চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। আয় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৯১টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের সংক্ষিপ্তসার থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ প্রকাশিত এই বাজেট সংক্ষিপ্তসার অনুসারে, আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ১৮ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫ লাখ ১০ হাজার ৩৩১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। অর্থাৎ চলতি মূল বাজেটের চেয়ে আগামী অর্থবছর এ খাতে বাড়তি প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা আয় করতে চায় সরকার। 
আয় বাড়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়ের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে আনা হয় ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকায়। 
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৬৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে বলে প্রত্যাশা করছে সরকার। বিপরীতে আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিনিয়োগ ধরা হয় ৩৩ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ ধরা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ৪৪ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয় ৪১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরকারি কোষাগারে মোট কী পরিমাণ অবদান রাখবে তারও একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরকারি কোষাগারে মোট ৪৯ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা জমা হবে বলে আশা করছে সরকার। এর মধ্যে উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে ৩ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা মিলবে। এছাড়া লভ্যাংশ বাবদ এক হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ৪৬ হাজার ৩২১ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।
এ সম্পর্কিত বাজেট ডকুমেন্টে বলা হয়, বাংলাদেশের অ-আর্থিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনীতিতে বহুমাত্রিকভাবে অবদান রেখে চলেছে। এ সব প্রতিষ্ঠান শিল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষি, পরিবহন খাতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সরকারকে সহায়তা করে থাকে। এদের মাধ্যমে সরকার মৌলিক সেবা ও পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক। রাষ্ট্রায়ত্ত অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কৌশলগত খাতের নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
এতে বলা হয়, সংস্থাগুলো হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং আঞ্চলিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে অবদান রাখে। যদিও কিছু প্রতিষ্ঠান লোকসানে পরিচালিত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকার দক্ষ ব্যবস্থাপনা, আর্থিক সংস্কার ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক ও টেকসই করতে উদ্যোগ নিচ্ছে। সার্বিকভাবে, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক কল্যাণে একটি অপরিহার্য অংশীদার। অর্থবিভাগ থেকে প্রতিবছর রাষ্ট্রায়ত্ত অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট প্রকাশ করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অ-আর্থিক ৯১টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের (৭২টি এসএবিআরই প্লাস শীর্ষক অনলাইন ডেটাবেজের আওতায়, ১৯টি অফলাইন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ানোর জন্য অপচয় কমানোর পাশাপাশি ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। এ জন্য এতদিন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো ব্যয় করে এলেও এবারই প্রথম ৭২টি প্রতিষ্ঠানকে এসএবিআরইপ্লাস শীর্ষক অনলাইন ডেটাবেজের আওতায় এনে ব্যয়ের বিষয়টি সরকারের নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র অ আর থ ক আয় ব ড় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কমলা-মাল্টা-লেবুতে সম্ভাবনার সুবাস

কমলা, লেবু কিংবা মাল্টা– এই লেবুজাতীয় ফলের চাহিদা অনেক বেশি। আগে এসব ফলের বড় অংশ আসত বিদেশ থেকে। রসালো আর পুষ্টিকর এ ফল এখন দেশেই চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। উৎপাদন বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে কৃষকের আয়। এই পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্প।

প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৯ সালে। উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় আবহাওয়ায় মানানসই উন্নত জাতের লেবুজাতীয় ফলের চাষ বাড়ানো, আমদানি-নির্ভরতা কমানো এবং পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল আরও বড় লক্ষ্য– কৃষিকে বহুমুখীকরণ, বিকল্প ফসলের মাধ্যমে কৃষকের আয়ের পথ বাড়ানো এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টির সুযোগ তৈরি। 
দেশের ৩০ জেলার ১২৩ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ বছর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রকল্পটি ইতোমধ্যে ফলদ বাগান বিস্তারে দৃশ্যমান সাফল্য এনে দিয়েছে। বাড়ছে উৎপাদন, বাজারে সরবরাহ হচ্ছে দেশীয় লেবু, আর উপকৃত হচ্ছেন হাজারো কৃষক।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, দেশীয় আবহাওয়ায় মানানসই ও চাহিদাসম্পন্ন লেবুজাতীয় ফলের চাষ কৃষিকে বহুমাত্রিক সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশ শুধু লেবুজাতীয় ফলের উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লেবুজাতীয় ফলের উৎপাদন ২৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রকল্প এলাকায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৯০ টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৩৮০ টন। আবাদ এলাকা বেড়েছে পাঁচ হাজার হেক্টর। প্রকল্পের আওতায় ৬৫ হাজার ২৮০ কৃষককে প্রশিক্ষণ ও চারা-উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। তাদের আধুনিক ফলচাষ, রোগ ব্যবস্থাপনা, সংগ্রহোত্তর সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ পদ্ধতি শেখানো হয়েছে। লেবুচাষিদের কাছে মানসম্মত চারা পৌঁছে দিতে এ প্রকল্পের আওতায় ২০টি হর্টিকালচার সেন্টারে মাতৃবাগান স্থাপন করা হয়েছে এবং চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। কৃষকরা যে কোনো সময়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত জাত নিকটস্থ হর্টিকালচার সেন্টার থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।

লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক ফারুক আহমদ বলেন, এখন দেশে উৎপাদিত কমলা, মাল্টা ও লেবু বাজারে নিয়মিত মিলছে। মানুষের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর ও রসালো লেবুজাতীয় ফলের ব্যবহার বাড়ছে। কৃষকের জীবনেও আসছে পরিবর্তন। সরকারের উদ্যোগ ও কৃষকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় লেবুজাতীয় ফল সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষা নিয়ে নাগরিকদের উদ্বেগ আমলে নিন
  • বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩%
  • জনস্বাস্থ্যবিরোধী বাজেট: সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তর একত্র করার দাবি
  • বাজেট: করদাতার ঘাড়ের বোঝা বাড়বে নাকি কমবে
  • ২ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
  • কমলা-মাল্টা-লেবুতে সম্ভাবনার সুবাস
  • লিফটের ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহারের দাবি বেলিয়ার
  • লিফটের ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহারের দাবি
  • স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ৯ মাসে লোকসান কমেছে ১৯.৭৯ শতাংশ