নীলফামারীর সৈয়দপুরে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে গোসল করাতে গিয়ে পাওয়া গেছে সাড়ে তিন লক্ষাধিক টাকা। পরে সৈয়দপুর থানা-পুলিশের মাধ্যমে সেই টাকা গত শনিবার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রশিদুল ইসলামের কাছে আমানত হিসেবে রাখা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মানসিকভাবে অসুস্থ ওই ব্যক্তির নাম গণি মিয়া। তিনি প্রায় ৪০ বছর থেকে সৈয়দপুর জিআরপি স্টেশন এলাকায় ভবঘুরে হিসেবে জীবন যাপন করে আসছিলেন। বাহারি পোশাকে গায়ে বিভিন্ন গাঁটরি নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়াতেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে ভালোবাসতেন।

মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা হিউম্যানিটি বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা গত শনিবার বিকেলে গণি মিয়াকে গোসল করাতে গিয়ে দেখেন তাঁর কাপড়ের ব্যাগে ও পরনে পোশাকের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ টাকা। পরে থানা-পুলিশ ও উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে টাকা গণনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫২ টাকা। এ ছাড়া অনেক টাকা ছেঁড়া-ফাটা থাকায় সেগুলো হিসাবের বাইরে থাকে।

জিআরপি এলাকার ব্যবসায়ী নান্নাহ বলেন, ‘তাঁকে আমরা সৈয়দপুরবাসী সবাই চিনি। ঝড়, বৃষ্টি, শীত গরম যা–ই হোক না কেন, তাঁর পরনে থাকত মোটা কাপড় ও কাপড়ের ব্যাগ। প্রায় ৩০ কেজি ওজনের গাঁটরি নিয়ে তিনি এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতেন। আমরাও তাঁকে খাবার দিতাম, অনেকেই টাকা দিত। সেই টাকা তিনি তাঁর গাঁটরি ও শরীরে বিভিন্ন জায়গায় জমা রাখতেন।’

স্থানীয় সংবাদকর্মী সাবের আহমেদ বলেন, অনেক বছর থেকে দেখে আসছেন, গণি মিয়ে জিআরপি চত্বর এলাকায় পড়ে থাকতেন। মানুষজন তাঁকে সহযোগিতা করতেন। খুব ভালো মানুষ তিনি।

মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা হিউম্যানিটি বাংলাদেশ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক কর্মী বলেন, ‘ওই দিন (শনিবার) সকালে আমরা সৈয়দপুরে এবং এই শহরের চারজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পরিষ্কার করে নতুনভাবে জামাকাপড় পরিয়ে দিই। পরে এই ব্যক্তির সন্ধান পাইলে আমরা তাঁকে পরিষ্কার করতে আসি সৈয়দপুর রেলওয়ে মাঠে। এসে দেখি ওনার গায়ে ময়লা ত্যালতালে যুক্ত পোশাক আর গায়ে ২৫-৩০ কেজি বিভিন্ন পোঁটলা-গাঁটরি। আমরা তাঁকে গোসল করাতে গিয়ে দেখি ওনার শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা আর টাকা বের হচ্ছে। যার মধ্যে এক হাজার টাকার নোট পাওয়া যায় ১২৬টি, আর ৩৫০টি পাওয়া যায় ৫০০ টাকার নোট। এ ছাড়া আরও টাকা ছিল। পরে এত টাকা দেখে আমরা পুলিশের সহযোগিতা নিই।’

গণি মিয়া দাবি করেন, তিনি ১৯৬৬ সাল থেকে সৈয়দপুরে এভাবে আছেন। তাঁর বাবার নাম আইয়ুব। বাসা কোথায় জানতে চাইলে তিনি জানান, রংপুরের আলমনগর এলাকার রবার্টসনগঞ্জ মহল্লায়। তাঁর ভাষ্য, মানুষজন যা দিত, তা তিনি এভাবে জমা রাখতেন।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দীন বলেন, ওই লোক মূলত শহরের জিআরপি এলাকায় বেশির ভাগ সময় থাকেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নগদ টাকা ও সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকসহ অন্য ব্যক্তিদের সামনে থানায় সেই টাকা গণনা করে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫২ টাকা পাওয়া যায়। পরে সেই টাকা উপজেলা সমাজসেবার কর্মকর্তা রশিদুল ইসলামের কাছে আমানত হিসাবে রাখা হয়েছে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা আমাদের কাছে গচ্ছিত আমানত হিসাবে রাখা হয়েছে। ওনার টাকা ওনার কল্যাণে কীভাবে ব্যয় করা যায় কিংবা ওনার কাছে কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়, সেটা আমরা দেখছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত স য়দপ র জ আরপ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদার দাবিতে পিটিয়ে হত্যা, দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদার দাবিতে সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় দুই ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোমিনুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা অনুপস্থিত ছিলেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পাপ্পু (৪০) ও তার ভাই শুক্কুর (৩৭)। তারা উভয় সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকার আফজাল হোসেনের ছেলে।

আরো পড়ুন:

ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিটের ভূমি অধিগ্রহণে জালিয়াতি, মামলার অনুমোদন

ফেনীতে ছাত্র হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ২২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান বলেন, ‘‘সৌদি প্রবাসী জাকির হোসেনের নির্মাণাধীন ভবনের কাজের তদারকি করতেন সিরাজুল ইসলাম। সে সময় শুক্কুর ও তার ভাই পাপ্পুসহ কয়েকজন সিরাজুলের কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ এ রায় ঘোষণা করেছেন।’’

ঢাকা/অনিক/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ