বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশি ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল। তিনি মনে করেন, ‘‘ফ্যাশন মানেই শুধু সাজ নয়। সমাজের অর্থনীতিও এর সঙ্গে জড়িত।’’ বিবি রাসেল এই বোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত। তিনি এগিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন, তার হাত ধরে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশের ফ্যাশনও।
বিবি রাসেল চট্টগ্রামের মেয়ে। ১৯৭৫ সালে লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশন হাউজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপরে ‘কসমোপলিটন’ ও ‘হার্পার’স বাজার’ এর মতো বিশ্বখ্যাত সব ম্যাগাজিনে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। ৯০ এর দশকে থেকে যে কয়জন মানুষ বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বিবি রাসেল তাদের মধ্যে একজন। বিশ্বে তিনি যেমন খ্যাতি পেয়েছেন তেমনি বাংলাদেশকেও বসিয়েছেন সম্মানের আসনে।
বিবি রাসেল ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি নামকরা বিদেশি ডিজাইনার, যেমন- আরমানি, সেইন্ট লরেন্ট, কোকো শ্যানেল, কেঞ্জো- এদের সাথে ফ্যাশন শোতে কাজ করেছেন। এরপর দেশে এসে ১৯৯৫ সালে চালু করেন নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘বিবি প্রোডাকশন’।
আরো পড়ুন:
কোরবানির মাংস বণ্টনের জন্য হাতের কাছে যা যা রাখা প্রয়োজন
যেভাবে মাংস সংরক্ষণ করলে ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকবে
ক্যারিয়ারে প্রথম থেকেই বিবি রাসেলের স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এবং ফ্যাশন নিয়ে কাজ করবেন। প্রায় দেড় বছর দেশের আনাচে-কানাচে সব পোশাক-শিল্পীর সাথে কথা বলে তিনি তাদের বিশ্বাস অর্জন করেন। দেশে ছড়িয়ে থাকা পোশাক শিল্পীদের সঙ্গে মিলে এগিয়ে গেছেন বিবি রাসেল, কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশের ঐতিহ্য, খুঁজে নিয়েছেন বাংলাদেশের আইকনিক শিল্প সম্ভাবনা, তৈরি করেছেন বাংলাদেশি ফ্যাশনের নানা দিক।
২০১০ সালের সেরা চলচ্চিত্র ‘মনের মানুষ’-এর পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবে জাতীয় পুরস্কারও জিতে নেন তিনি। ২০১৫ সালে নারী জাগরণ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিবি রাসেলকে বেগম রোকেয়া পদকে ভূষিত করেন।
বিবি রাসেলের কাছে পরিবার মানে কি জানেন? তিনি বলেন, ‘‘পরিবার মানে আমার টিম। এবং আমার গ্রামের মানুষ।’’
বিবি রাসেল সাসটেইনেবল ফ্যাশন নিয়ে অনেক বছর ধরে কাজ করছেন। শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক তন্তু ও ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রশিল্প পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
বিবি রাসেল বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যখন পুরো বিশ্ব পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে উপলব্ধি করছে, তখন প্রাকৃতিক তন্তুকে গুরুত্ব দিয়ে সাসটেইনেবল ফ্যাশন নিয়ে ভাবা উচিত।’’
কিন্তু বিবি রাসেলের এই যাত্রায় দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পাওয়া নাকি একেবারেই কঠিন। যদিওবা পাওয়া যায় ওইসব প্রতিষ্ঠান বিবি রাসেলকে যেসব নিয়ম মানতে বলেন- সেই সব নিয়ম মানতে রাজি নন তিনি।
বিবি রাসেল বলেন, ‘‘আমার মতো একটি অরগানাইজেশনে কেউ ইনভেস্ট করতে আসে না। যদিওবা আসে, অনেক কন্ডিশন দিয়ে রাখে। আমি ওই কনডিশনগুলো মানি না। আমার চোখে মুখে বাংলাদেশ।’’
বিবি রাসেল আরও বলেন, ‘‘আমি এদেশের মেয়ে। আমি খুব খুব লাকি যে-আমি এমন একটা দেশে জন্ম নিয়েছি। যে দেশ আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। যে দেশের মানুষের কাজ দেখে -দেখেই কিন্তু আজকে পজেটিভ বাংলাদেশ দেখাতে পারছি।’’
বাংলাদেশে অবহেলায় পড়ে থাকা কচুরিপানা দিয়ে চুড়ি বানিয়ে ইউরোপের সুপারস্টোরে তুলে দিয়েছেন বিবি রাসেল। সেখানকার লোকজন পছন্দ করছেন এই চুড়ি।
বাংলাদেশের রাস্তায় পড়ে থাকা পলিথিন সংগ্রহ করে, ডিজাইন করে, হ্যান্ডব্যাগ তৈরি করছেন বিবি রাসেল। বিশ্বজুড়ে এর চাহিদা তৈরি হয়ে গেছে।
নিজের প্রাপ্তির চেয়ে দেশীয় সংস্কৃতিকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে বড় করে দেখতে চান বিবি রাসেল।
ইউরোপীয় শিক্ষায় গড়ে ওঠা বিবি রাসেল কিন্তু ভুলে যাননি নিজের দেশের কথা। বরং দেশের অভ্যন্তর থেকে খুঁজে নিয়েছেন দেশের ঐতিহ্য, নিজের ঐতিহ্য। এই বিবি রাসেল বাংলাদেশের গর্ব।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ প শ ক ঈদ উৎসব ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।