যেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কক্সবাজারের ‘ইকোট্যুরিজম’
Published: 5th, June 2025 GMT
নারকেলগাছের ফাঁকে ফাঁকে সারিবদ্ধ কুঁড়েঘর। চারদিকে সবুজের ছড়াছড়ি। পাড়াগাঁয়ের একটা আবেশ। ঘরের বাইরে মাটির দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে। ভেতরে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ইন্টারনেটসহ আধুনিক সব অনুষঙ্গ রয়েছে। তবু প্রকৃতি যেন উদার জমিন বিছিয়ে বসেছে। আর তাকেই এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে সমুদ্রের নীল জলরাশি।
কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফের দিকে ২০ কিলোমিটার গেলে প্যাঁচার দ্বীপ সৈকত। সেখানেই দেখা মিলবে পরিবেশবান্ধব এমন পর্যটনকেন্দ্র মারমেইড বিচ রিসোর্টের। কক্সবাজারের প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন অর্থাৎ ইকোট্যুরিজমের পথ দেখিয়েছে মারমেইড। আর সে কারণেই প্রতিবছর প্রকৃতিপ্রেমী দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা এই রিসোর্টে ভিড় করেন। মারমেইডের দেখানো পথ ধরেই গত পাঁচ-ছয় বছরে কক্সবাজার সৈকত, মেরিন ড্রাইভ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ৫০টির বেশি ইকোট্যুরিজম রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে কক্সবাজারকে চেনাচ্ছে নতুনভাবে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, শহরের কলাতলী সৈকত এলাকায় গত তিন দশকে ৫৫০টির বেশি হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস, কটেজ তৈরি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। প্রতিবছর কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন ৩০ লাখের বেশি মানুষ। বিদেশিসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পর্যটকের পছন্দের জায়গা পরিবেশবান্ধব ইকোরিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ। বিদেশি পর্যটক টানতে গেলে ইট-পাথরের ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
মারমেইড দিয়েই শুরু
মারমেইডের পথচলা শুরু হয়েছিল কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে সুগন্ধা পয়েন্টে একটা রেস্তোরাঁ দিয়ে, ২০০৪ সালে। এরপর ২০০৯ সালে মেরিন ড্রাইভের রেজুখালের পাশে ১৫টি কটেজ নিয়ে চালু হলো ‘মারমেইড ইকোরিসোর্ট’। একে একে গড়ে উঠতে থাকে ‘মারমেইড আশ্রম বিচ ভিলাস’ ও ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট’।
মারমেইডের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার শহরের কলাতলী এখন পাঁচ শতাধিক হোটেলের কংক্রিটের জঙ্গল হয়ে গেছে। পর্যটকেরা প্রকৃতি দেখতে কক্সবাজারে ছুটে আসেন, কংক্রিটের জঙ্গল নয়। এই ধারণা মাথায় রেখেই মারমেইড তৈরির উদ্যোগ। প্রকৃতিকে রক্ষা করে কীভাবে পর্যটন করা যায়, তার দৃষ্টান্ত মারমেইড। মাইমেইডের দেখাদেখি সেন্ট মার্টিনেও বহু রিসোর্ট হয়েছে। মেরিন ড্রাইভেও একই আদলে অনেক রিসোর্ট হয়েছে। হয়তো কক্সবাজারের ইকোট্যুরিজমই ভবিষ্যতে প্রধান পর্যটনে পরিণত হবে।
বাড়ছে ইকোরিসোর্ট-রেস্তোরাঁ
শহরের কলাতলী সৈকতে সাত বছর আগে নির্মিত হয়েছে পরিবেশবান্ধব রেস্তোরাঁ ‘প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফে’। সম্প্রতি এই ক্যাফেতে গিয়ে দেখা গেল দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়। সিলেট থেকে আসা ব্যবসায়ী মোছাব্বের হোসেন বলেন, এমন নিরিবিলি পরিবেশের রেস্তোরাঁ শহরের কোথাও দেখা যায় না। টেবিলে বসে খেতে খেতে সমুদ্রের গর্জন, সূর্যডুবির মনোরম দৃশ্য দারুণ উপভোগ্য।
লাউঞ্জ ক্যাফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, পর্যটকদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য তুলে ধরতে তিনি সৈকতের তীর বেছে নিয়েছেন। তাতে দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের বেশ সাড়াও পাচ্ছেন।
গত কয়েক বছরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ৪০টির বেশি ইকোরিসোর্ট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের সিন্দাবাদ রিসোর্ট, গোধূলি, দীপান্বিতা, দ্বীপান্তর, জ্যোৎস্নালয়, কিংসুক, শায়েরি, স্যান্ডক্যাসল, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, সূর্যবান, বেলা ভিস্তা, সানসেট, সেরেনিটি, ড্রিমার্স রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য।
কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনের একটি ইকো রিসোর্ট। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শহর র ক পর ব শ প রক ত
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের ছুটি উপলক্ষে সাজেকের রিসোর্ট-কটেজে আগাম কক্ষ বুকিংয়ের হিড়িক
পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটনকেন্দ্রের রিসোর্ট-কটেজে বেড়েছে আগাম কক্ষ বুকিং। এরই মধ্যে সাজেকের রিসোর্ট-কটেজগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশের আগাম বুকিং হয়েছে।
পর্যটকদের কাছে সারা বছরই পছন্দের তালিকায় থাকে রাঙামাটির সাজেক পর্যটনকেন্দ্র। এবার ঈদের ছুটি তুলনামূলক দীর্ঘ হওয়ায় সাজেকে পর্যটক সমাগম অন্যবারের তুলনায় বেশি হবে বলে আশাবাদী পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সাজেকের রিসোর্ট-কটেজে আগাম কক্ষ বুকিং নেওয়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত রিসোর্ট-কটেজের প্রায় ৮০ শতাংশের বুকিং হয়েছে। বেশির ভাগ পর্যটক আগাম বুকিং দিয়েছেন ৮ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য। এর মধ্যে ৯ ও ১০ জুন দু-একটি ছাড়া সব রিসোর্ট-কটেজের বুকিং শেষ। এই দুই দিন আগাম কক্ষ বুকিং না দিয়ে সাজেকে এলে পর্যটকদের স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর, ক্লাবঘরে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির নেতারা। বর্তমানে সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে চালু রয়েছে ৯৮টির মতো রিসোর্ট-কটেজ।
সাজেক ভ্যালির হলিডে ও টারেং রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী রিন্টু চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুটি রিসোর্টের মধ্যে টারেং রিসোর্টের ১৩টি কক্ষের আগাম বুকিং হয়ে গেছে। এই ১৩ কক্ষে ৩৭ জন থাকতে পারেন। অন্যদিকে হলিডে রিসোর্টে এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ওই রিসোর্টের ২২টি কক্ষে ৫৫ জনের থাকার সুযোগ রয়েছে।’
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার লম্বা ছুটি, তাই পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে চাপ বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। সাজেকেও আগাম বুকিংয়ের হিড়িক পড়েছে। রিসোর্ট-কটেজের ৮০ শতাংশের বুকিং এরই মধ্যে হয়ে গেছে। তবে আগাম বুকিং চলমান। আশা করছি, এবার ঈদের পর সপ্তাহজুড়েই সাজেকে মানুষের ভিড় থাকবে।’
এদিকে সাজেকের মতো জেলা শহর রাঙামাটির হোটেল-মোটেলগুলোতেও আগাম বুকিংয়ের হিড়িক পড়েছে। এরই মধ্যে আবাসিক হোটেল-মোটেলের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সে ৮৭টি কক্ষ রয়েছে। ৮০ শতাংশ কক্ষ এরই মধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। ৯ থেকে ১৩ জুনের জন্য আগাম বুকিং চলছে। তিনি বলেন, গত ঈদুল ফিতরের পর পর্যটন কমপ্লেক্সে ‘সানরাইজ ইকো পার্ক’ নির্মাণ করা হয়েছে, যেখান থেকে কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্যসহ চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তাই এবার পর্যটন কমপ্লেক্সে পর্যটকদের আগ্রহ তুলনামূলক বেশি।