেষণা–পরবর্তী একটি পরীক্ষার ফল অনুযায়ী, শব্দ বা বাক্যের সংক্ষিপ্ত রূপ বা শর্টকাটের ব্যবহার কথাকে কম আন্তরিক করে তোলে। তবে গবেষণায় অংশ নেওয়া মাত্র ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষই এটা সঠিকভাবে অনুমান করতে পেরেছিলেন। বেশির ভাগই মনে করেছিলেন, মেসেজে এর কোনো ভূমিকা নেই।
তাহলে কি এখন থেকে লম্বা লম্বা বাক্যের রচনা লিখে মনের ভাব প্রকাশ করবেন? না, একটু সচেতন থাকলেই চলে।
মেসেজ লেখার সময় এসব বিষয় মাথায় রাখতে পারেন—
নতুন কারও সঙ্গে কথা বলার সময় প্রথম মেসেজে পুরো শব্দ বা বাক্য লিখুন।
গভীর আবেগ–অনুভূতি প্রকাশ করতে চাইলে মেসেজে শর্টকাট এড়িয়ে চলুন।
কথায় আন্তরিকতা বা আগ্রহ বোঝাতে ইমোজি, বিস্ময়চিহ্ন বা হাস্যরসপূর্ণ শব্দ রাখতে পারেন নির্দ্বিধায়।
অপর পক্ষের কোনো কথা বুঝতে না পারলে আবার জিজ্ঞেস করুন।
অন্যজনের কথাবার্তার ধরনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখুন।
মেসেজে বিরামচিহ্ন, বানান ও ব্যাকরণের দিকে খেয়াল রাখলে মন্দ হয় না।
অন্যের এমন অভ্যাস না থাকলে কী করবেনকারও অভ্যাস সংশোধন করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন তাঁর মেসেজের উত্তর দেওয়ার গতি, কথার ধরন, অন্যান্য উপায়ে যোগাযোগপদ্ধতি ইত্যাদিতে। হতে পারে তিনি এই সম্পর্কের ব্যাপারে যথেষ্ট যত্নশীল। সবশেষে আপনি নিজেকে দিয়েই উদাহরণ তৈরি করুন। অনেক সময় দেখা যায়, একটা সময় পর অন্যজন হয়তো আপনার ধরনটি অনুকরণ করবেন।
ফ্যাংয়ের মতে, ‘শর্টকাট জিনিসটাই খারাপ, এমন নয়। বরং কখন সেটা ব্যবহার করছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে টুল বলা যায়।’
তবে সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না এবং দ্রুত তথ্য পাঠানোই গুরুত্বপূর্ণ, এমন সময় শর্টকাট বেশ উপযোগী হতে পারে। যেমন ডেলিভারিম্যানকে শর্টকাটে মেসেজ দিতেই পারেন।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটি ছাড়া আরও যেসব এআই টুল আপনার জীবন সহজ করবে০১ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর আপন র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ফের প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির আলোচনা আবারও ব্যর্থ হয়েছে। সোমবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ইউক্রেন শর্তহীন যুদ্ধবিরতির বিষয়টি তুললে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তা আবারও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এর আগে ১৬ মে প্রথম দফা সরাসরি আলোচনা কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছিল। তবে ইউক্রেন ২০ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে আরও একটি আলোচনার প্রস্তাব করেছে।
এদিকে ওই বৈঠকে দুই পক্ষ মৃত সেনাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ ৬ হাজার করে সেনার মরদেহ বিনিময় করবে। এই চুক্তির আওতায় আহত ও বন্দি সেনাদেরও ফেরত আনা হবে।
বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। উভয় দেশের আলোচকরা নিশ্চিত করেছেন, তারা গুরুতর আহত সৈন্য ও ২৫ বছরের কম বয়সী সব বন্দি যোদ্ধা বিনিময়েও রাজি হয়েছেন।
আলোচনার পর ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই কিসলিতস্যা বলেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো পক্ষই একমত হতে পারেনি। রাশিয়া নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেই চলেছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে সীমিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করা হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতা মেডিনস্কি বলেছেন, ‘আমরা সম্মুখ সারির কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় দুই থেকে তিন দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করেছি। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেনাদের মরদেহ সংগ্রহের জন্য এটি দরকার।’
রাশিয়ার সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে ফেদোরভ বলেন, সোমবার উভয় পক্ষই শান্তি প্রস্তাব পেশ করলেও তারা পরস্পরের মতকে গ্রহণ করতে পারেনি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান আলোচনাকে ‘চমৎকার’ বলে অভিহিত করেছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট বলেছেন, জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে সরাসরি বৈঠক চান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অন্যদিকে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার পূর্ব ইউক্রেনের বিভিন্ন ফ্রন্ট লাইনে রাশিয়ার গোলাবর্ষণে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ক্রামাটোরস্ক শহরে একজন ও ইলিনিভকা শহরে প্রাণ গেছে দু’জনের। খারকিভ অঞ্চলে কুপিয়ানস্কের দক্ষিণে একটি গ্রামে হামলায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার আচরণে স্পষ্ট হয়েছে, তারা যুদ্ধ শেষ করতে চায় না।