শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে না দিলে চুক্তি করবে না ইরান। পাশাপাশি দেশটি পারমাণবিক চুক্তিতে রাজি হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চেয়েছে।

ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে চলমান আলোচনায় ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি প্রধান বিরোধের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে এ আলোচনা চলছে। আলোচনায় ইরান বলছে, তারা একটি শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি চালাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইরানের এ কর্মসূচিকে চূড়ান্তসীমা বা ‘রেড লাইন’ হিসেবে বিবেচনা করছে।

সোমবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির সঙ্গে বৈঠক করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম’ থেকে বঞ্চিত হলে পারমাণবিক চুক্তি করবে না তেহরান। আরাগচি বলেন, যদি লক্ষ্যই হয় ইরানকে নিজের শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত করা, তাহলে চুক্তি যে হবে না, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

আরাগচি জোর দিয়ে বলেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ‘গোপন করার কিছু নেই’। তিনি বলেন, ‘ইরানের একটি শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি রয়েছে.

..আমরা যেকোনো পক্ষ বা সংস্থাকে এ নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত।’

আরাগচির মন্তব্যের আগে সোমবার রাফায়েল গ্রোসি পরমাণু কর্মসূচির নিয়ে আরও স্বচ্ছ হতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানান। এমন এক সময়ে গ্রোসির এ আহ্বান এল, যখন সম্প্রতি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আইএইএর একটি গোপন প্রতিবেদন ফাঁস হয়েছে। এতে দেখা গেছে, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ জোরদার করেছে।

আইএইএর ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ মে পর্যন্ত ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত করেছে। পরমাণু অস্ত্র নেই—এমন যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ এ পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত নজিরবিহীন ঘটনা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ৯০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হলেই তা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য উপযুক্ত।

আরও পড়ুনইরানের উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়ামের মজুত ৪০৮ কেজি, যা নজিরবিহীন: আইএইএ৩১ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউর ন য় ম পরম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

পরমাণু আলোচনায় ‘স্পষ্টতা’ চায় ইরান

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া নতুন পরমাণু চুক্তি প্রস্তাবে ‘অনেক অস্পষ্টতা ও প্রশ্ন’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। মঙ্গলবার (৩ জুন) লেবানন সফরকালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে একটি অনুষ্ঠানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্প্রতি আমরা যে লিখিত প্রস্তাব পেয়েছি, তাতে অনেক অস্পষ্টতা ও প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রস্তাবের অনেক বিষয় স্পষ্ট নয়।”

ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরোক্ষ আলোচনায় ইরানের আলোচক দলের নেতৃত্বদানকারী আরাঘচি পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, তেহরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো আপস করবে না। তিনি বলেন, “ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এখন ইরানিদের জন্য জাতীয় গর্ব এবং সম্মানের বিষয় হয়ে উঠেছে।”

আরো পড়ুন:

ইরানের কাছে পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি অস্বীকার ইরানের

এর আগে সোমবার (২ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তির অধীনে ইরানকে কোনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অনুমতি দেওয়া হবে না।

এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার ইরানের শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, “ইরানের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়া আমাদের রেড লাইন।” ইরান তার ‘নীতিগত অবস্থান এবং ইরানের জনগণের স্বার্থের’ ভিত্তিতে আগামী দিনে এই প্রস্তাবের জবাব দেবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি আরো বলেন, “আমরা ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কারো অনুমতি চাইব না। তবে এই সমৃদ্ধকরণ যাতে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের দিকে না নিয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা সীমিত করার চেষ্টা করে আসছে। ওমানের মধ্যস্থতায় দুই শক্তির মধ্যে এপ্রিল মাস থেকে আলোচনা চলছে। ওমান এবং ইতালিতে এরই মধ্যে পাঁচটি বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রতিনিধিরা। দেশ দুটির মধ্যে ষষ্ঠ দফায় পরোক্ষ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, তবে এর স্থান এখনও স্পষ্ট নয়।

দুই পক্ষই আলোচনা নিয়ে আশাবাদী হলেও মূল বিতর্ক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়ার অধিকার নিয়ে।যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে ইরান জোর দিয়ে বলছে, তাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এর আগে বলেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার কোনো ফলাফল আশা করেন না।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তেহরান উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়িয়েছে। দেশটি ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ মাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের উৎপাদন বাড়িয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ৯০ শতাংশ স্তরের কাছাকাছি।

ইরান প্রতিবেদনটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিকে ‘শান্তিপূর্ণ ‍উদ্দেশ্যে’ বলে দাবি করেছে। 

ট্রাম্প কিছুদিন আগে হুমকি দিয়ে বলেছেন, আলোচনা যদি চুক্তি অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাবে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধে মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান খামেনির
  • ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার ঘোষণা খামেনির, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব খারিজ
  • পরমাণু আলোচনায় ‘স্পষ্টতা’ চায় ইরান