ইসরায়েল লক্ষ্য করে এবার মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) বরাতে এ খবর দিয়েছে সিএনএন।

বুধবার রাতে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের দিকে সেজ্জিল-২ কঠিন জ্বালানিযুক্ত মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

ট্রু প্রমিজ-৩-এর অংশ হিসেবে ১৩তম বার অতি ভারী, দীর্ঘ পাল্লার, সেজ্জিল-২ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের মাধ্যমে শুরু হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

এর আগে ইসরায়েল লক্ষ্য করে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইরানের দাবি, ‘ফাত্তাহ’ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে।


বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন করে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের নিজস্ব। দেশটি দাবি করেছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সীমানা অতিক্রম করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে।

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো হামলার কথা স্বীকার করেনি।

ইসরায়েল ইরানে প্রথম হামলা চালানোর পর ছয় দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।

এর আগে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিবৃতির বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছে। ইরানের ইসলামিক রিভ্যলিউশনারি গার্ড বলেছে, তেহরানের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলীয় শহরতলীতে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের সংবাদমাধ্যম বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে খবর দিয়েছে। বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, উত্তর পূর্ব তেহরানে বিস্ফোরণের পর ধোঁয়া উড়ছে।

কিছু সূত্র বলছে, তেহরানের লাভিজান এলাকাতেও বিমান হামলা হয়েছে। নিউজ সাইট তাবনাক বলছে, তেহরানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ ছাড়াও কারাজের বিভিন্ন এলাকায় হামলা করছে ইসরায়েল।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরানের দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র ইসরায়েলি হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। সেন্ট্রিফিউজ সিস্টেম ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বুধবার এক্স হ্যান্ডেলে আইএইএ জানায়, ইরানি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র টিইএসএ কারাজ ও তেহরান রিসার্চ সেন্টারে হামলা হয়েছে। দুটি কেন্দ্রই একসময় আইএইএর নজরদারির আওতায় ছিল। এর আগে ইসরায়েলও তাদের রাতভর হামলায় ইরানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছিল। 

আইএইএ -এর বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, তেহরান রিসার্চ সেন্টারের একটি ভবনে হামলা হয়েছে। এখানে অ্যাডভান্সড লেভেলের সেন্ট্রিফিউজ রটরস উৎপাদন ও পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া কারাজে ইরান সেন্ট্রিফিউজ টেকনোলজি কোম্পানির (টিইএসএ) দুটি ভবন ধ্বংস হয়েছে। সেখানে সেন্ট্রিফিউজের বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদন করা হয়। দুটি স্থাপনাই এর আগে ইরানের পরমাণু চুক্তির আওতায় আইএইএ পর্যবেক্ষণ করেছিল। সেন্ট্রিফিউজ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত হয়, যা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি পরমাণু অস্ত্র তৈরিতেও দরকার।

এছাড়া ইরানের রাজধানী তেহরানের পূর্ব উপকণ্ঠে অবস্থিত ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়েও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার ইরানি সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, তেহরানের এই বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধরা হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক অধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস বলছে, ইরানজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১ হাজার ৩২৬ জন। খবর আল-জাজিরার। সংগঠনটি বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১২৬ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছে।

ইসরায়েলি হামলায় হতাহতের বিষয়ে সর্বশেষ সোমবার তথ্য জানিয়েছে ইরান সরকার। দেশটির সরকারি হিসাবে, নিহতের সংখ্যা ২২৪। আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন মানুষ।

চলমান সংঘাতে ইরান সরকার নিয়মিত হতাহতের তথ্য প্রকাশ করছে না। সবশেষ সরকারি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল গত সোমবার। সেই তথ্য অনুসারে, ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন মানুষ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসল ম ক র ভ ইসর য় ল র র বর ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের দিকে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান

ইসরায়েলের দিকে ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ-১ নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)। গত রাতে এ হামলা চালানো হয়।

সিএনএন জানিয়েছেন, ইরানের আধা-সরকারি মেহের সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে, ইরান ইসরায়েলের দিকে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

গত বছর, ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছিল, তেহরান ওই সময় ইসরায়েলে তাদের হামলায় নতুন ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।

২০২৩ সালে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করেন।

আইআরজিসি এই ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘ইসরায়েল বিধ্বংসী’ বলে উল্লেখ করেছে। এটি উন্মোচনের সময় ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বিশাল ব্যানার টাঙানো হয়েছিল, যেখানে হিব্রু ভাষায় লেখা ছিল: ‘৪০০ সেকেন্ডে তেল আবিবে।’

আইআরজিসি ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘হাইপারসনিক’ হিসেবে দাবি করলেও সামরিক বিশ্লেষকেরা এর প্রকৃত হাইপারসনিক সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

অতি উচ্চগতির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র অনেক সময় বর্তমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাড়া দেওয়ার আগেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং মাঝপথে দিক পরিবর্তন করতে পারে।

অতি উচ্চগতির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে এমন গতিতে আঘাত হানতে পারে যে, বর্তমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা প্রতিহত করতে পারে না। এমনকি সাড়া দেওয়ার আগেই তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান থেকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
  • ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে: আইডিএফ
  • ইরানিরা কোনো হুমকিকে পরোয়া করে না: খামেনি
  • ইরাকের সেই সাজানো গল্প এবার ইরানেও
  • ইরানের দুটি সেন্ট্রিফিউজ স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা: আইএইএ
  • প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রে ঘাটতির মুখে ইসরায়েল: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
  • ইসরায়েলের আকাশ ইরানের ‘সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে’: আইআরজিসি
  • ইসরায়েলের দিকে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান
  • জরুরি বৈঠকে বসছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা