লালনসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তাঁর সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিল্পী ফরিদা পারভীনকে দেখার পর সাংবাদিকদের মাধ্যমে এ আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, লালনসংগীতে ফরিদা পারভীন অদ্বিতীয় এবং গোটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে লালনসংগীতের প্রিয় শিল্পী তিনি। দীর্ঘদিন ধরে সংগীতের জগতে তাঁর যে একচ্ছত্র প্রভাব, সেটা তিনি অক্ষুণ্ন রেখেছেন। তিনি অসুস্থ হয়ে এখানে এসেছেন অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায়। তাঁর অবস্থা বেশ জটিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকেরা তাঁর যথেষ্ট যত্ন নিচ্ছেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ রকম একজন গুণী শিল্পী, যিনি বিশ্বে সমাদৃত; তাঁর চিকিৎসার জন্য স্পেশাল বোর্ড গঠন করা উচিত। বোর্ড গঠন করে তাঁর সর্বোচ্চ চিকিৎসা বিদেশে দরকার হলে, তার ব্যবস্থা করতে হবে, এটা জাতি চায়। তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব প্রধান উপদেষ্টাকে যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নেবেন, তাঁর সর্বোচ্চ চিকিৎসা যাতে সম্ভব হয়।’

৫ জুলাই সকালে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজে অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর শিল্পী ফরিদা পারভীনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ৭০ বছর বয়সী এই শিল্পী কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।

বিএনপির মহাসচিব শিল্পীর শয্যার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চিকিৎসকদের কাছ থেকে তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং করণীয় জানতে চান।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, শিল্পী ফরিদা পারভীনের চিকিৎসার জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি শিল্পীর চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নিতে তাঁদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব শিল্পীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশেষ সহযোগিতা পৌঁছে দেন।

এ সময়ে বিএনপির সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক চলচ্চিত্র অভিনেতা আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল, সহ–সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক সাঈদ সোহরাব, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের সভাপতি হেলাল খান, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন (রোকন) উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনশ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ফরিদা পারভীন, কেমন আছেন এখন০৭ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব এনপ র ম ন উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প-নেতানিয়াহু দ্বিতীয় বৈঠকের পরও যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থগিত

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি নিয়ে কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া আলোচনা স্থগিত হয়ে গেছে। তিন দিন ধরে এ পরোক্ষ আলোচনা চলে। এতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রত্যাশা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবতার মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, যুদ্ধবিরতিকালে কীভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হবে এবং উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মতানৈক্য ছিল শেষ মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রে। 

গতকাল বুধবার ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি এসব তথ্য জানায়। এমন একসময়ে এ আলোচনা স্থগিত হলো, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় অনির্ধারিত বৈঠক হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, দোহা আলোচনায় তারা এখন ‘একটি’ অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা করছেন। তবে তিনি চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে চুক্তির আশা করছেন।

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে বৈঠকের চিত্র দেখে মনে হয়েছে, তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির দিকে এগোচ্ছেন। গতকাল বুধবার সকালে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানান, তাদের সর্বশেষ বৈঠকে ‘জিম্মি মুক্তির প্রচেষ্টার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল’। তিনি বলেন, ‘আমরা একমুহূর্তের জন্যও পিছু হটছি না। আমাদের বীর সেনাদের সামরিক চাপের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।’

ইসরায়েল বলছে, গাজায় এখনও হামাসের হাতে ৫০ জিম্মি বন্দি আছেন, যাদের মধ্যে ২০ জন এখনও জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। উইটকফ জানান, ইসরায়েল ও হামাস এমন বিষয়গুলোর ব্যবধান কমিয়ে আনছে, যা আগে তাদের একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে বাধা হয়েছিল। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন ঘনিষ্ঠ আলোচনায় আছি। আমাদের অনেকের চারটি বিষয় ছিল। এখন একটিতে নেমে এসেছি। সুতরাং আমরা আশাবাদী, এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ একটি চুক্তিতে পৌঁছাব, যা হবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি।’ তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা বুধবার বিবিসিকে বলেন, আলোচনা এখন স্থগিত রয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গাজায় মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধি দলের অস্বীকৃতির কারণেই এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 
ইসরায়েল ত্রাণ বিতরণের ‘চলমান অপমানজনক প্রক্রিয়া’ বজায় রাখার জন্য জোর দিচ্ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত কথিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে ত্রাণ দিতে চান। সশস্ত্র জিএইচএফকে স্বীকৃতি দেয়নি জাতিসংঘ। গত ২৭ মের পর এ পর্যন্ত তারা গুলি করে ত্রাণ নিতে আসা ৭৭৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ১০১ জন।

রক্তক্ষয়ী দিনে শতাধিক নিহত 

গতকাল বুধবার ছিল গাজায় অত্যন্ত ভয়ংকর একটি দিন। আলজাজিরা জানায়, এদিন ইসরায়েলের হামলায় ১০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন ৫৩০ জন। নিহতদের মধ্যে আট ত্রাণপ্রত্যাশীও আছেন। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৬৮০ জন নিহত ও ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪০৯ জন আহত হয়েছেন। 

জ্বালানি সংকটে হাসপাতালে মৃত্যু

গাজায় জ্বালানি প্রবেশ করতে না দেওয়ায় হাসপাতালে আহতদের নিয়মিত মৃত্যু ঘটছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় গাজায় জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ। গাজার একটি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মারওয়ান আল-হামস বলেন, অবরোধ অব্যাহত থাকলে ও জ্বালানি না এলে শত শত রোগীর মৃত্যু হতে পারে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ