অদম্য ইচ্ছেশক্তি ও মনোবল থাকলে স্বপ্ন জয়ের পথে সব বাধা পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। স্বপ্ন জয়ে সেই সম্ভাবনার পথেই হাঁটছেন বাবলি খাতুন। গার্মেন্টসে চাকরির পাশাপাশি তিনি পড়াশোনা করছেন। জীবিকার প্রয়োজনে, পড়াশোনা ভুলে বা জীবনের চরম বাস্তবতা মেনে নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পে সামান্য মজুরির বিনিময়ে যেসব নারী কাজ করেন, এক পর্যায়ে তারা হারিয়ে ফেলেন আত্মবিশ্বাস। তাদের জন্য বাবলি খাতুন হতে পারেন অনুপ্রেরণা। 

বাবলি খাতুনের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলায়। তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার নীট এশিয়া লিমিটেড কারখানার সুয়িং সেকশনে কাজ করছেন। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে স্নাতক পড়ছেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগে। 

বাবলি খাতুন সারাদিন গার্মেন্টসে কাজ করে বাসায় ফেরেন রাতে। এরপর শুরু হয় লেখাপড়া। হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার পরেও শিক্ষকের কাছে পড়ার সময় মেলে না। সময় মিললেও নেই অর্থ। ইউটিউবে টিউটরিয়াল দেখে এবং নোট খুঁজে চেষ্টা করেন সমাধান। পরীক্ষার আগে কারখানা থেকে ছুটি নিয়ে চলে যান সিরাজগঞ্জ। পরীক্ষা শেষে যোগ দেন কাজে। এভাবেই চলছে।  

বাবার ব্যবসায় ঋণ হওয়ায় বাবলি এইচএসসি পরীক্ষার পর পরিবার নিয়ে চলে আসেন গাজীপুরে। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ভালো বাবলি চান মাস্টার্সটা অন্তত শেষ করতে। তিনি বলেন, ‘‘গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের প্রাণ। এখানে লাখ লাখ নারী শ্রমিক কাজ করেন। তারা সবাই সাধারণ শ্রমিক হিসাবে বছরের পর বছর কাজ করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবে মনোবল হারিয়ে ফেলেন। ফলে অভিজ্ঞতা থাকলেও তারা যোগ্য স্থানে যেতে পারেন না, নেতৃত্ব দিতে চান না। এ জন্য নারীদের উচ্চশিক্ষা খুব প্রয়োজন। এসব চিন্তা করেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ 

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার মতো অনেক নারী গার্মেন্টসে কাজ করতে আসেন। তবে তারা কাজের প্রেসারে এবং মনোবল না থাকায় আর পড়াশোনা করেন না। তবে চাইলেই কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করা সম্ভব। এজন্য দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখতে হবে- আমি পারি, আমাকে পারতেই হবে। আমি বিশ্বাস করি উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পর ভালো কিছু হবে। কেননা আমার শিক্ষার সাথে অভিজ্ঞতাও হচ্ছে।’’ 

নারীদের পড়াশোনা ও কাজ একসঙ্গে চালিয়ে নেওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের অনেক বেশি ভূমিকা রয়েছে বলে জানান বাবলি। পরিবারের অনুপ্রেরণা পেলে কাজটা সহজ হয়। কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করতে চাইলে প্রতিষ্ঠান থেকেও সহযোগিতা পাওয়া যায়। এ জন্য নারীদের কর্মের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। 

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র ম ন টস ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

এই অপচয় রোধে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ

প্রতিবছরের মতো এবার যে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ছিল না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত। অতীতে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার নামে সরকারের মাহাত্ম্য প্রচার করা হতো। 

তবে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুবই হতাশাজনক।  বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যুক্ত করলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ৬ লাখের বেশি।  

এই যে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলো, এর জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। দায়ী হলেন শিক্ষার অভিভাবক বা রক্ষকেরা। বাংলাদেশে যখন যেই সরকার আসে, তাদের মতো করে একটি শিক্ষানীতি বা কমিশন করে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি বা কমিশন শিক্ষার মানোন্নয়নে আদৌ ভূমিকা রাখছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয় না। 

এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার জন্য শিক্ষার অভিভাবকেরা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, তাকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। মূল কারণ তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’ 

সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষা বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এতে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। মূল কথা হলো নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার সমস্যাটি কীভাবে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয়নি, এটা সত্য; কিন্তু তার আগে কিংবা পরেও পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই করার কথা থাকলেও সেটা হয় না। এ কারণেই এসএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকার্যকর হয়।

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বেশি উৎসাহিত করা হয়। আগে কোচিং সেন্টার ছিল শহরাঞ্চলে, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। কোচিং মানে শিক্ষা নয়, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর  হবে; সেটা শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া। বহু বছরের কু–অভ্যাসে আমরা শিক্ষাকে এই স্তরে নিয়ে এসেছি। 

প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষা–দর্শন থাকে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতে তাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার নীতিনির্ধারকেরা এর ওপর কখনো জোর দেননি।  অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকের পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এটা কেবল পরিবার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, মানবসম্পদেরও অপচয়। 

শিক্ষা খাতের প্রতি পূর্বাপর সব সরকারই উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। এমনকি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারও শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বস্তরে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সময়মতো পাঠ্যবইসহ শিক্ষার সব উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর মেধাবীরা তখনই এই পেশায় আসবেন, যখন সম্মানজনক বেতন–ভাতা পাবেন। 

এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া ঠেকাতে সরকারকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠকমতো পাঠদান ও মান যাচাই হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ