ইরানে ইসরায়েলি হামলায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ
Published: 13th, June 2025 GMT
ইরানের বিভিন্ন জায়গায় আজ শুক্রবার ভোররাতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পারমাণবিক, সামরিক স্থাপনাসহ ১০০টির বেশি জায়গায় হামলা চালানো হয়। এই হামলায় ইরানের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিশ্বনেতারা উত্তেজনা এড়াতে সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলা হওয়ার আগেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা ঘটতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইরানের কাছে পারমাণবিক বোমা থাকতে পারবে না। আমরা চাই আবার আলোচনার টেবিলে ফিরে যেতে। দেখা যাক কী হয়।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ইরান যদি পাল্টা হামলা করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ও ইসরায়েলকে রক্ষা করতে প্রস্তুত আছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সংঘাত ঠেকাতে সব পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
গুতেরেসের উপমুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো ধরনের সামরিক উত্তেজনা বাড়াকে নিরুৎসাহিত করেন।’
ফারহান আরও বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ জানিয়েছেন। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলার মধ্যে এমন হামলা হলো।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ইসরায়েলের এমন হামলার পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে তাঁরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
লিন জিয়ান আরও বলেন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং নতুন করে উত্তেজনা এড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছে চীন।
আরও পড়ুনমধ্যপ্রাচ্যে ‘বড় সংঘর্ষের শঙ্কা’ রয়েছে বলে ট্রাম্প সতর্ক করার পরই ইরানে ইসরায়েলের হামলা৬ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পারমাণবিক আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে ওমান। দেশটিও ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে ইসরায়েলের বিপজ্জনক ও বেপরোয়া কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে বলেছে, এর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন হয়েছে। এ ধরনের আগ্রাসী ও নির্বিচার আচরণ অগ্রহণযোগ্য। এতে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হবে।
ওমানের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে সরাসরি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াইয়া বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের এই হামলার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি। এ ধরনের কাজ মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
তাকেশি সব পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানো এবং দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এক বিবৃতিতে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরায়েলি পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। এতে বলা ‘ভ্রাতৃপ্রতিম ইরানকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের চালানো এই প্রকাশ্য আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে সৌদি আরব। এটি ইরানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং এটি আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ইরানে ইসরায়েলের হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া ও তুরস্কও।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে হঠাৎ করে যে ভয়াবহ উত্তেজনা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে রাশিয়া উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছে।’
রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে থাকা রাশিয়ার নাগরিকদের সম্ভব হলে দেশটি ত্যাগ করতে বলেছে রুশ দূতাবাস। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার নাগরিকদের ইসরায়েলে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে ‘আগ্রাসন বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলের চালানো হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে আঙ্কারা।
আরও পড়ুনসর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কায় দেশের চতুর্দিকে সেনা মোতায়েন করছে ইসরায়েল৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আহ ব ন জ ন ইসর য় ল র পরর ষ ট র ধরন র আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতন চেয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ৪১ বছর বয়সী এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে গ্লাসগোগামী একটি ফ্লাইটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি লন্ডনের কাছে বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরের বাসিন্দা।
অভয় নায়েক ইজিজেট ফ্লাইটে হামলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার মতো আচরণ করেছেন। তিনি উড়োজাহাজে বোমা ফাটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মাঝ আকাশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে চিৎকার করেছিলেন, যা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, অভয় নায়েক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমেরিকার পতন হোক’, ‘ট্রাম্পের পতন হোক’। এরপরই তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ (যার অর্থ ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’) বলে স্লোগান দেন। পরে দুজন ব্যক্তি তাঁকে কাবু করে উড়োজাহাজের মেঝেতে ফেলে দেন।
ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি কোন ধর্মের অনুসারী, সে ব্যাপারে তাৎক্ষিণক কিছু জানা যায়নি।
ওই ব্যক্তির এমন আচরণের পর পাইলটরা বাধ্য হয়ে গ্লাসগোতে জরুরি অবতরণ করেন। সেখানেই স্কটিশ পুলিশ এসে অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করে।
স্কটল্যান্ডের পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গত রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে গ্লাসগোতে পৌঁছানো ইজিজেটের একটি ফ্লাইটে এক ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, ঘটনাটি এককভাবে ওই ব্যক্তির, অন্য কেউ জড়িত নন। যেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে, সেগুলো সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।’
উড়োজাহাজ অবতরণের পরই অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
ইজিজেট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বেপরোয়া আচরণের কারণে একজন যাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করছি।’
পাইসলি শেরিফ আদালতে হাজিরার সময় অভয় নায়েক কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁকে বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে তাঁকে আবার আদালতে হাজির করা হবে।