ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত উক্যছাইং মার্মাকে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং তার আত্মীয়-স্বজনরা শেষ বিদায় জানিয়েছেন।

আজ বুধবার ( ২৩ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পর তাকে গ্রামের শ্মশানে দাফন করা হয়েছে। নিহত উক্যছাইং মারমার মা ডেজিপ্রু মারমা সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায়। 

সোমবার (২১ জুলাই) ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিল ওই স্কুলের ছাত্র উক্যছাইং মারমা। ওই দিন রাত আড়াইটার দিকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় জানান বাবা উসাইমং মারমা।

আরো পড়ুন:

মাইলস্টোন ট্র্যাজিডি: দগ্ধ আলবীরার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন

যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনা ও গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে সিএমএইচে নৌ উপদেষ্টা

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিমান দুর্ঘটনার সময় উক্যছাইং মারমাও সহপাঠীদের সঙ্গে দ্বিতীয় তলার শ্রেণিকক্ষে ছিল। সেখান থেকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। তার শরীরের প্রায় শতভাগ পুড়ে ঝলসে গিয়েছিল। তাকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।

উক্যছাইং মারমা রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজাতীয় আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক উসাই মং মারমা এবং মা ডেজিপ্রু মারমা বান্দরবানের রুমা উপজেলার ক্যকতাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। নিহত উক্যছাইং মারমা তাদের একমাত্র সন্তান।

বাবা উসাইমং মারমার সঙ্গে আজ বুধবার (২৩ জুলাই)  দুপুরে কথা হয়। ছেলের কথা বলতেই তিনি বলেন, ‘‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি তার জন্য কিছুই করতে পারলাম না।’’ এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন। উক্য ছাইং মার্মা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবাসিক হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করত।

তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি, সে আমার মেধাবী সন্তান ছিল। রাস্তায়, মোবাইলে বা টেলিভিশনে যে কোনো গাড়ি দেখলেই অনায়াসে বলে দিত সেই গাড়ির নাম, মডেল সবকিছু। ওর মধ্যে এক ধরনের সৃজনশীলতা ছিল। আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে।’’

দুর্ঘটনার একদিন আগেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল বলে জানান বাবা উসাইমং মারমার। তখন তিনি ছেলেকে বলছিলেন, ‘‘বাবা, তুমি ভালো করে থেকো। আমি আগামী মাসে আসব। তোমার যা যা লাগবে সব কিনে দিব। কিন্তু কে জানত, এটাই হবে আমাদের শেষ কথা! ভাগ্যে এটাই ছিল।’’

নিহত উক্যছাইং মারমার বাবা আরো বলেন, ‘‘মনকে বার বার বোঝাতে চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছুতেই মানতে পারছি না। সে আর আমাদের মাঝে নেই।’’

বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে (বিসিপিএসসি) পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে উক্য ছাইং মারমা। পরে ক্যাডেট কলেজে পড়ার ইচ্ছা থেকে ঢাকায় ক্যাডেট কোচিংও করেছে। ক্যাডেটে চান্স না পাওয়ায় তার অভিভাবক মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করান।

চট্টগ্রাম শহীদ ক্যাডেট একাডেমির সপ্তম শেণির শিক্ষার্থী ও নিহত উক্য ছাইং মারমার বন্ধু মংটিং মারমা  বলেন,  ‘‘আমরা ছোট বেলার বন্ধু। একসঙ্গে স্কুলে যেতাম, একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম। তার সঙ্গে আর খেলাধূলা করতে পারব না, ভাবতেই কষ্ট হয়।’’

বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা শারমিন আক্তার তার ছাত্রকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন। তখন কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের মৃত্যু অনিবার্য তাই বলে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই মৃত্যু মেনে নেয়ার মতো নয়।  যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব চেয়ে নিরাপদ সেখানেই এত বড় দুর্ঘটনা? যাদের মায়ের কোল খালি হয়েছে তা অপূরণীয়।’’

নিহত উক্য ছাইংয়ের গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া খেয়াংডং পাড়ায়। এটি বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়ক এলাকায়। 

ঢাকা/চাইমং/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ড কল জ র ব ন দরব ন দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদা আক্তারের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেল। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পরপরই একটি শিশু মারা যায়। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে আরও চার নবজাতকের মৃত্যু হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের মোকসেদা আক্তার রোববার সকালে একসঙ্গে এই ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর স্বামী মো. হানিফ কাতারপ্রবাসী। মোকসেদা আক্তারের ননদ লিপি বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকের অবস্থাও বেশি ভালো নয়।

ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোকসেদা তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তান প্রসব করেন। সন্তানেরা ২৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। জন্মের সময় প্রত্যেকের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামে মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার অবস্থাই ছিল সংকটজনক।

আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম, নবজাতকদের অবস্থা সংকটাপন্ন২২ ঘণ্টা আগে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আইসিইউতে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় তিনজনকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে ১০ কারণে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বেশি ঝগড়া হয়
  • স্মার্ট সিটি হবে চট্টগ্রাম, একসঙ্গে কাজ করবে গ্রামীণফোন-চসিক
  • অনলাইন জীবন আমাদের আসল সম্পর্কগুলোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে
  • তিনি চাকরি ছাড়বেন শুনলেই সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন
  • প্রেমিকের সঙ্গে বাগদান সারলেন হুমা কুরেশি!
  • একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল