ভারতের আসাম প্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শিলচরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি ১৮৯৩ সালের পর থেকে এক দিনে হওয়া সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

রোববারের এ বৃষ্টিতে শিলচরের ১৩২ বছরের পুরোনো ২৯০ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভেঙে গেছে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে, উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় ঘূর্ণি প্রবাহ ও নিম্নস্তরের ট্রফের একটি সংমিশ্রণ অস্থির আবহাওয়া ধরনটিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

অন্যদিকে ভারী বৃষ্টিতে নাকাল সিকিম। তীব্র বর্ষণের ফলে ভূমিধস, নদীর পানি বৃদ্ধি ও রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রাজ্যতে প্রায় ১৪ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। এনডিটিভি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আস ম

এছাড়াও পড়ুন:

চার দিনের সফরে ১০ জুন যুক্তরাজ্য যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

ঢাকা-লন্ডন সম্পর্ক আরও গভীর করতে চারদিনের সফরে আগামী ১০ জুন যুক্তরাজ্যে যাবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খবর বাসসের 

আজ বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক এ তথ্য জানান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর।’

পররাষ্ট্র সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ১০ থেকে ১৩ জুন যুক্তরাজ্য সফরে যাবেন। চার দিনের সরকারি সফর তিনি ঢাকা এবং লন্ডন বাণিজ্য, বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলবেন। তিনি বলেন, অন্তর্বতী সরকার শাসনব্যবস্থা এবং পারস্পরিক উদ্বেগের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোতে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে দেশ দুটির মধ্যে ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।

রুহুল আলম সিদ্দিক জানান, প্রধান উপদেষ্টা আগামী ৯ জুন লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ১৪ জুন তিনি দেশে ফিরে আসবেন।

সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

তিনি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি, অন্যান্য জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা এবং দেশটির নীতিনির্ধারণী ও ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে  সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী অবদানের একটি উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতিস্বরূপ, মানুষ এবং পরিবেশের মধ্যে শান্তি, স্থায়িত্ব এবং সম্প্রীতি জোরদারে অধ্যাপক ইউনূসকে রাজা তৃতীয় চার্লস ২০২৫ সালে ‘কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন। আগামী ১২ জুন লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে ড. ইউনূসকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন প্রিন্স অফ ওয়েলসের প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা দ্য কিংস ফাউন্ডেশন, টেকসই উন্নয়ন এবং মানবিক কাজে অনুকরণীয় কৃতিত্ব অর্জনকারী ব্যক্তিদের প্রতিবছর এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রদান করে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন ২০২৪ সালে এই পুরস্কার পান। এ বছর ৩৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে ফাউন্ডেশন ১১ জুন সন্ধ্যায় একটি বর্ণাঢ্য ডিনারের আয়োজন করবে, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্য সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে কী-না এমন এক প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এ ধরনের কোনো বৈঠক তাদের সরকারি সফরসূচিতে নেই। 

আসন্ন সফরকে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ হিসেবে বর্ণনা করে সিদ্দিক বলেন, এই সফর দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী এবং স্থায়ী সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন, যারা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সাংস্কৃতিক সংযোগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

সিদ্দিক বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং বৈচিত্র্যময়। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচিতে বাণিজ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন এবং সুশাসনে সহযোগিতা সম্প্রসারণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।

তিনি ইঙ্গিত দেন যে, যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে পাচারকৃত অর্থ এবং বিদেশে অবৈধ সম্পদ উদ্ধারের বিষয়টিও উত্থাপিত হতে পারে, যা আর্থিক স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ওপর একটি ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের প্রতিফলন ঘটাবে।

এই সফরে জিএসপি প্লাস স্কিমের আওতায় যুক্তরাজ্যের বাজারে বৃহত্তর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, ব্রিটিশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং সবুজ প্রবৃদ্ধিতে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগ্রহের ওপরও জোর দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে তিনি জানান।

সিদ্দিক বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ইউরোপীয় কোনো দেশে তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। এই সফরের কূটনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই সফর গণতান্ত্রিক সংস্কার, আইনের শাসন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অঙ্গীকার প্রদর্শনের সুযোগ। 

তিনি আরও বলেন, ‘নোবেল বিজয়ী এবং বিশ্বব্যাপী সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার আন্তর্জাতিক মর্যাদা অবশ্যই বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।’ 

এজেন্ডায় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিষয়, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, রোহিঙ্গাসংকট এবং অভিবাসন নিয়ে আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে ব্রিটিশ দক্ষতা এবং সম্পদ ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হবে।

সফরকালে, অধ্যাপক ইউনূস কমনওয়েলথ এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থার (আইএমও) মহাসচিবদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশের বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা তুলে ধরা হবে।

কার জনসাধারণের কূটনীতি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ১১ জুন রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, চ্যাথাম হাউসে একটি বিশেষ ভাষণ দেবেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ