পুলিশের নির্মম হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তথ্য আপার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এই হামলার আগে তাঁদের ‘টেররিস্ট ট্যাগ’ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে নিরস্ত্র নারীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

দুই দফা দাবিতে গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়। কাকরাইল মসজিদের মোড়ে পৌঁছালে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে।

দুই দফা দাবি হলো ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মরত সব জনবলকে সমান গ্রেডে পদ সৃজন করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা এবং কর্তন করা বেতন-ভাতা দ্রুত পরিশোধ করা। এই দুই দাবিতে তাঁরা গত ২৮ মে থেকে অনশন করছিলেন।

‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের অনশন আন্দোলন কমিটির সভাপতি সংগীতা সরকার বলেন, গত ২৮ মে থেকে তাঁরা অনশন আন্দোলন করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এরপর তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যমুনা অভিমুখে রওনা দিলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

‘টেররিস্ট’ আখ্যা দিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশেই তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে এমন অভিযোগ করে সংগীতা সরকার বলেন, ‘দেশের প্রশাসনিক আইনি ব্যবস্থা ও সরকার কতটা দুর্বল হলে এ রকম ঘটনা ঘটানো সম্ভব।’ সংগীতার অভিযোগ, মিছিল চলাকালে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের লাথি মারেন এবং মারধর করেন।

ঝালকাঠির সদর উপজেলার তথ্যসেবা কর্মকর্তা সুমাইয়া আক্তার বলেন, তাঁদের ওপর হয়ে যাওয়া এই হামলার ভিডিও, ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে তাঁদের ফোন করে সে কথা বলছেন। এটা তাঁদের জন্য লজ্জাকর। তাঁরা দাবি আদায় না হলে বাড়ি ফিরতে চান না। এই লজ্জার মুখ কাউকে দেখাতে চান না।

নারীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, অধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি, আইন, কৃষি ও ব্যবসায় সুবিধা দিতে ১৪ বছর আগে শুরু হয়েছিল ৬০৩ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি পরিচালনা করে।

তথ্য আপাদের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ প্রকল্পের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পাননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে গত মাসে জুলাইয়ের বেতন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো বকেয়া রয়েছে পাঁচ মাসের। ইতিমধ্যে তাঁদের জানানো হয়, প্রকল্পের অফিস গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পরে প্রকল্প চালু রাখার দাবিতে ১৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও ১৯ আগস্ট সচিবালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তাঁরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের।

তবে অর্থ ছাড় না হওয়ায় পাঁচ মাস ধরে প্রকল্পের বেতন-ভাতা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। মাসের পর মাস বেতন না পাওয়ায় এ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা গত বুধবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ওপর র স মন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা: কোনো পক্ষেরই মামলা নেয়নি পুলিশ

রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলার ঘটনায় দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলাও নেয়নি পুলিশ। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে যান জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন। তবে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে দাবি করেন তিনি। পরে অভিযোগপত্র দাখিল দেওয়া হয়। এতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ দলটির ১৮ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এ অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।   

এ বিষয়ে এনসিপি নেতা আলমগীর রহমান নয়ন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টির গুন্ডা বাহিনী আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে ও অতর্কিত হামলা চালায়। পরে ছড়ানো হয় তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে।’ তিনি জানান, এ ঘটনায় মামলা করদে গেলে ওসি ওপর মহলে কথা বলে ঘণ্টা দুয়েক গড়িমসি করেন। শেষে এসে বলেন, তারা অভিযোগটি নিয়েছেন। কিন্তু মামলা রেকর্ড হয়নি। 

একইভাবে জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলার ঘটনায় শুক্রবার রাতে মহানগর কোতোয়ালি থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহাম্মেদ ইমতি ও এনসিপি নেতা নাহিদ হাসান খন্দকারসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। তাতে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারটি দায়ের করেন জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সদস্য সদস্যসচিব আরিফ আলী। সেটিও মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। 

এ ব্যাপারে মহানগর কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা হামলা করেছেন মর্মে এনসিপির পক্ষে আলমগীর রহমান নয়ন একটি অভিযোগ দিয়েছেন শনিবার রাতে। আমরা অভিযোগটি পেয়েছি। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জাতীয় পার্টির পক্ষে আরিফ আলীর দেওয়া এজাহার সম্পর্কেও একই ধরনের কথা বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুরে আসেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সন্ধ্যায় তিনি নগরীর সেনপাড়াস্থ বাসভবন ‘স্কাইভিউ’ এ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। জি এম কাদেরের রংপুরে অবস্থানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীরা। রাত ৯টার দিকে ওই বাসভবনে আকস্মিকভাবে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা ওই বাসার সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রংপুরে জাপা-এনসিপির পাল্টাপাল্টি মামলা নিল পুলিশ
  • সেনাবাহিনীর কাছে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেন এনসিপি ও বিএনপি নেতারা
  • প্রিজন ভ্যানে করে ‘তথ্য আপা’দের ‘সরিয়ে নিল’ পুলিশ
  • জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা: কোনো পক্ষেরই মামলা নেয়নি পুলিশ
  • মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই এখন, সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা