ইসরায়েলে এবার ‘সেজ্জিল’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান: সিএনএন
Published: 19th, June 2025 GMT
ইসরায়েল লক্ষ্য করে এবার মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) বরাতে এ খবর দিয়েছে সিএনএন।
বুধবার রাতে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের দিকে সেজ্জিল-২ কঠিন জ্বালানিযুক্ত মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
ট্রু প্রমিজ-৩-এর অংশ হিসেবে ১৩তম বার অতি ভারী, দীর্ঘ পাল্লার, সেজ্জিল-২ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের মাধ্যমে শুরু হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
এর আগে ইসরায়েল লক্ষ্য করে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইরানের দাবি, ‘ফাত্তাহ’ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন করে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের নিজস্ব। দেশটি দাবি করেছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সীমানা অতিক্রম করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে।
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো হামলার কথা স্বীকার করেনি।
ইসরায়েল ইরানে প্রথম হামলা চালানোর পর ছয় দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।
এর আগে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিবৃতির বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছে। ইরানের ইসলামিক রিভ্যলিউশনারি গার্ড বলেছে, তেহরানের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলীয় শহরতলীতে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের সংবাদমাধ্যম বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে খবর দিয়েছে। বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, উত্তর পূর্ব তেহরানে বিস্ফোরণের পর ধোঁয়া উড়ছে।
কিছু সূত্র বলছে, তেহরানের লাভিজান এলাকাতেও বিমান হামলা হয়েছে। নিউজ সাইট তাবনাক বলছে, তেহরানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ ছাড়াও কারাজের বিভিন্ন এলাকায় হামলা করছে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরানের দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র ইসরায়েলি হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। সেন্ট্রিফিউজ সিস্টেম ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বুধবার এক্স হ্যান্ডেলে আইএইএ জানায়, ইরানি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র টিইএসএ কারাজ ও তেহরান রিসার্চ সেন্টারে হামলা হয়েছে। দুটি কেন্দ্রই একসময় আইএইএর নজরদারির আওতায় ছিল। এর আগে ইসরায়েলও তাদের রাতভর হামলায় ইরানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছিল।
আইএইএ -এর বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, তেহরান রিসার্চ সেন্টারের একটি ভবনে হামলা হয়েছে। এখানে অ্যাডভান্সড লেভেলের সেন্ট্রিফিউজ রটরস উৎপাদন ও পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া কারাজে ইরান সেন্ট্রিফিউজ টেকনোলজি কোম্পানির (টিইএসএ) দুটি ভবন ধ্বংস হয়েছে। সেখানে সেন্ট্রিফিউজের বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদন করা হয়। দুটি স্থাপনাই এর আগে ইরানের পরমাণু চুক্তির আওতায় আইএইএ পর্যবেক্ষণ করেছিল। সেন্ট্রিফিউজ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত হয়, যা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি পরমাণু অস্ত্র তৈরিতেও দরকার।
এছাড়া ইরানের রাজধানী তেহরানের পূর্ব উপকণ্ঠে অবস্থিত ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়েও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার ইরানি সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, তেহরানের এই বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধরা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক অধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস বলছে, ইরানজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১ হাজার ৩২৬ জন। খবর আল-জাজিরার। সংগঠনটি বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১২৬ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছে।
ইসরায়েলি হামলায় হতাহতের বিষয়ে সর্বশেষ সোমবার তথ্য জানিয়েছে ইরান সরকার। দেশটির সরকারি হিসাবে, নিহতের সংখ্যা ২২৪। আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন মানুষ।
চলমান সংঘাতে ইরান সরকার নিয়মিত হতাহতের তথ্য প্রকাশ করছে না। সবশেষ সরকারি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল গত সোমবার। সেই তথ্য অনুসারে, ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন মানুষ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসল ম ক র ভ ইসর য় ল র র বর ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ সনদ প্রকাশ উচিত নয়
প্রথমত যে বিষয়টিতে আমি গুরুত্ব দিতে চাই, সেটি হলো ঐকমত্য কমিশন কিছু সংস্কার প্রস্তাব ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ (ভিন্নমত) গ্রহণ করছে। আমি এটি সমর্থন করি না। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (গত নভেম্বরে) বলেছিলেন, তাঁরা মূলত ফ্যাসিলিটেটরের (এগিয়ে নিতে সহায়তাকারী) ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর ভাষায়, যতটুকু সংস্কারে সবাই একমত হবেন, ততটুকুই বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হবে। তিনি সংখ্যার উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, যদি ১০০টি প্রস্তাব আসে, আর সব দলের সম্মতি মেলে মাত্র ১০টির ক্ষেত্রে, তাহলে কেবল সেই ১০টি বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হবে, বাকিগুলো নয়।
আমি মনে করি, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা উচিত নয়; বরং যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য রয়েছে, কেবল সেগুলো নিয়েই জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়া উচিত।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, বিএনপি যেসব প্রস্তাবের ব্যাপারে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। ফলে ভবিষ্যতে তারা যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে সেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই। কারণ, তারা আগেভাগেই আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে। সুতরাং এই প্রক্রিয়ায় জুলাই সনদ হওয়ার মানে, আমার কাছে মনে হয় সরকার কোনো একটি পক্ষকে খুশি করার কৌশল হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
গণতন্ত্রে সংখ্যার কথা বলা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবও বিবেচনায় রাখা উচিত। শুধু বিএনপি নয়, জামায়াতে ইসলামী বা জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) যদি কোনো প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নেয়, তবে সেগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত না করাই শ্রেয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নোট অব ডিসেন্টসহ জুলাই সনদ প্রকাশ করা উচিত নয়।
যে উদ্দেশ্যে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি সেটির সঙ্গে সহমত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) উচ্চকক্ষ গঠনের যে ভাবনা, তাতে ভারসাম্য রক্ষার সুযোগ ছিল। আমি সেই প্রস্তাবের পক্ষে। তবে আমি নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির ঘোরতর বিরোধী।
অবশ্য সবকিছু ছাপিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমে কিছু বিষয় আমাকে যথেষ্ট সন্তুষ্ট করেছে। প্রথমত, কমিশনের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অকল্পনীয় মাত্রায় খোলামেলা বিতর্ক হয়েছে। তাঁরা একসঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেশ পরিচালনার কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেছেন, এটা বড় অগ্রগতি। দ্বিতীয়ত, বিএনপির অবস্থানও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তারা যেসব প্রস্তাব মানেনি, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। সমালোচনা হবে জেনেও তারা যেটা করবে না, সে বিষয়ে কথা দেয়নি। বিএনপি উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি, সংবিধান ও কমিশনসংক্রান্ত কিছু বিষয়ে একমত হয়নি এবং তা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে। আমি এটিকে সৎ অবস্থান মনে করি। অতীতে কোনো প্রস্তাবে সম্মতি দিলেও পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় গিয়ে তা পালন না করার প্রবণতা দেখা গেছে।
এ ছাড়া বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে পৃথক্করণের বিষয়ে সব দল রাজি হয়েছে। এটা একটা অসাধারণ অর্জন। সরকারের সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত পৃথক সচিবালয় হবে, হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় পর্যায়ে যাবে, নিম্ন আদালত উপজেলায় যাবে—এগুলোতে সবাই একমত হয়েছে, এগুলো অবিশ্বাস্য অর্জন।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়েও মোটামুটি সবাই একটি জায়গায় পৌঁছেছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের হাত থেকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলার বিষয়ে রাজি হওয়া, কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে না পারার সিদ্ধান্ত—এগুলো খুবই মৌলিক সংস্কার। সব মিলিয়ে যতটুকু একমত হওয়া গেছে তা যথেষ্ট।
জাহেদ উর রহমান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
(মতামত লেখকের নিজস্ব)