তিন একর আয়তনের মাঠটির এখানে-ওখানে স্তূপ করে রাখা মাটি। কয়েকটি ছাগল ঘুরে ঘুরে খাচ্ছে ঘাস। কিছু হাঁসকেও দেখা গেল জমে থাকা পানির পাশে খুঁটে খুঁটে খাবার খেতে। পশ্চিম ও দক্ষিণপাশের অর্ধসমাপ্ত গ্যালারি না দেখলে যে কেউ মাঠটিকে পশু-পাখির চারণভূমি বলে ভুল করবেন। অথচ এই মাঠই মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি মিনি স্টেডিয়াম। নির্মাণকাজ শুরুর প্রায় আড়াই বছরে তিন দফায় সময় বাড়িয়েও যেটি অসমাপ্ত। ফলে স্থানীয় কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা উঠেছে লাটে।
মাঠটির অবস্থান মেহেরপুর সদরের প্রায় চার কিলোমিটার পূর্বে। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে হওয়ায় এটি ‘স্কুলের মাঠ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, একসময় মাঠটি সারা বছরই খেলোয়াড়দের পদচারণায় মুখর থাকত। একের পর এক চলত ক্রিকেট ও ফুটবলের লিগ-টুর্নামেন্ট। এ সময় চারপাশ ভরে যেত দর্শকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০২৩ সালে মাঠটিকে মিনি স্টেডিয়ামে রূপান্তর করে সরকার। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকায় এটি নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। শুরুতে ওই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ করার তারিখ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই কাজ শেষ হয়নি এখনও। পরপর তিন দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। চলতি জুনেই কাজটি শেষ হওয়ার কথা।
নির্মাণকাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের উপকরণ ও দায়সারা কাজের অভিযোগ ছিল। কিন্তু এ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করা যায়নি। সম্প্রতি এমন অভিযোগ করেন আমঝুপি গ্রামের বাসিন্দা সাঈদ হোসেন। তিনি নিজে সাবেক ফুটবলার। সাঈদ হোসেনের ভাষ্য, ‘৫ আগস্টের আগে স্টেডিয়ামের কাজ কেমন হচ্ছে, কারা করছে– এমন কথা বলার কারও সাহস ছিল না। আমরা কেউ কাজের কাছে আসতে পারিনি। ব্যবহার অনুপযোগী সরঞ্জাম দিয়ে কাজ করা হয়েছে। এখনই এসব ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। বাতাসে টিন উড়ে যায়।’
তিনি জানিয়েছেন, মাঠের পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা (ড্রেন) হওয়ার কথা ছিল। এখন শুনছেন, নালা হবে না। তাহলে পানি কীভাবে মাঠ থেকে সরবে– এমন প্রশ্ন তোলেন।
পুরো মাঠ ঘুরেও সাঈদের কথার সত্যতা মেলে। পশ্চিম ও দক্ষিণ দুই দিকে গ্যালারির কংক্রিটের স্ট্রাকচার হয়েছে। দোতলায় প্যাভিলিয়নের পাশে কিছু চেয়ার বসানো হয়েছে। আর কোথাও চেয়ার বসেনি। অন্যান্য কাজও হয়নি। মাঠ, ড্রেন, মাঠের পাশের রাস্তা সবকিছুই অগোছালো পড়ে আছে।
এই মাঠেই একসময় প্র্যাকটিস করত ইমরুল কায়েস ক্রিকেট একাডেমির শিক্ষার্থীরা। এখন আর তা সম্ভব হয় না বলে জানায় একাডেমির অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ক্রিকেটার সায়েম ইসলাম। আমঝুপির এই কিশোর সদস্য এসএসসি পাস করেছে। ক্রিকেট ঘিরেও তার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছে নিয়মিত মাঠে প্র্যাকটিস করতে না পারায়। সায়েমের ভাষ্য, ‘কোচের সঙ্গে শুধু ইনডোর প্র্যাকটিসটা করতে পারি। এই মাঠে খেলে অনেক ক্রিকেটার বিভাগীয় পর্যায় ছাড়াও ঢাকায় খেলেছেন। দুই বছর মাঠে বন্ধ থাকায় আমাদের ভালো প্র্যাকটিস হয়নি।’
এ একাডেমির কোচ আসাদুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে মাটি এনে ওই মাঠে তারা পিচ তৈরি করেছিলেন। এতে খরচ হয়েছিল ৩ লাখ টাকা। সেই পিচ এখন গর্ত। বর্ষায় পানি জমে। হাঁস খেলা করে। বারবার কাজের মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ হচ্ছে না। এখন মাঠের ভেতর মাটি ফেলে রেখেছে। দুই বছর ধরে ছেলেরা প্র্যাকটিস করতে পারছে না। তাই ইনডোর অনুশীলন করেই খেলতে যায়। জেলা দলের হয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না তারা।
আমঝুপি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহির হোসেন চঞ্চলের অভিযোগ, স্টেডিয়ামটি নির্মাণে বরাদ্দের টাকা হরিলুট হয়েছে। ঠিকাদারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মিলে কোনো রকমে একটা স্ট্রাকচার খাড়া করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এখন শিডিউল অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। তাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও টাকা ছাড় দিচ্ছে না। ফলে কাজে কোনো গতি নেই। এলাকার খেলোয়াড়রা বঞ্চিত হচ্ছে।
নিজ নামের একাডেমির তদারক করেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার ইমরুল কায়েস। তাঁর ভাষ্য, খেলাধুলা হলো প্র্যাকটিসের বিষয়। খেলোয়াড়রা যত বেশি প্র্যাকটিস করতে পারবে তত বেশি ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠবে। মাঠ না থাকায় আমার একাডেমির অনেক ভালো খেলোয়াড়ের প্র্যাকটিস বন্ধ। কোচ কোনো রকমে ইনডোর প্র্যাকটিস করাচ্ছেন। এটি ভালো খেলা ও নিজেদের মেলে ধরার জন্য যথেষ্ট নয়। দ্রুত মাঠটির কাজ শেষ করে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ৫ আগস্টের পর থেকেই তারা লাপাত্তা বলে জানান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসেন। তিনিই এখন মাঠের কাজ দেখভাল করছেন। এই প্রকৌশলী বলেন, নানা জটিলতায় মাঠের কাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ করে রাখতে হয়েছিল। এখন বাকি কাজ আস্তে আস্তে করছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ করা কষ্টসাধ্য। তারপরেও শেষ করার চেষ্টা চলছে। এ জন্য পারিপার্শ্বিক সহায়তা চান তিনি।
মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এক ড ম র শ ষ কর ই বছর
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?