মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: উক্য ছাইং কে শেষ বিদায় জানাল বন্ধু-স্বজনেরা
Published: 23rd, July 2025 GMT
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত উক্যছাইং মার্মাকে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং তার আত্মীয়-স্বজনরা শেষ বিদায় জানিয়েছেন।
আজ বুধবার ( ২৩ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পর তাকে গ্রামের শ্মশানে দাফন করা হয়েছে। নিহত উক্যছাইং মারমার মা ডেজিপ্রু মারমা সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায়।
সোমবার (২১ জুলাই) ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিল ওই স্কুলের ছাত্র উক্যছাইং মারমা। ওই দিন রাত আড়াইটার দিকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় জানান বাবা উসাইমং মারমা।
আরো পড়ুন:
মাইলস্টোন ট্র্যাজিডি: দগ্ধ আলবীরার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন
যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনা ও গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে সিএমএইচে নৌ উপদেষ্টা
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিমান দুর্ঘটনার সময় উক্যছাইং মারমাও সহপাঠীদের সঙ্গে দ্বিতীয় তলার শ্রেণিকক্ষে ছিল। সেখান থেকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। তার শরীরের প্রায় শতভাগ পুড়ে ঝলসে গিয়েছিল। তাকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।
উক্যছাইং মারমা রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজাতীয় আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক উসাই মং মারমা এবং মা ডেজিপ্রু মারমা বান্দরবানের রুমা উপজেলার ক্যকতাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। নিহত উক্যছাইং মারমা তাদের একমাত্র সন্তান।
বাবা উসাইমং মারমার সঙ্গে আজ বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে কথা হয়। ছেলের কথা বলতেই তিনি বলেন, ‘‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি তার জন্য কিছুই করতে পারলাম না।’’ এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন। উক্য ছাইং মার্মা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবাসিক হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করত।
তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি, সে আমার মেধাবী সন্তান ছিল। রাস্তায়, মোবাইলে বা টেলিভিশনে যে কোনো গাড়ি দেখলেই অনায়াসে বলে দিত সেই গাড়ির নাম, মডেল সবকিছু। ওর মধ্যে এক ধরনের সৃজনশীলতা ছিল। আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে।’’
দুর্ঘটনার একদিন আগেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল বলে জানান বাবা উসাইমং মারমার। তখন তিনি ছেলেকে বলছিলেন, ‘‘বাবা, তুমি ভালো করে থেকো। আমি আগামী মাসে আসব। তোমার যা যা লাগবে সব কিনে দিব। কিন্তু কে জানত, এটাই হবে আমাদের শেষ কথা! ভাগ্যে এটাই ছিল।’’
নিহত উক্যছাইং মারমার বাবা আরো বলেন, ‘‘মনকে বার বার বোঝাতে চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছুতেই মানতে পারছি না। সে আর আমাদের মাঝে নেই।’’
বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে (বিসিপিএসসি) পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে উক্য ছাইং মারমা। পরে ক্যাডেট কলেজে পড়ার ইচ্ছা থেকে ঢাকায় ক্যাডেট কোচিংও করেছে। ক্যাডেটে চান্স না পাওয়ায় তার অভিভাবক মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করান।
চট্টগ্রাম শহীদ ক্যাডেট একাডেমির সপ্তম শেণির শিক্ষার্থী ও নিহত উক্য ছাইং মারমার বন্ধু মংটিং মারমা বলেন, ‘‘আমরা ছোট বেলার বন্ধু। একসঙ্গে স্কুলে যেতাম, একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম। তার সঙ্গে আর খেলাধূলা করতে পারব না, ভাবতেই কষ্ট হয়।’’
বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা শারমিন আক্তার তার ছাত্রকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন। তখন কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের মৃত্যু অনিবার্য তাই বলে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই মৃত্যু মেনে নেয়ার মতো নয়। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব চেয়ে নিরাপদ সেখানেই এত বড় দুর্ঘটনা? যাদের মায়ের কোল খালি হয়েছে তা অপূরণীয়।’’
নিহত উক্য ছাইংয়ের গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া খেয়াংডং পাড়ায়। এটি বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়ক এলাকায়।
ঢাকা/চাইমং/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ড কল জ র ব ন দরব ন দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা। চলুন, বিশেষ এই দিনে শাহরুখ খানের অজানা সাতটি তথ্য জেনে নিই—
এক. ১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। কিন্তু সিনেমাটিতে শাহরুখ খানের চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল তারকা পুত্র আরমান কোহলির। অভিজ্ঞ পরিচালক রাজ কুমার কোহলির রাগী ছেলে আরমান সিনেমাটির একটি শিডিউল শেষ করে পরিচালক রাজ কানওয়ারের সঙ্গে ঝগড়া করে সেট ছেড়ে চলে যান। প্রযোজকরা তখন তড়িঘড়ি করে একটি নতুন মুখ খুঁজতে থাকেন, যে চরিত্রটির সঙ্গে মানানসই। তারপর আরমানের চরিত্রটি রূপায়নের সুযোগ পান নবাগত শাহরুখ খান।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
নেচে প্রেমের গুঞ্জন উসকে দিলেন শাহরুখকন্যা
দুই. দক্ষিণী সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা কমল হাসানের ‘হে রাম’ সিনেমায় শাহরুখের চরিত্রের নাম ছিল আমজাদ খান। ‘শোলে’ সিনেমায় গব্বর সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন আমজাদ খান। তার নাম অনুসারে ‘হে রাম’ সিনেমার আমজাদ চরিত্রের নামকরণ করা হয়। কারণ কমল হাসান ও আমজাদ খানের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলেন। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এক টাকাও পারিশ্রমিক নেননি শাহরুখ। এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ খান বলেছিলেন—“কমল হাসানের মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে কেউ টাকা নেয় না।”
তিন. শাহরুখ ও আমির খান কখনো একসঙ্গে কোনো সিনেমায় কাজ করেননি। তবে আমির খানের কাজিন মনসুর আলীর ‘জোশ’ সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। মনসুর চেয়েছিলেন, সিনেমার গল্পে আমির খান ঐশ্বরিয়ার প্রেমিক চরিত্রে অভিনয় করুক। কিন্তু আমির চেয়েছিলেন, ঐশ্বরিয়ার জমজ ভাইয়ের চরিত্র। কিন্তু তা হয়নি। ফলে কাজটি ছেড়ে দেন আমির খান। সর্বশেষ পরিচালকের নির্ধারিত চরিত্রে (ম্যাক্স ডিয়াস অর্থাৎ ঐশ্বরিয়ার ভাই) অভিনয় করেন শাহরুখ খান।
চার. শাহরুখ খান প্রয়াত বলিউড অভিনেত্রী শ্রীদেবীর বিপরীতে অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। সর্বশেষ ‘আর্মি’ সিনেমায় সেই সুযোগ হয়। যদিও সিনেমাটিতে ক্যামিও চরিত্রে (মেজর অর্জুন) অভিনয়ের সুযোগ পান, তারপরও এটি লুফে নেন শাহরুখ খান।
পাঁচ. ‘কয়লা’ সিনেমায় শঙ্কর চরিত্রে অভিনয় করেন শাহরুখ। চরিত্রটি ছিল বোবার। প্রথমে তার কোনো সংলাপই ছিল না। কিন্তু এ নিয়ে চলচ্চিত্র পরিবেশকরা আপত্তি জানান। তারা প্রশ্ন তুলেন—‘সুপারস্টারের মুখে একটি কথাও থাকবে না?’ তাই পরিচালক-প্রযোজক রাকেশ রোশান বাধ্য হয়ে স্বপ্নদৃশ্যে শাহরুখের কিছু সংলাপ যোগ করে দেন।
ছয়. বলিউড বাদশা শাহরুখ খান তার সব সহ-অভিনয়শিল্পীদেরই ভালোবাসেন। কিন্তু তার প্রিয় হলেন রাখি গুলজার। ‘করন অর্জুন’ সিনেমায় শাহরুখের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন এই অভিনেত্রী। শাহরুখ তাকে নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসেন।
সাত. শাহরুখ খান অনেকবার নিজের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ১৯৯৮ সালে ‘আচানাক’ সিনেমায় প্রথমবার শাহরুখ চরিত্রে অভিনয় করেন। যদিও গোবিন্দ অভিনীত সিনেমাটিতে শাহরুখের ক্যামিও চরিত্র ছিল। এর দুই বছর পর এম. এফ. হোসেনের ‘গজ গামিনি’ সিনেমায় নিজের চরিত্রে অভিনয় করেন। এটিও ক্যামিও চরিত্র ছিল।
১৯৯৫ সালে শাহরুখ খানের সাংবাদিক বন্ধু সমর খান, শাহরুখের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তাতে শাহরুখ খান নিজের নামে অভিনয় করেন। ২০০৯ সালে জোয়া আখতারের ‘লাক বাই চান্স’, ২০১১ সালে নবাগত পরিচালক সাহিল সাংঘার ‘লাভ ব্রেকআপস জিন্দেগি’, ২০১০ সালে মকরন্দ দেশপান্ডের শাহরুখ বোলা ‘খুবসুরত হ্যায় তু’ সিনেমায় শাহরুখ নিজের নাম নিয়েই পর্দায় হাজির হন।
তথ্যসূত্র: বলিউড হাঙ্গামা
ঢাকা/শান্ত