মায়ের হাতের মাখা ভাতের মতোই মায়ের হাতের রান্নাতেও জাদু আছে
Published: 7th, June 2025 GMT
গল্পটা আধা শতাব্দী পুরোনো। সদ্যই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছি। মুখে রুচি নেই বলে না খেতে খেতে এমন অশক্ত হয়ে পড়ছি যে দাঁড়াতে গেলেও অবলম্বন লাগে। এ অবস্থায় শুধু আমিই না, আমার দেহ নিংড়ে রসদ নিয়ে যে বড় হওয়ার চেষ্টা করছে, তার জীবনও নিশ্চয়ই সংকটাপন্ন করে তুলছি! এসব ক্ষেত্রে মেয়েদের বাপের বাড়িই হয় সব অগতির গতি! তাই আমি আমাদের গুলশানের বাড়ি থেকে সোবহানবাগ সরকারি কলোনিতে আম্মা–আব্বার কাছে এসেছি। সবাই হাল ছাড়লেও আম্মা বর্ণে–গন্ধে, রসে–বিরসে নানা পদের একটার পর একটা খাবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিনা যুদ্ধে যিনি হারেন না, তিনিই তো মা!
দৃশ্যটি এ রকম—আমি আমার শোবার ঘরের জানালার ধারে বসে উদাস চোখে বাইরে চেয়ে আছি। আমার সামনে একটি বাসনে লোভনীয় সব বাংলা খাবার। জুঁই ফুলের মতো গরম ভাত, শুকনা মরিচ ও রসুনে ফোড়ন দেওয়া কচি লালশাক, শর্ষে-পটোলের খোসাভর্তার একটা ছোট্ট লাড্ডু আর এক টুকরা কাগজিলেবু। ডানে কাঠের টেবিলের ওপর ডাল ও তশতরিতে কড়কড়ে ভাজা ডিমভরা ইলিশের এক ফালি। পাঁচফোড়ন দেওয়া ঘন জলপাই ডাল আর ভাজা মাছ যেন সুগন্ধের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিন্তু আমি বিরস বদনে ডালের চামচটা হাতে তুলে ভাতের ঢিবি খোঁচাচ্ছি আর বাইরে তাকাচ্ছি। এমন সময় আবার আবির্ভূত হলেন আম্মা। ভুরু কুঁচকে একবার তাকালেন মাত্র। তারপরই দ্রুত বাথরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে টান মেরে প্লেটটা নিয়ে সব মাখতে লাগলেন। সেদিন তিনি কী দিয়ে কী মেখেছিলেন, কে জানে, তাঁর মাখা ভাতের গোলাগুলো চাকুমচুকুম গিলতে লাগলাম। কী আশ্চর্য, মাথার ওপরের ফ্যানের হাওয়া ফাগুন হয়ে গেল।
মায়ের হাতের মাখা ভাতের মতোই মায়ের হাতের রান্নায়ও আছে এক অত্যাশ্চর্য জাদু। সে মা অপটু, অগোছালো, ঝানু, আনাড়ি, সবল, দুর্বল যা–ই হোন না কেন, সন্তানের কাছে সে রান্নাই অমৃত। তা ছাড়া পুরো কলোনিতে আম্মার রান্নার ভালোই সুনাম ছিল।
আনোয়ারা তরফদারের রান্নার বই খাদ্যবিলাস–এর প্রচ্ছদ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাগেরহাটে সংসদীয় আসন কমানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ
বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনের একটি কমিয়ে জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে বাগেরহাট শহরের দশানী ট্রাফিক মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়ক দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিমের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন, বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, বাগেরহাট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, সেক্রেটারি মাওলানা ইউনুস আহমেদ, খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রমিজ উদ্দিন, জেলা ইমাম সমিতির সাধারাণ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ আরেফী, জেলা যুব দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা, খেলাফত মজলিসের সভাপতি আমিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সভাপতি এস এম সাদ্দাম ও এনসিপির আহ্বায়ক মোর্শেদ আনোয়ার সোহেল প্রমুখ।
আরো পড়ুন:
আসন খসড়া বাতিলের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহাসড়কে বিক্ষোভ
স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বক্তারা বলেন, ‘‘যদি না বুঝে করে থাকেন তাহলে আমরা দাবি জানালাম, আপনারা আমাদের দাবি মেনে নিয়ে বাগেরহাটের তিন আসনের প্রস্তাব বাতিল করে চারটি আসন পুনর্বহাল করবেন। তবে এটা নিয়ে যদি গড়িমসি করেন, আপনাদের মনগড়া প্রস্তাব জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে জনগণ তা মেনে নেবে না।’’
বক্তারা আরো বলেন, ‘‘জন্মলগ্ন থেকে বাগেরহাটে চারটি আসন। একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন করাটা খুবই অযৌক্তিক। এই প্রস্তাব দেয়ার আগে জেলার রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেনি। আজকে শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছি। আগামীকালও আমরা মিছিল করব। জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। এরপরও যদি নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তাব থেকে ফিরে না আসে, তাহলে আরো কঠোর আন্দোলন করা হবে।’’
প্রয়োজনে সারা দেশ থেকে বাগেরহাট বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন নেতারা।
দ্বাদশ সংসদের ২৬১ আসনের সীমানা বহাল রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩৯টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন করে নতুন সীমানার খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। পরিবর্তনের মধ্যে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছে এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমানো হয়েছে। তবে আগামী ১০ অগাস্টের মধ্যে এ প্রস্তাবের বিষয়ে দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল