ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি নাকি অমিত শাহ, প্রশ্ন মমতার
Published: 19th, June 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, দেশটা (ভারত) কে চালাচ্ছে? আমি জানি না। এই কে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাকি অমিত শাহ? মোদিজি তো বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ান। আর সব ছেড়ে দিয়েছেন অমিত শাহের হাতে। তাহলে ওনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দিলেই হয়। উনিই তো (অমিত শাহ) বকলমে দেশ চালাচ্ছেন।
বুধবার রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালন কর্মসূচির বিরোধিতা করে এসব কথা বলেন তিনি।
ভারতে জরুরি অবস্থার (সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলে ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয়) ৫০ বছর উপলক্ষে আগামী ২৫ জুন ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। সেই অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছে একটি চিঠিও এসেছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের কাছে সেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারই তীব্র বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের কোনো দিবস পশ্চিমবঙ্গ সরকার পালন করবে না। এতে আমরা আপত্তি আছে।
মমতার অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের নেতারা যা বলছেন, উনি তাই করছেন, কোনো সিস্টেম মানছেন না। সব সিস্টেম ভেঙে দিয়েছেন। ওরা মানুষের ইজ্জত নিয়ে খেলছে। আর এখন সংবিধান হত্যা দিবস পালন করবে।
তিনি বলেন, ওরা ওদের মতো ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালন করুক। আমরা সেটা পালন করছি না। ওরা (বিজেপি) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে না, গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা, সামাজিক অধিকার, বিরোধীদের অধিকারকে বিশ্বাস করে না। তারা একটার পর একটা জিনিস বদলে দিয়েছে। এক দেশ এক নির্বাচনের কথা বলছে, কোথাও রাজ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিল আনা হচ্ছে, কখনো নোট বদলের বিল আনা হচ্ছে, কখনো রাজ্যপালদের রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। তাই শুধু একটি দিনকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার তাদের কোনো অধিকারই নেই। আমাদের প্রতিদিনই সেটা পালন করতে হবে।
এই ইস্যুতে ‘বাংলা দিবস’ পালন এবং বাংলার নামকরণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ইঙ্গিত করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, আগামী ২০ জুন প্রতিটি রাজ্যের রাজভবনে ‘বাংলা দিবস’ পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত দুই বছর ধরে ১ বৈশাখ বাংলা দিবস হিসেবে পালন করছি। বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস বাংলা ঠিক করবে নাতো আপনারা করবেন? বিজেপির ইচ্ছামতো চাপিয়ে দেওয়া জিনিস কেন মানা হবে? আমরা মনে করি এটা বাংলাকে অসম্মান করা, অপমান করা। তারা ঠিক করবে যে বাংলা কী খাবে, কী পড়বে? এমনকি বাংলার নামটা নিয়েও আলফাবেটিক্যালি আমাদের সবার শেষে পড়ে থাকতে হয়। যদি মুম্বাই নাম পরিবর্তনে হতে পারে, যদি ওড়িশা নাম পরিবর্তন হতে পারে, তবে বাংলা নয় কেন? আমরা তিনবার বিল আমেন্ডমেন্ট করে পাঠিয়েছি। তাহলে ‘বাংলা’র নামটা দিতে আপত্তি কোথায়?
তিনি আরও বলেন, আমরা তো বাংলাদেশ চাইনি, বাংলাদেশ আলাদা একটা রাষ্ট্র। তারা তাদের মতো স্বাধীন দেশ। কিন্তু ভারতের মধ্যে ‘বাংলা’ রাজ্য পড়ে। পাকিস্তানের যদি পাঞ্জাব থাকতে পারে, তবে গোটা ভারতে কি ‘বাংলা’ নামে একটা রাজ্য থাকতে পারে না?
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব ধ ন হত য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে নির্মাণ হবে গণমিনার
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণপ্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের স্মরণে সর্বস্তরের নাগরিক উদ্যোগে রাজধানীতে নির্মাণ করা হবে ‘গণমিনার’। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে ‘গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি এসব তথ্য জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও স্থপতি কামার আহমাদ সাইমনসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা জানান, গণমিনারের স্থান হিসেবে বীর উত্তম মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান রোড ও বিজয় সরণির মধ্যবর্তী সবুজ চত্বরকে নির্বাচন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এরই মধ্যে গণমিনার নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ, অর্থ ও প্রকৌশল সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে জাতিসংঘ স্বীকৃত (গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে) ১ হাজার ৪০০ শহীদের নাম ও পরিচিতি গণমিনারে খোদাই করে সংরক্ষণ করা হবে।
গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কমিটিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হচ্ছেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক এ নাগরিক উদ্যোগটির লক্ষ্য, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং শহীদদের স্মৃতিকে স্মারকরূপে সংরক্ষণ করা; যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মানুষের আত্মত্যাগ ও প্রতিরোধের চেতনা সঞ্চারিত হয়।
বক্তারা বলেন, জুলাই ২০২৪ ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে আপামর জনগণ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন, আহত হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন। জুলাই গণপ্রতিরোধে জাতির প্রতিবাদী সত্তার স্ফুরণ ঘটে। সেই সত্যকে স্মরণে রাখতে গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি একটি স্থায়ী স্মারক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আরও জানানো হয়, এই ভূখণ্ডে গত ২৫০ বছরের প্রতিরোধ ও লড়াইয়ের ইতিহাসের চিত্রও গণমিনারে তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। এই গণমিনার হবে এমন এক স্মরণস্থল, যা রাজনৈতিক বিভাজন অতিক্রম করে সব মত ও পথের মানুষের সম্মিলিত গণ–উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হবে। গণমিনার বাস্তবায়নে গণমানুষের সম্পৃক্ততার লক্ষ্যে গণচাঁদা সংগ্রহেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের প্রভাষক অলিউর সান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক অলিক মৃ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, কবি ও লেখক আলতাফ শাহনেওয়াজ, লেখক ও গবেষক ইলিরা দেওয়ানসহ আরও অনেকে।