ফ্রান্সে পড়াশোনা: বৃত্তি–সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজসহ জেনে নিন খুঁটিনাটি
Published: 9th, June 2025 GMT
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ৯৯ শতাংশ শিক্ষার হার নিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে শৈল্পিক দেশ ফ্রান্স। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে আবেদনকারীর পূর্ববর্তী ডিগ্রি থেকে ন্যূনতম ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মার্কস নেওয়া হয়। মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য পূর্বের ডিগ্রিগুলো একই বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে থাকতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিন্ন একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকার পরেও অতিরিক্ত ক্রেডিট কোর্সের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়। পিএইচডির জন্য আলাদাভাবে প্রয়োজন হয় একই বিষয়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা ও প্রকাশনার। এ ছাড়া সেমিনার ও কনফারেন্সের মতো পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত ক্রিয়াকলাপ অতিরিক্ত মান সংযোজন করে।
এমবিএর ক্ষেত্রে ফ্রান্সের শীর্ষ বিজনেস স্কুলগুলোতে আবেদনের জন্য কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। প্রাথমিক নিরীক্ষণে মূল্যায়ন করা হয় জিআরই কিংবা জিম্যাটের স্কোরকে। সাম্প্রতিক শিক্ষাবর্ষগুলোতে পাঠদানের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা, প্রকৌশল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোর ক্লাস ইংরেজিতেই করানো হয়। তাই ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য প্রয়োজন হবে টোয়েফল এবং আইইএলটিএস। তবে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও বেশি বিকল্প পেতে হলে ফরাসি ভাষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিদেশি এই ভাষার দক্ষতা খণ্ডকালীন চাকরি এবং পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি পাওয়ার জন্যও অপরিহার্য। চলুন, ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দেশটিতে আবেদন, খরচসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ফরাসি উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের কোর্সগুলোতে সরকার শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের মোট খরচের দুই তৃতীয়াংশ খরচ বহন করে। রেজিস্ট্রেশন হিসেবে শিক্ষার্থীদের আলাদা ফি দিতে হয়।ফ্রান্সের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সগুলো—ফ্রান্সের পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে টুলুজ, গ্রেনোবল ও বোর্দোর জাতীয় পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এবং লিলি, লিয়ন, মার্সেই ও নান্টেসের সেন্ট্রাল স্কুল।
লিয়ন, রেনেস, টুলুস, রুয়েন, স্ট্রাসবার্গ ও সেন্টারভাল ডি লোয়ারের প্রতিটি স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
কম্পিয়েনি, বেলফর মন্টবেলিয়ার ও ট্রয়াতে রয়েছে একটি করে টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়।
প্যারিস, ক্যাচান, লিয়ন ও রেনেসে আছে চারটি হায়ার এডুকেশন ইন্সটিটিউট।
২০টি জাতীয় ইন্সটিটিউটের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কলেজ ডি ফ্রান্স, ন্যাশনাল কনজারভেটরি অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড সিভিলাইজেশন এবং স্কুল অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্স। এগুলোসহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয়গুলো হচ্ছে পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায় প্রশাসন, অর্থায়ন, কৃষিবিদ্যা, জীববিদ্যা, কলা, সংস্কৃতি, নকশা ও ফ্যাশন।
পড়াশোনার খরচ কেমনআন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ফরাসি শিক্ষার্থীদের মতো একই খরচে অধ্যয়ন করতে পারবেন, তবে সেক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে:
যেকোনো গবেষণার সঙ্গে জড়িত অথবা মেডিকেল, ডেন্টাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল অধ্যয়নের তৃতীয় চক্রে একটি ডক্টরাল প্রোগ্রামের মধ্যে নথিভুক্ত
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কোর্সে দ্বৈত নথিভুক্তিসহ গ্র্যান্ড স্কুলের জন্য প্রস্তুতিমূলক ক্লাসে নথিভুক্ত।
উপরোক্ত শর্তানুসারে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফরাসি শিক্ষার্থীদের মতো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন খরচ—
লাইসেন্স (স্নাতক) স্তরে বার্ষিক ১৭৫ ইউরো,
মাস্টার পর্যায়ে বার্ষিক ২৫০ ইউরো
ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে বার্ষিক ৬১৮ ইউরো
ডক্টরাল পর্যায়ে বার্ষিক ৩৯১ ইউরো।
ফরাসি উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোর্সগুলোতে সরকার শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের মোট খরচের দুই তৃতীয়াংশ ব্যয়ভার বহন করবে। এখানে রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে শিক্ষার্থীদের আলাদা দিতে হবে—
লাইসেন্স (স্নাতক) স্তরে বছর শেষে ২ হাজার ৮৫০ ইউরো
মাস্টার লেভেলে বছর শেষে ৩ হাজার ৮৭৯ ইউরো
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বেসরকারি ব্যবসায়িক স্কুলে টিউশন ফি প্রতিবছর ৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার ইউরো।
বেশির ভাগ ফরাসি প্রতিষ্ঠানে অগ্রিম শুধু প্রথম বছরের ফি দিতে হয়। টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার (টিটি) বা ডাইরেক্ট ডেবিটের (ডিডি) মাধ্যমে এই ফি দেওয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরামর্শকৃত মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত।
টিউশন ফি প্রাপ্তির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্তি রসিদ দেওয়া হবে। এ রসিদটি সংযুক্ত করতে হবে শিক্ষা ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার সময়।
প্রথম আলো ফাইল ছবি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য ট ট উট র জন য ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা
জাপানে পড়াশোনা করার আগ্রহ থাকতে পারে অনেকের। এ আগ্রহে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ এক সুযোগ নিয়ে এসেছে দেশটির হোনজো ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ ২০২৬-এ আবেদন শুরু হয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ জাপানি বৃত্তির মাধ্যমে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যাবে। এতে রয়েছে আংশিক অর্থায়নের বৃত্তির পাশাপাশি মাসিক ভাতা, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই আন্তর্জাতিক বৃত্তি মূলত তাঁদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার লক্ষ্যেই প্রদান করা হয়। পাশাপাশি এটি জাপান এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে।
হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপের উদ্দেশ্য—১৯৯৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে হোনজো ফাউন্ডেশনকে আন্তর্জাতিক বৃত্তি সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন টাউন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মাসানরি হোনজো। তিনি ফাউন্ডেশনের প্রাথমিক মূলধন হিসেবে ২০ কোটি ইয়েন নগদ অর্থ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ শেয়ার দান করেন এ বৃত্তির জন্য। হোনজো ফাউন্ডেশন উন্নয়নশীল দেশের সেই সব শিক্ষার্থীকে সাহায্য করে, যাঁরা ভবিষ্যতে নিজেদের দেশকে উন্নয়নের পথে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি জাপানি শিক্ষার্থীরাও বিদেশে পড়াশোনার জন্য এ বৃত্তি পেয়ে থাকেন, যা বৈশ্বিক সংযোগ ও আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
আবেদনে যোগ্যতার শর্ত
হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে—
—জাপান ব্যতীত সব দেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
—আবেদনকারীকে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া কোনো গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে বা ভর্তির পরিকল্পনা থাকতে হবে।
—বর্তমান শিক্ষার্থী, যাঁরা এখনো ভর্তি হননি বা কর্মরত, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন, যদি তাঁরা এপ্রিল ২০২৬-এ ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করেন।
—যাঁরা ২০২৫ সালের শরৎকালীন সেমিস্টারে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরাও এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
—প্রফেশনাল গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণত যোগ্য নন, তবে বৈধ গবেষণা পরিকল্পনা জমা দিতে পারলে তাঁরা আবেদন করতে পারবেন।
বয়সসীমা—পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।
—মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর।
—পড়াশোনা শেষ করার পর নিজ দেশের উন্নয়নে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার থাকতে হবে।
—আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতি আগ্রহী হতে হবে এবং ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করতে হবে।
—দৈনন্দিন কথোপকথনের মতো জাপানি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে, কারণ, সাক্ষাৎকার কেবল জাপানি ভাষায় হবে।
বৃত্তির সুবিধা
হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক আর্থিক ও একাডেমিক সহায়তা প্রদান করে:
১। পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ।
২। মাসিক ভাতা।
—১ বা ২ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার ইয়েন।
—৩ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ১০ হাজার ইয়েন।
—৪ বা ৫ বছরের কোর্সের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন।
—জাপানে যাওয়ার জন্য ট্রাভেল গ্র্যান্ট দেওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।
—আর্থিক দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ।
—জাপানের সংস্কৃতিময় জীবনযাত্রা উপভোগের পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগ।
—বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্লোবাল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ।
হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তিতে শিক্ষার্থীরা পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ পাবেন এবং পাবেন মাসিক ভাতা।