‘গুরু দক্ষিণা’ সিনেমার কথা মনে আছে? এ সিনেমায় জয়ন্ত চরিত্রে তাপস পাল গুরুর দেওয়া শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন, জীবনের কঠিন সময়েও তাঁর প্রতি দায়িত্ব ভুলে যাননি। বাস্তবেও এবার ঘটেছে তেমনই এক ঘটনা। এক সংগীতশিক্ষকের জীবনসংকটে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরই এক প্রাক্তন ছাত্রী।
সোহরাব হোসেন, গান শেখাচ্ছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে। বর্তমানে তিনি কিডনির জটিল রোগে ভুগছেন। তাঁকে বাঁচাতে প্রয়োজন কিডনি প্রতিস্থাপন। চিকিৎসার ব্যয় বিপুল। ঠিক তখনই জীবনের এই কঠিন সময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁর এক পুরোনো ছাত্রী।

প্রায় ২০ বছর আগে আশুগঞ্জ সার কারখানার আবাসিক এলাকায় আনিকা আফরিন ঐশীকে গান শেখাতেন সোহরাব হোসেন। সেই ছোট্ট ঐশী এখন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্রী। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুরুর অসুস্থতার খবর পেয়ে আর স্থির থাকতে পারেননি। সবকিছু গুছিয়ে ছুটে এসেছেন ঢাকায়। ঢাকার বাসায় গুরুকে এনে রেখেছেন, সেবা করছেন, চলছে চিকিৎসা।
প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় ঐশীর। জানান, শুধু তিনিই নন, তাঁর বড় ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীও সংগীতের তালিম নিয়েছেন সোহরাব হোসেনের কাছে। ঐশী বলেন, ‘সংগীতের প্রথম তালিম নিয়েছিলাম ওস্তাদজির কাছেই। আজ আমি যে জায়গায় পৌঁছেছি, তার পুরো কৃতিত্ব ওনার। তাঁর অসুস্থতার খবর জানার পর কিছুই ঠিকমতো করতে পারছিলাম না। উনি অনেক অসুস্থ। সবার কাছে তাঁর জন্য দোয়া ও আশীর্বাদ চাই। আমার ওস্তাদজি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।’

গুরুর অসুস্থতার খবর পেয়ে ঐশী ছুটে এসেছেন ঢাকায়.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আবু সাঈদের মৃত্যু বিশ্লেষণ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী

২০২৪ সালের ১৭ জুলাই। বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হলো এক তরুণের ছবি, যিনি দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর সামনে এক দল সশস্ত্র পুলিশ। কিছুক্ষণ পর তাদের ছোড়া গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ওই তরুণ। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ। ১৬ জুলাই তাঁর মৃত্যুতে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের মুখে একই স্লোগানের আওয়াজ ওঠে– ‘আমার ভাই মরলো কেন?’

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে প্রথম শহীদ আবু সাইদের মৃত্যুর এক বছর পর তাঁর স্মৃতি ও মৃত্যু ঘিরে তখন ওঠা নানা প্রশ্ন নিয়ে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।  শুক্রবার রাজধানীর পান্থপথে দৃকপাঠ ভবনে ‘বুক পেতেছি, গুলি কর: আবু সাঈদ হত্যার পাল্টা ফরেনসিক তদন্ত’ শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্র ও গবেষণালব্ধ ওই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিবরণীতে দাবি করা হয়েছিল, আবু সাঈদ প্রাণ হারিয়েছেন বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথর ও ‘অজ্ঞাত’ গুলিতে। কিন্তু এই ‘অজ্ঞাত’ ব্যাখ্যাকে ঘিরেই জন্ম নেয় বহু প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া। এরই ভিত্তিতে বাংলাদেশের দৃক পিকচার লাইব্রেরি এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেনসিক আর্কিটেকচার যৌথভাবে পরিচালনা করে একটি স্বাধীন ও বিকল্প ফরেনসিক তদন্ত। সেই তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে নির্মাণ হয়েছে এই প্রামাণ্যচিত্র ও প্রদর্শনী, যা আজ জনসমক্ষে উন্মোচন হয়। চলচ্চিত্র ও প্রদর্শনীতে ব্যবহার করা হয়েছে ফটোগ্রামেট্রি, স্যাটেলাইট চিত্র, হিট ম্যাপ, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার, ছবি ও ভিডিওর মিলিত বিশ্লেষণ। 

এতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার প্রদত্ত ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবের রয়েছে গুরুতর অমিল। নানা প্রযুক্তি ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যায়, আবু সাঈদের ওপর গুলি ছোড়ার পরিস্থিতি ছিল পূর্বপরিকল্পিত, যেখানে পুলিশের অবস্থান, গুলির দিক ও ঘটনার সময়কাল– সবই নির্দেশ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শক্তি প্রয়োগের দিকে। এমনকি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন গবেষকরা। এই ফরেনসিক প্রক্রিয়ায় ঘটনার নানা দিক খুলে যায় নতুন করে, যা শুধু একটি মৃত্যুর তদন্ত নয়, বরং সেই মৃত্যুর চারপাশে গড়ে ওঠা রাজনীতি, ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার প্রতিচ্ছবি। 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম। প্রিমিয়ার শোতে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। প্রিমিয়ার আয়োজনে আলোচনায় অংশ নেন ফরেনসিক আর্কিটেকচারের বিশেষায়িত গবেষক জুমানাহ বাওয়াজির, প্রযুক্তি গবেষক নিকোলাস অ্যালিস্টার মাস্টারটন, নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিল ও দৃকের নেটওয়ার্ক সমন্বয়ক পারভেজ আহমেদ রনি। আলোচনায় অংশ নেন এবং নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন ১৬ জুলাই আবু সাঈদের মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী দৈনিক কালের কণ্ঠের রংপুর অফিসের ফটোসাংবাদিক গোলজার রহমান আদর, এনটিভির ক্যামেরাম্যান আসাদুজ্জামান আরমান এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাওহিদুল হক সিয়াম। প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছেন এ এস এম রেজাউর রহমান।

সিয়াম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমি যেমন করে সাইদ ভাইয়ের মাথায় হাত রাখতে পেরেছিলাম লাঠিচার্জের সময় যেন তাঁর মাথায় আঘাত না লাগে, ঠিক তেমনি যদি গুলির সময়ও রক্ষা করতে পারতাম– বারবার আমার এই কথাই মনে হয় এখন।’

আয়োজকরা জানান, এ চলচ্চিত্র এবং প্রদর্শনীর সম্মিলিত আয়োজন একটি চিন্তাশীল অনুসন্ধানী প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, যা আবু সাঈদের মৃত্যু এবং এর চারপাশের রাজনৈতিক গতিবিধি সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ তৈরি করে। দর্শকদের জন্য প্রদর্শনীটি চলবে ২৬ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দৃকপাঠ ভবনের লেভেল-২-এ এটি দেখানো হবে।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ