বন্যায় নষ্ট ধান নিয়ে কৃষকের মাথায় হাত
Published: 10th, June 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে রবিশস্য তুলে সাত বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ জাতের বোরো ধান রোপণ করেছিলেন আজগার আলী। ঈদের পরপরই ধান কাটার কথা ছিল তার। কিন্তু মাত্র তিনদিনের ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ডুবেছে পাকা ধানের ক্ষেত। এতে ফসল তোলার আনন্দ যেন বিষাদে রূপ নিয়েছে আজগার আলীর পরিবারে।
তিনি জানান, কোমর সমান পানি থেকেই বাড়তি পারিশ্রমিকে কামলা (কৃষি শ্রমিক) এনে কিছু ধান কাটার ব্যবস্থা করেছেন। এতেও সুবিধা করতে পারেননি। অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের বার্ষিক খোরাকির ধানও জোটানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
তাড়াশের মাগুড়াবিনোদ এলাকার ভুক্তভোগী আজগারের মতোই ভাগ্য বিস্তীর্ণ এলাকার অন্য কৃষকদেরও। বন্যার নষ্ট হওয়া ধান নিয়ে এখন তাদের মাথায় হাত একই এলাকার পাচান গ্রামের কৃষক আরমান আলী। সমকালকে তিনি জানান, কামলা না পেয়ে মোট জমির এক মুঠো বোরো ধানও কাটতে পারেননি।
স্থানীয়রা বলছেন, আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন মূলত ব্রি-২৯ বা নাবী জাতের বোরো ধানের চাষিরা। যদিও একই এলাকায় আগাম জাতের বোরো যারা চাষ করেছিলেন; তারা বন্যার শুরুর ১২-১৫ দিন আগেই ধান কাটা শেষ করেছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাত্র কয়েক দিনের আকস্মিক বন্যায় চলনবিলের ‘শস্যভাণ্ডার’ খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর; পাবনার ভাঙ্গুরা, চাটমোহর এবং নাটোরের গুরুদাসপুর ও সিংড়া এলাকার নিচু জমি ডুবে গেছে। এতে হাজার হাজার বিঘা জমির পাকা ও আধা পাকা বোরো ধান কোথাও তলিয়ে গেছে; কোথাও হাবুডুবু খাচ্ছে। মিলছে না ধান কাটার পর্যাপ্ত শ্রমিক। এছাড়া কোমর সমান পানিতে কাজ করছে না ধান কাটা যন্ত্রও।
এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন পশ্চিম চলনবিল অঞ্চলের নাবী জাতের ধানের আবাদ করা কৃষকরা। তাড়াশের ঘরগ্রাম এলাকার কৃষক ইসমাইল হোসেন সমকালকে বলেন, তাড়াশ উপজেলার সদর, সগুনা, মাগুড়াবিনোদ ও নওগাঁ ইউনিয়ন এলাকার কমপক্ষে ২৫-৩০টি গ্রামের পাকা বোরো ধানের জমিতে এখন হাঁটু বা কোমর সমান পানি। এ এলাকার কৃষকের ঘরে এবার ঈদ নেই। জমির ধান কাটতে শ্রমিক আর হারভেস্টরের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছি।
পাবনার চাটমোহরের নিমাইচড়া এলাকার কৃষক পুলক কুমার বলেন, চলনবিলের আট উপজেলার কৃষকরা ফাল্গুন মাসে রবিশস্য তুলে বোরো ধান রোপণ করেন। এগুলো সাধারণত ১১০-১২০ দিনে ঘরে তোলা যায়। ধান পাকতে দেরি হওয়ায় এ বছর জ্যেষ্ঠ মাসেই আকস্মিক বন্যায় চলে এসেছে। এখন আর ঘরে তুলতে পারছি না।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা এলাকার কৃষক আয়নাল মন্ডল সমকালকে বলেন, পানিতে ধানের শীষ জেগে আছে- এমন জমির ধান কাটতে বর্তমানে বিঘাপ্রতি খরচ হচ্ছে সাড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। এরমধ্যে হারভেস্টরে বিঘাপ্রতি সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে সাড়ে ৫ হাজার টাকা; দিন হাজিরায় শ্রমিকপ্রতি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। পাশাপাশি চলমান এই দুর্যোগের মুহূর্তে যে পরিমাণ কৃষি শ্রমিক বা হারভেস্টর প্রয়োজন, তাও মিলছে না।
তিনি আরও বলেন, পাকা বোরো ধান চোখের সামনে ডুবতে দেখে চলনবিলের আট উপজেলার ১৫-২০ ইউনিয়নের শতশত কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সোমবার বিকেল পর্যন্ত বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পাকা ধান ঘরে তুলতে না পেরে অনেকেই কাঁদছেন।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ নক ষ ত বন য চলনব ল উপজ ল র চলনব ল
এছাড়াও পড়ুন:
আকস্মিক বন্যায় চলনবিলে ডুবল বোরো ধান
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার চলনবিলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে চলনবিলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নাবি জাতের ইরি বোরো ধান ডুবে গেছে। ফলে কৃষকের কোরবানি ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে।
আকস্মিক বন্যায় চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে গেছে। ফলে ডুবে যাওয়া ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক। ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে হারভেস্টার মেশিন এনে ধান কাটার চেষ্টা করছে। কিন্তু পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় সে চেষ্টাও বিফলে গেছে।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মাগুড়াবিনোদ এলাকার কৃষক মো. আজগার আলী সাত বিঘা জমিতে ব্রি- ২৯ জাতের বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। ঈদের পর পরই সে ধান কাটার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র তিন দিনের ভারী বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তার জমির ধান ডুবে যাচ্ছে। যদিও কোমর সমান পানিতে উচ্চ মূল্যের পারিশ্রমিক দিয়ে কৃষি শ্রমিকরা কিছু ধান কেটে পলিথিনের নৌকা বানিয়ে নিকটবর্তী পাকা সড়কে ধান তুললেও অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ওই কৃষকের পরিবারের বার্ষিক খোরাকির ধানও জুটবেনা এমন ভাষ্য তার।
আবার এ অঞ্চলের অনেকে কৃষি শ্রমিক না পেয়ে বা ধান ডুবে যাওয়ায় মোট জমির এক মুঠো বোরো ধান কাটতেও পারছেন না বলেও জানান ভুক্তভোগী কৃষক রাফী। তিনি জানান, তবে আগাম জাতের বোরো ধান আবাদ করা কৃষকেরা আকস্মিক বন্যার ১২ থেকে ১৫ দিন পূর্বেই কাটা শেষ করেছেন।
তাড়াশের ঘরগ্রাম এলাকার কৃষক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, তাড়াশ উপজেলার সগুনা, মাগুড়াবিনোদ ও নওগাঁ ইউনিয়ন এলাকার কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ টি গ্রামের পাকা বোরো ধানের জমিতে এখন হাঁটু বা কোমড় সমান পানি আছে।
জানা গেছে, চলনবিলের আটটি উপজেলার একইরকম অবস্থা। আকস্মিক বন্যায় সব ধান পানিতে ডুবে গেছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রকৃতির ওপর কারো হাত নেই। তারপরও যতটুকু পারা যায় জমির পাকা ধান ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের চেষ্টা চালিয়ে যাবার পরামর্শ দেন তিনি।