গল্পটা আধা শতাব্দী পুরোনো। সদ্যই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছি। মুখে রুচি নেই বলে না খেতে খেতে এমন অশক্ত হয়ে পড়ছি যে দাঁড়াতে গেলেও অবলম্বন লাগে। এ অবস্থায় শুধু আমিই না, আমার দেহ নিংড়ে রসদ নিয়ে যে বড় হওয়ার চেষ্টা করছে, তার জীবনও নিশ্চয়ই সংকটাপন্ন করে তুলছি! এসব ক্ষেত্রে মেয়েদের বাপের বাড়িই হয় সব অগতির গতি! তাই আমি আমাদের গুলশানের বাড়ি থেকে সোবহানবাগ সরকারি কলোনিতে আম্মা–আব্বার কাছে এসেছি। সবাই হাল ছাড়লেও আম্মা বর্ণে–গন্ধে, রসে–বিরসে নানা পদের একটার পর একটা খাবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিনা যুদ্ধে যিনি হারেন না, তিনিই তো মা!

দৃশ্যটি এ রকম—আমি আমার শোবার ঘরের জানালার ধারে বসে উদাস চোখে বাইরে চেয়ে আছি। আমার সামনে একটি বাসনে লোভনীয় সব বাংলা খাবার। জুঁই ফুলের মতো গরম ভাত, শুকনা মরিচ ও রসুনে ফোড়ন দেওয়া কচি লালশাক, শর্ষে-পটোলের খোসাভর্তার একটা ছোট্ট লাড্ডু আর এক টুকরা কাগজিলেবু। ডানে কাঠের টেবিলের ওপর ডাল ও তশতরিতে কড়কড়ে ভাজা ডিমভরা ইলিশের এক ফালি। পাঁচফোড়ন দেওয়া ঘন জলপাই ডাল আর ভাজা মাছ যেন সুগন্ধের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিন্তু আমি বিরস বদনে ডালের চামচটা হাতে তুলে ভাতের ঢিবি খোঁচাচ্ছি আর বাইরে তাকাচ্ছি। এমন সময় আবার আবির্ভূত হলেন আম্মা। ভুরু কুঁচকে একবার তাকালেন মাত্র। তারপরই দ্রুত বাথরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে টান মেরে প্লেটটা নিয়ে সব মাখতে লাগলেন। সেদিন তিনি কী দিয়ে কী মেখেছিলেন, কে জানে, তাঁর মাখা ভাতের গোলাগুলো চাকুমচুকুম গিলতে লাগলাম। কী আশ্চর্য, মাথার ওপরের ফ্যানের হাওয়া ফাগুন হয়ে গেল।

মায়ের হাতের মাখা ভাতের মতোই মায়ের হাতের রান্নায়ও আছে এক অত্যাশ্চর্য জাদু। সে মা অপটু, অগোছালো, ঝানু, আনাড়ি, সবল, দুর্বল যা–ই হোন না কেন, সন্তানের কাছে সে রান্নাই অমৃত। তা ছাড়া পুরো কলোনিতে আম্মার রান্নার ভালোই সুনাম ছিল।

আনোয়ারা তরফদারের রান্নার বই খাদ্যবিলাস–এর প্রচ্ছদ.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ