নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা পারভীন শ্যামলী চৌধুরী তার স্বামীকে নিয়ে কোরবানির গরুর মাংস চেয়ে ভিক্ষা করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে চারদিকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

সম্প্রতি ‘তিন কন্যা’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘একটা গরুর রান ভিক্ষা দেন গো’ ক্যাপশনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা পারভীন শ্যামলী চৌধুরী, তার স্বামী ও সঙ্গে আরও দুটি শিশু এবং এক তরুণীকে দেখা গেছে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেত্রী শ্যামলী চৌধুরী  ও তার স্বামী একটি বাড়ির দরজার সিঁড়ির সামনে বসে ঘরের ভেতর থাকা মানুষকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কিগো বৃষ্টির মাঝে বইয়া রইছি একটু গোস্ত দেন না গো।’ ঠিক তখনই স্ত্রীও বলে ‘দেন না গো একটু গোস্ত।’

এরপর আবারও স্বামী বলেন, ‘আপনারা বড়লোক মানুষ আপনারা একটা রান দিয়া দিলেই হইবো। পারলে আমাগো একটা রান দিয়া দেন বাড়িতে গিয়া খামুনে, আপনেগো লাইগা দোয়া করমুনে।’

এ সময় স্বামীকে উদ্দেশ করে শ্যামলী চৌধুরী বলেন, ‘তুই খালি রান চাস কেন? হেতে তোরে গোস্ত (মাংস) দিতো না। দেনগো আমাগো দুগা গোস্ত দেন। আল্লাহর ওয়াস্তে দেন। মেঘের (বৃষ্টির) মধ্যে আসছি, গোস্ত দিলে আল্লাহ আপনেগো বরকত দিবো। কালকে দেইখা গেছি আপনাগো গরুটা বড় আছে।’

এর একপর্যায়ে ঘরের ভেতর থেকে এক পোটলা গোশত এনে তাদের হাতে তুলে দেন এক তরুণী। পরে মাংসের পোটলাটা হাতে নিয়ে উভয়ে বলে উঠলেন এতটুকু? এ সময় ভিডিওতে থাকা দুই শিশুর উদ্দেশে দম্পতির ভাষ্য ছিল, ‘দেখ পুতেরা (ছেলেরা) দেখ কতটুকু গোস্ত দিছে, বড়লোক মানুষ কতটুকু গোস্ত দিছে।’

শেষদিকে ওই তরুণীকে উদ্দেশ করে তার স্বামী বলেন, ‘আমাগো মোট ১০টা পোলা। তাদের জন্য ১০ পিস দিলেও তো হতো।’ এ সময় তারা মাংসের পোটলা ছুড়ে মেরে চলে যায়। ভিক্ষুকের বেশে তারা নানা অঙ্গভঙ্গি করে বলতে থাকেন, আপনেগো গোস্ত লাগতো না।

স্থানীয় ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ পাওয়ার আশায় এই সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেত্রী শ্যামলী চৌধুরী ও তার স্বামী ভিক্ষুকের বেশে অভিনয় করে তার মেয়ের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে আশেপাশের লোকজন ও নেটিজেনরা নিন্দা প্রকাশ করে নানা সমালোচনা করেছেন। অনেকে নেতিবাচক মন্তব্যও করেছেন।

এ বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা পারভীন শ্যামলী চৌধুরীর ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

তবে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি নিষিদ্ধ দল। জনগণের কাছে ভিন্নভাবে নিজেকে জাহির করার জন্য তারা এ ধরনের ভিডিও করে আলোচনায় থাকতে চাইছে। আমি মনে করি, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত।’

উল্লেখ্য, সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে এই নেত্রী। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে তার ছবি রয়েছে।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স ন রগ ও র জন ত য বল গ য বল গ ন র য়ণগঞ জ ক রব ন উপজ ল উপজ ল আওয় ম ল গ স ন রগ আওয় ম আপন গ

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!

সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। 

এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।  

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। 

এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন। 

এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। 

এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।

একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।

নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।

যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।  

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়। 

২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাইলস্টোন স্কুলে হতাহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
  •  শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা চান নাই : টিপু 
  • নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাথে গিয়াসউদ্দিনের মতবিনিময় সভা
  • সোনারগাঁয়ে ইসলামী আন্দোলনের পরিচিতি সভা ও শপথ গ্রহণ  
  • বন্দর ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণ 
  • তেল চোর দেলোয়ারকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন : টিপু
  • নারায়ণগঞ্জে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৫ বিএনপি নেতা বহিষ্কার
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ইজিবাইকের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু
  • কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও সদস্য ফরম বিতরণ
  • সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!