গাজায় ঈদের দিনেও ইসরায়েলের হামলা, নিহত ২০
Published: 6th, June 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি আজ শুক্রবার (৬ জুন) ইসলামের অন্যতম পবিত্র উৎসব ঈদুল আজহার প্রথম দিনেও ফিলিস্তিনিদের রেহাই দেয়নি ইসরায়েল।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং চিকিৎসা সূত্রের বরাত দিয়ে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, শুক্রবার ঈদুল আজহার প্রথমদিন সকালে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। এতে ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একাধিক অভিযান চালিয়েছে, অন্যদিকে ভারী কামান শহরের মধ্য, উত্তর এবং পূর্ব অংশে আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করেছে।
আরো পড়ুন:
গাজায় সাংবাদিকদের তাঁবুতে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, নিহত ৪
ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি জার্মানির
চিকিৎসা সূত্রের মতে, খান ইউনিসের অবরুদ্ধ আল-সারায়া এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক শিশু নিহত হয়েছে। শহরে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি হামলায় আহত আরো একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
খান ইউনিসের পশ্চিমে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তাঁবুর মাঝখানে স্থাপিত একটি মোবাইল ফোন চার্জিং স্টেশনে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় চার ফিলিস্তিনি নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
রাফায়, মার্কিন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আরো চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
খান ইউনিসের পূর্বে আবাসান আল-কাবিরা শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর, উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তূপের নিচে একজনের মরদেহ খুঁজে পেয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা উত্তর খান ইউনিসে একাধিক আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, উত্তর গাজার জাবালিয়ায় আবাসিক ভবনগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ঈদের আগের দিন রাতে গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় শিশু, নারী এবং সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৪১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজায় ঈদের সময় এমন নির্মম দৃশ্য অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর ইতিমধ্যে তিনটি ঈদ এভাবেই কেটেছে সেখানকার বাসিন্দাদের। আজ এ যুদ্ধের ৬০৮তম দিনে চতুর্থ ঈদের দিনটিও দুর্বিষহ হয়ে এসেছে তাদের জীবনে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৪ হাজার ৭০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল জন ফ ল স ত ন ইসর য় ল র খ ন ইউন স ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ