ঋণের বোঝা সইতে না পেরে লালপুরে স্বামী-স্ত্রীর আত্মহত্যা
Published: 2nd, June 2025 GMT
নাটোরের লালপুরে তামাক চাষ করতে গিয়ে বহু টাকা ঋণগ্রস্ত হয়েছিলেন এক দম্পতি। ঋণের বোঝা সইতে না পেরে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ, নিহতের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজ সোমবার ভোরে লালপুরের আড়বাব ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই দম্পতি হলেন- রইজুল ইসলাম (৪০) ও ফাতেমা খাতুন (৩০)। রইজুল কচুয়া গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রইজুল ইসলাম এ বছর তামাক চাষ শুরু করেন। তামাক চাষ করতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত হয় তিনি। প্রতিদিনের মতো রোববার রাতেও রইজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফাতেমা ঘরে ঘুমাতে যান। সোমবার ভোরে রইজুল ইসলামকে তামাকের ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলতে দেখা যায়। পরে তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে কয়েকবার ডাকার পর ঘরের দরজা না খোলায় সন্দেহ হয় পরিবারের। জানালায় উঁকি দিয়ে ফাতেমা খাতুনকে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে এলাকাবাসী থানায় খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
স্থানীয় আড়বাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান সমকালকে বলেন, কৃষক রইজুল ইসলাম খুবই দরিদ্র মানুষ। তার একটি সন্তান আছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়নি। কোম্পানির প্ররোচনায় এবার তারা তামাক চাষ করেছিলেন। অনেক টাকা ঋণ নিয়ে অন্যের জমি উচ্চ টাকায় লিজ নিয়েছিলেন। শিলাবৃষ্টিতে তামাকের ক্ষতি হয়েছে। তামাক বিক্রি করে তেমন লাভবান হতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুনেছি তিনি প্রায় সাত লক্ষাধিক টাকা ঋণগ্রস্ত ছিলেন। ঋণের এই টাকার সুদসহ তিনি কোনোভাবেই পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এজন্যই ভোরে তিনি ও তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন।
লালপুর থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক মোমিনুজ্জামান নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে সমকালকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। তবে অতিরিক্ত ঋণের বোঝা সইতে না পেরে স্বামী-স্ত্রী দুজনে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।