চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পালি বিভাগের অফিস সহকারী মেহেদী হাসানকে ঘুষ লেনদেন ও প্রতারণার অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহাইব কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড.

সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ এবং প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

অভিযোগকারী মুহাম্মদ ইয়াহিয়া, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট সেকশন অফিসার পদে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান তার কাছ থেকে প্রথমে চার লাখ এবং পরে আরও এক লাখ টাকা নেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি না হওয়ায় একপর্যায়ে অভিযুক্ত তিন লাখ টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, চাকরির বিষয়ে অগ্রগতি জানতে রেজিস্ট্রার দপ্তরে গেলে ছাত্ররাজনীতির একটি অংশের নেতাকর্মীরা তার রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চান এবং অর্থ দাবি করেন। অর্থ না দেওয়ায় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলেও দাবি করেন ইয়াহিয়া। বিষয়টি নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান সমকালকে বলেন, ‘আমি আসলে অর্ডারে কাজগুলো করেছি। ভিসি ম্যামের পিএস আমাকে যা নির্দেশ দিতেন, আমি তা পালন করতাম। আমি কখনো নিজ উদ্যোগে কাউকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিইনি।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ক্ষমতাধর মহলের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের আশ্রয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন এমন অভিযোগ অতীতে একাধিকবার মৌখিকভাবে উঠলেও লিখিত অভিযোগ এবারই প্রথম পাওয়া গেছে।

তবে এ ঘটনায় আরেকটি প্রশ্ন সামনে এসেছে, চাকরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘুষ প্রদানকারী অভিযোগকারী নিজেও কি দায়মুক্ত থাকতে পারেন? নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছায় অর্থ লেনদেনে জড়িয়ে পড়া এক ধরনের অনৈতিকতা ও নীতিগত বিচ্যুতি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তদন্ত কেবল গ্রহীতার বিরুদ্ধেই নয়, বরং প্রক্রিয়ায় জড়িত উভয় পক্ষের ভূমিকাই পর্যবেক্ষণে থাকা উচিত। 

বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. কালাম উদ্দিন সমকালকে জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত বিবেচনায় আনা হতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ 

নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুর এলাকায় লারিজ ফ্যাশনের পোশাক কারখানায় অসুস্থ হয়ে রিনা আক্তার (৩২) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে তারা মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, রিনা আক্তার অসুস্থ অবস্থায় কারখানায় কাজ করছিলেন। রোববার তিনি বেশি অসুস্থতা অনুভব করলে ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। তবে, কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকের আবেদনে সাড়া না দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করেন। ওই নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে সহকর্মীরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অবরোধকারী শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। রিনা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন তিনি। 

লারিজ ফ্যাশনের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদেরকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে লারিজ ফ্যাশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শিমুল বলেছেন, আমাদের একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয়। এতে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেছেন, সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য গার্মেন্টস মালিকপক্ষ দায়ী, এমন অভিযোগ করে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও আছে। শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেছেন। যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

ঢাকা/অনিক/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ