ছবি: সুমন ইউসুফ

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সমস্যার পাশাপাশি বড় সম্ভাবনাও

মার্কিন শুল্ক ইস্যুতে আমার মত প্রায় সবার তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। আমি মনে করি না নতুন শুল্ককাঠামো কার্যকর হলেই আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে। বরং আপাতত কিছুটা সমস্যার সঙ্গে এ পদক্ষেপকে আমি বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে বড় সম্ভাবনা হিসেবেই দেখতে চাই।

স্রোতের বিপরীতে এ রকম কথার পক্ষে অনেক যুক্তি আছে। প্রথমত, বিআরআইসিএস অর্থাৎ, ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন। এতে ব্রিকসের সদস্য চীন ও ভারতের ওপর বিদ্যমান বা আগামীতে প্রযোজ্য শুল্কের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। ফলে চীনের শুল্কভার দাঁড়াবে ৬৫ শতাংশ। চীনের পক্ষে তৈরি পোশাক দিয়ে মার্কিন মুল্লুকে আর আধিপত্য করা সম্ভব হবে না।

এ ছাড়া দেশটি পোশাকের বাইরে বৈদ্যুতিক পণ্যসহ উচ্চ প্রযুক্তির অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে তাদের মনোযোগ ও বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। সেদিকেই তাদের মনোযোগ। তাহলে মার্কিন ক্রেতারা এতদিন চীনকে যে রপ্তানি আদেশ দিতেন, সেগুলো কোথায় দেবেন? জানা কথা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার সুবাদে ভিয়েতনাম বড় সুবিধা পাবে। তবে ভিয়েতনামের সক্ষমতারও একটা সীমা আছে। শ্রম মজুরি বেড়ে যাওয়ার কারণে চীনের মতোই তারাও পোশাক থেকে ক্রমে প্রযুক্তি পণ্যে গুরুত্ব দিচ্ছে। আবার তুলায় তৈরি বেশ কিছু পণ্যসহ অনেক পণ্যে ভিয়েতনামের চেয়ে আমাদের অবস্থান মজবুত। আমাদের মোটামুটি শক্তিশালী পশ্চাৎসংযোগ শিল্প আছে, যা ভিয়েতনামের নেই। ফলে চীনের সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছি আমরা।

এবার আসি অন্য প্রতিযোগী দেশ ভারতের কথায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের অনুষ্ঠেয় চুক্তি বা আলোচনায় শুল্ক হার যা-ই হোক, তার সঙ্গে ব্রিকসের কারণে আরও ১০ শতাংশ যুক্ত হবে, যা প্রতিযোগিতায় আমাদের এগিয়ে রাখবে। এ ছাড়া গত প্রায় ৫০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশের সৃজনশীল উদ্যোক্তাদের যে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা, তা প্রতিকূল সব পরিস্থিতিতে আমাদের একটা বাড়তি মূল্য সংযোজন হিসেবে কাজে দিয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।

তবে এ কথাও অস্বীকার করার জো নেই, আপাতত একটা ধাক্কা হয়তো আসতে পারে। বিশেষ করে ছোট কারখানা কিংবা যেসব কারখানা এককভাবে মার্কিন ব্র্যান্ড ক্রেতাদের জন্যই পণ্য উৎপাদন করে থাকে। কারণ, ওই সব ক্রেতা এখন দর কম দেওয়ার একটা সুযোগ নিতে চাইবেন। শুল্ক আরোপের প্রধান নায়ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে এ দেশের একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা– এ গোটা চক্রের মধ্যেই এখন একটা ‘মাইন্ড গেম’ চলছে। এখানে দরকষাকষিতে যে কৌশলী হবে, সে-ই জিতবে। এ পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিতে আমাদের দক্ষতা ও কার্যকর কৌশলের প্রয়োজন। 

আলোচনায় আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, তৈরি পোশাকের নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের মতো ভালো কোনো বিকল্প আর নেই। 

অনেকেই বলছেন, চীন, ভারত ও ভিয়েতনামের মতো আমাদের সরকার শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর আলোচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমি এর সঙ্গেও একমত নই। বাণিজ্যে আমাদের ‘আন্ডারডগ’ (যে দলের জেতার সম্ভাবনা নেই) অবস্থান থেকে দরকষাকষি করার মতো টুলস (বস্তু) তেমন কিছু নেই। আমাদের আমদানি-রপ্তানির যে প্যাটার্ন বা চরিত্র, সে অবস্থান থেকে একক যুক্তরাষ্ট্রকে বড় ধরনের শুল্ক সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। আরও উন্নয়ন সহযোগী কিংবা বাণিজ্য অংশীদার আছে আমাদের। তাদের বিষয়টিও মাথায় রাখার বিষয় ছিল।

রপ্তানিমুখী পোশাক তৈরিতে আমদানি করা তুলায় কোনো শুল্ক নেই। এর বাইরে আপনি ব্যবসায়ীদের কোনো দেশের পণ্য আনতে বাধ্য করতে পারেন না। তারা যেখানে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক মনে করবেন, সেখান থেকেই আমদানি করবেন।

মার্কিন তুলায় উৎপাদিত পোশাক অন্তত দেশটিতে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়ার কথা প্রায়ই ওঠে। কিন্তু আমি হিসাব করে দেখলাম, তা খুব লাভজনক হয় না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি সরকারের করার কিছু নেই? আমি মনে করি, সরকার সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে ব্যবসা বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ ও সেবাটা অন্তত নিশ্চিত করতে পারে। আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত যত প্রতিবন্ধকতা, তার অন্তত ৮০ শতাংশের জন্য এনবিআর দায়ী। এ ছাড়া ব্যাংক, বীমা সেবা ও গ্যাস-বিদ্যুৎ অবকাঠামো সহজ করে দিক সরকার। রপ্তানি বাণিজ্যের সব প্রতিকূলতা মসৃণ হবেই। 

ফজলে শামীম এহসান, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বিকেএমইএ

সম্পর্কিত নিবন্ধ