নারকেলগাছের ফাঁকে ফাঁকে সারিবদ্ধ কুঁড়েঘর। চারদিকে সবুজের ছড়াছড়ি। পাড়াগাঁয়ের একটা আবেশ। ঘরের বাইরে মাটির দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে। ভেতরে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ইন্টারনেটসহ আধুনিক সব অনুষঙ্গ রয়েছে। তবু প্রকৃতি যেন উদার জমিন বিছিয়ে বসেছে। আর তাকেই এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে সমুদ্রের নীল জলরাশি।

কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফের দিকে ২০ কিলোমিটার গেলে প্যাঁচার দ্বীপ সৈকত। সেখানেই দেখা মিলবে পরিবেশবান্ধব এমন পর্যটনকেন্দ্র মারমেইড বিচ রিসোর্টের। কক্সবাজারের প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন অর্থাৎ ইকোট্যুরিজমের পথ দেখিয়েছে মারমেইড। আর সে কারণেই প্রতিবছর প্রকৃতিপ্রেমী দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা এই রিসোর্টে ভিড় করেন। মারমেইডের দেখানো পথ ধরেই গত পাঁচ-ছয় বছরে কক্সবাজার সৈকত, মেরিন ড্রাইভ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ৫০টির বেশি ইকোট্যুরিজম রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে কক্সবাজারকে চেনাচ্ছে নতুনভাবে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, শহরের কলাতলী সৈকত এলাকায় গত তিন দশকে ৫৫০টির বেশি হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস, কটেজ তৈরি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। প্রতিবছর কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন ৩০ লাখের বেশি মানুষ। বিদেশিসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পর্যটকের পছন্দের জায়গা পরিবেশবান্ধব ইকোরিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ। বিদেশি পর্যটক টানতে গেলে ইট-পাথরের ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

মারমেইড দিয়েই শুরু

মারমেইডের পথচলা শুরু হয়েছিল কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে সুগন্ধা পয়েন্টে একটা রেস্তোরাঁ দিয়ে, ২০০৪ সালে। এরপর ২০০৯ সালে মেরিন ড্রাইভের রেজুখালের পাশে ১৫টি কটেজ নিয়ে চালু হলো ‘মারমেইড ইকোরিসোর্ট’। একে একে গড়ে উঠতে থাকে ‘মারমেইড আশ্রম বিচ ভিলাস’ ও ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট’।

মারমেইডের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার শহরের কলাতলী এখন পাঁচ শতাধিক হোটেলের কংক্রিটের জঙ্গল হয়ে গেছে। পর্যটকেরা প্রকৃতি দেখতে কক্সবাজারে ছুটে আসেন, কংক্রিটের জঙ্গল নয়। এই ধারণা মাথায় রেখেই মারমেইড তৈরির উদ্যোগ। প্রকৃতিকে রক্ষা করে কীভাবে পর্যটন করা যায়, তার দৃষ্টান্ত মারমেইড। মাইমেইডের দেখাদেখি সেন্ট মার্টিনেও বহু রিসোর্ট হয়েছে। মেরিন ড্রাইভেও একই আদলে অনেক রিসোর্ট হয়েছে। হয়তো কক্সবাজারের ইকোট্যুরিজমই ভবিষ্যতে প্রধান পর্যটনে পরিণত হবে।

বাড়ছে ইকোরিসোর্ট-রেস্তোরাঁ

শহরের কলাতলী সৈকতে সাত বছর আগে নির্মিত হয়েছে পরিবেশবান্ধব রেস্তোরাঁ ‘প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফে’। সম্প্রতি এই ক্যাফেতে গিয়ে দেখা গেল দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়। সিলেট থেকে আসা ব্যবসায়ী মোছাব্বের হোসেন বলেন, এমন নিরিবিলি পরিবেশের রেস্তোরাঁ শহরের কোথাও দেখা যায় না। টেবিলে বসে খেতে খেতে সমুদ্রের গর্জন, সূর্যডুবির মনোরম দৃশ্য দারুণ উপভোগ্য।

লাউঞ্জ ক্যাফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, পর্যটকদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য তুলে ধরতে তিনি সৈকতের তীর বেছে নিয়েছেন। তাতে দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের বেশ সাড়াও পাচ্ছেন।

গত কয়েক বছরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ৪০টির বেশি ইকোরিসোর্ট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের সিন্দাবাদ রিসোর্ট, গোধূলি, দীপান্বিতা, দ্বীপান্তর, জ্যোৎস্নালয়, কিংসুক, শায়েরি, স্যান্ডক্যাসল, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, সূর্যবান, বেলা ভিস্তা, সানসেট, সেরেনিটি, ড্রিমার্স রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য।

কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনের একটি ইকো রিসোর্ট। সম্প্রতি তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শহর র ক পর ব শ প রক ত

এছাড়াও পড়ুন:

সৈকতে নারী পর্যটকদের গোসলের ভিডিও ধারণ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কারাদণ্ড

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গোসলরত নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণ করার দায়ে রুবেল (৩০) নামে এক কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসিন সাদীক। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রুবেল বরগুনা সদর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি মুদি দোকানের ব্যবসার পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরি করেন।

সৈকতের ফটোগ্রাফার আরিফ মিয়া  বলেন, ‘‘রুবেল নারীদের গোসলের ভিডিও করছিলেন। প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। বিষয়টি দেখত পেয়ে তাকে আটক করি।’’

অপর ফটোগ্রাফার রাসেল বলেন, “রুবেলের মোবাইল চেক করে দেখি, অনেক ভিডিও। সঙ্গে সঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশকে খবর দেই। পরে তাদের কাছে সোপর্দ করি।’’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসিন সাদেক বলেন, “অনুমতি ছাড়া নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণের দায়ে রুবেলকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’’

ঢাকা/ইমরান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৈকতে নারী পর্যটকদের গোসলের ভিডিও ধারণ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কারাদণ্ড