মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার একটি চা বাগানের কাঁচা শৌচাগারে পড়ে যাওয়া এক তরুণকে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রাণ গেছে আরও তিনজনের। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরেকজন। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের ভারতের সীমানালাগোয়া হরিণছড়া চা বাগানে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। হতাহত সবাই ওই চা বাগানের শ্রমিকদের সন্তান।
মৃতদের মধ্যে এক কিশোর, দুই তরুণ ও এক যুবক রয়েছেন। তারা হলেন– উদয় পটনায়েকের ছেলে শ্রাবণ পটনায়েক (১৯) ও রানা পটনায়েক (১৭); জহরলাল রবিদাসের ছেলে কৃষ্ণ রবিদাস (২০) ও লক্ষ্মীন্দর ফুলমালির ছেলে নৃপেণ ফুলমালি (২৭)।
হরিণছড়া চা বাগান পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক সুশীল বুনার্জির ভাষ্য, ওই বাগানের উত্তর লাইনে অবস্থিত শৌচাগারে রাত সাড়ে ১০টার পর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যান শ্রাবণ। বৃষ্টির কারণে শৌচাগারের আশপাশের মাটি সরে গিয়েছিল। এ সময় কাঁচা শৌচাগারটি ধসে যায়। এ সময় শ্রাবণের ভাই রানা তাঁকে তুলতে গেলে তিনিও ভেতরে পড়ে যান। তখন প্রতিবেশী নৃপেণ ফুলমালি ও কৃষ্ণ রবিদাস তাদের উদ্ধারে যান। ভেতরে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় তারাও বের হতে পারেননি। এ সময় আরেক প্রতিবেশী রবি বুনার্জি চারজনকে উদ্ধারে গিয়ে গর্তের মুখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কিছুক্ষণ পর এলাকাবাসী সবাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মোবাইল ফোনেই বিপত্তির শুরু
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শ্রাবণ ও রানার বড় ভাই দুলাল পটনায়েক (৩০) জানান, বুধবার রাতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ছিল। রাতের খাবার শেষে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে কাঁচা শৌচাগারে যান তাঁর ভাই শ্রাবণ। এক রিঙের শৌচাগারে বসে মোবাইল ফোনে তিনি গেম খেলছিলেন। অসাবধানে মোবাইল ফোনটি নিচে পড়ে যায়। সেটি ওঠাতে স্ল্যাব সরিয়ে পানকাটার সিঁড়ি নামান শ্রাবণ। এ সময় ৫-৬ ফুট গভীরে পড়ে যান। তাঁর চিৎকার শুনে ছোট ভাই রানা তাঁকে উদ্ধারে গিয়ে তিনিও পড়ে যান। প্রতিবেশী নৃপেণ ফুলমালি, কৃষ্ণ রবিদাস ও রবি বুনার্জি তাদের উদ্ধারে যান। তাদের মধ্যে নৃপেণ ও কৃষ্ণের ভাগ্যেও একই পরিণতি ঘটে। রবি কিছু ধরে ঝুলে ছিলেন। চা বাগানের উত্তর লেবার লেনের সঞ্জয় ভূমিজসহ অন্যরা তাদের উদ্ধারে আসেন। তারা কেরোসিন ছিটিয়ে ও পান কাটার মইয়ের মাধ্যমে পাঁচজনকে তুলে আনেন।
ফিনলে কোম্পানির আওতাধীন হরিণছড়া চা বাগানটি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে আনুমানিক ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দুর্গম এই পাহাড়ি এলাকার ওপাশেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। দুর্গম ওই এলাকা থেকে পাঁচজনকে হাসপাতালে নিতে দেরি হয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শুরুতে তাদের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মৌলভীবাজার হাসপাতালের আরএমও ডা.
আলতা মোছার আগেই স্বামীহারা
হরিণছড়া চা বাগানের শ্রমিক উদয় পটনায়েক-রিনা পটনায়েকের চার ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের মধ্যে দু’জনকে হারিয়ে ফেলেছেন এই দম্পতি। এ ঘটনার পর কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন উদয়-রিনা। আরও বড় দুর্বিপাক ঘিরে ধরেছে শ্রাবণের সদ্যবিবাহিত স্ত্রী মনি পটনায়েককে (১৮)।
দুলাল জানিয়েছেন, তাঁর ছোট ভাই শ্রাবণের সঙ্গে মনির বিয়ে হয়েছে দুই মাসও পার হয়নি। এখনও রয়ে গেছে এই তরুণীর হাতে বিয়ের সময় পরানো আলতা। বিলাপ করতে করতে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন মনি। মা-বাবা আর ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা দুলালের জানা নেই।
এক পরিবারের একাধিক সদস্যকে চা বাগানের কাজে না নেওয়ার অলিখিত নিয়ম রয়েছে। যে কারণে শ্রাবণ এই বাগানে কাজ করতেন অস্থায়ী হিসেবে। মূলত কীর্তন দলের সঙ্গেই ঘুরতেন। গান-বাজনায় আগ্রহ ছিল তাঁর বেশি। চারজনের মৃত্যুতে এলাকার মানুষ শোকাহত। এসব তথ্য জানিয়ে রাজঘাট ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অজয় ভূমিজ বলেন, জোয়ান জোয়ান চার-চারটি মানুষ মরে গেছে। তাদের পরিবার শুধু নয়, পুরো বাগানে এখন শোকের ছায়া। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তারা মরদেহ নিতে এসেছেন।
পঞ্চায়েত নেতা সুশীল বুনার্জি জানিয়েছেন, শোকাহত চা শ্রমিকরা বুধবার কর্মবিরতি পালন করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মরদেহ নিয়ে যাবেন। পরে ধর্মীয় বিধিবিধান মেলে হরিণছড়া এলাকায় আয়োজন করা হবে শেষকৃত্যের।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাত দেড়টার দিকে তারা সেপটিক ট্যাঙ্কে পড়ে চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন। এ বিষয়ে তদন্তের পরই প্রকৃত কারণ বলা যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই চারজনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাত ৯টার দিকে দুলাল পটনায়েক জানিয়েছেন, তারা লাশ নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা হয়েছেন।
মৌলভীবাজার হাসপাতালের আরএমও ডা. আহমদ ফয়সল জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্বজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের লাশ সন্ধ্যা সাতটার দিকে হস্তান্তর করেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পটন য় ক চ রজন র রব দ স এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
অজিতের পারিশ্রমিক ২৪১ কোটি টাকা!
ভারতের তামিল সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা অজিত কুমার। ভক্তদের কাছে তিনি থালা অজিত নামেই পরিচিত। গত ১০ এপ্রিল মুক্তি পায় তার অভিনীত ‘গুড ব্যাড আগলি’ সিনেমা। মুক্তির পর বক্স অফিসে বেশ সাড়া ফেলেছিল এটি। এরই মাঝে গুঞ্জন উড়ছে, পারিশ্রমিক বাড়াতে যাচ্ছেন অজিত।
পিঙ্কভিলা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অজিত কুমারের পরবর্তী সিনেমা ‘একে৬৪’। এখনো সিনেমাটির নাম চূড়ান্ত হয়নি। গুঞ্জন অনুযায়ী, এ সিনেমার জন্য অজিত কুমার তার পারিশ্রমিক ১৫০ কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে ১৭৫ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০৭-২৪১ কোটি টাকার বেশি) করতে পারেন।
আরো পড়ুন:
মুক্তির আগেই কত টাকা আয় করল ‘কানতারা টু’?
আমি খুব কেঁদেছিলাম: মোহিনী
অজিত কুমার মনে করেন—‘সাধারণ গল্পের সিনেমাকেও রাজকীয়ভাবে উপস্থাপন করা উচিত।’ এই কারণে, সিনেমাটির বাজেট সম্ভবত ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি রুপির মধ্যে হতে পারে। তবে অজিতের টিমের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।
‘গুড ব্যাড আগলি’ সিনেমা নির্মাণ করেন পরিচালক আধিক রবিচন্দ্রন। ‘একে৬৪’ সিনেমাও তারই নির্মাণের কথা রয়েছে। রেসিং সিজনের বিরতিতে সিনেমাটির শুটিং শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কারণ অজিত কুমার তখন তার সিনেমার দিকেই সম্পূর্ণ মনোযোগ দেবেন। শোনা যাচ্ছে, এই সিনেমা সব ধরণের দর্শকদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হবে, যেখানে ‘গুড ব্যাড আগলি’ কেবল অজিত ভক্তদের কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছিল।
ঢাকা/শান্ত