পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে হামলা হয়েছে: সংবাদ সম্মেলনে ‘তথ্য আপা’
Published: 2nd, June 2025 GMT
পুলিশের নির্মম হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তথ্য আপার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এই হামলার আগে তাঁদের ‘টেররিস্ট ট্যাগ’ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে নিরস্ত্র নারীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দুই দফা দাবিতে গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়। কাকরাইল মসজিদের মোড়ে পৌঁছালে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
দুই দফা দাবি হলো ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মরত সব জনবলকে সমান গ্রেডে পদ সৃজন করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা এবং কর্তন করা বেতন-ভাতা দ্রুত পরিশোধ করা। এই দুই দাবিতে তাঁরা গত ২৮ মে থেকে অনশন করছিলেন।
‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের অনশন আন্দোলন কমিটির সভাপতি সংগীতা সরকার বলেন, গত ২৮ মে থেকে তাঁরা অনশন আন্দোলন করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এরপর তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যমুনা অভিমুখে রওনা দিলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
‘টেররিস্ট’ আখ্যা দিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশেই তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে এমন অভিযোগ করে সংগীতা সরকার বলেন, ‘দেশের প্রশাসনিক আইনি ব্যবস্থা ও সরকার কতটা দুর্বল হলে এ রকম ঘটনা ঘটানো সম্ভব।’ সংগীতার অভিযোগ, মিছিল চলাকালে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের লাথি মারেন এবং মারধর করেন।
ঝালকাঠির সদর উপজেলার তথ্যসেবা কর্মকর্তা সুমাইয়া আক্তার বলেন, তাঁদের ওপর হয়ে যাওয়া এই হামলার ভিডিও, ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে তাঁদের ফোন করে সে কথা বলছেন। এটা তাঁদের জন্য লজ্জাকর। তাঁরা দাবি আদায় না হলে বাড়ি ফিরতে চান না। এই লজ্জার মুখ কাউকে দেখাতে চান না।
নারীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, অধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি, আইন, কৃষি ও ব্যবসায় সুবিধা দিতে ১৪ বছর আগে শুরু হয়েছিল ৬০৩ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি পরিচালনা করে।
তথ্য আপাদের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ প্রকল্পের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পাননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে গত মাসে জুলাইয়ের বেতন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো বকেয়া রয়েছে পাঁচ মাসের। ইতিমধ্যে তাঁদের জানানো হয়, প্রকল্পের অফিস গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পরে প্রকল্প চালু রাখার দাবিতে ১৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও ১৯ আগস্ট সচিবালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তাঁরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের।
তবে অর্থ ছাড় না হওয়ায় পাঁচ মাস ধরে প্রকল্পের বেতন-ভাতা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। মাসের পর মাস বেতন না পাওয়ায় এ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা গত বুধবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ওপর র স মন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ
সম্পূরক বৃত্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।
এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়।
তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।
আজ বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।
অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।
অনশনকারীদের মধ্যে ফয়সাল মুরাদ ও এ কে এম রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অনশনকারী অপু মুন্সী বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। তাই গতকাল রাতে তিনি অবস্থান করতে পারেননি।
আজ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অনশনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
অনশনে অংশ নেওয়া শাহীন মিয়া বলেন, প্রশাসন আগের মতোই বাহানা করে যাচ্ছে। হচ্ছে, হবে এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো টালবাহানা তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে প্রশাসনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
আরেক অনশনকারী ফয়সাল মুরাদ বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইতিমধ্যে তিনিসহ আরও একজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অনশনকারী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’
আরও পড়ুনসম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী১৯ ঘণ্টা আগেযতক্ষণ তিন দফা দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যতক্ষণ শরীরে শেষ রক্তবিন্দু আছে ততক্ষণ তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে অনেকেই এসে সংহতি প্রকাশ করছেন। সকাল থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে গতকাল রাতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ডিসেম্বরের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূরক বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তবে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া ও প্রশাসন থেকে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।