গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় ঢুকে পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও থানার এক সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়া যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে থানার পাশে সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লাশ উদ্ধার হওয়া যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ওই যুবক শার্ট ও প্যান্ট পরিহিত ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তিনি থানায় অভিযোগ লেখাতে এসে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে পুলিশের এক কনস্টেবলের বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশের অন্য সদস্যরা বাধা দিলে এক এএসআইকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান তিনি।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে সাঘাটা থানার সামনে একটি সালিস বৈঠক চলছিল। রাত ১০টার দিকে অজ্ঞাতনামা এক যুবক থানার কম্পিউটার কক্ষে গিয়ে কম্পিউটার অপারেটরকে অভিযোগ লেখার কথা বলেন। অপারেটর তাঁকে বাইরে থেকে অভিযোগ লিখে আনার পরামর্শ দেন। এ নিয়ে তাঁদের দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই যুবক থানায় দায়িত্বরত কনস্টেবলের (সেন্ট্রি) কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন দায়িত্বরত কনস্টেবল চিৎকার দিলে পাশে কক্ষে থাকা এএসআই মহসিন মিয়াসহ কয়েকজন এসে বন্দুক উদ্ধার করেন এবং যুবককে আটকের চেষ্টা করেন। তখন ওই যুবক ছুরি দিয়ে এএসআই মহসিনকে আঘাত করে পালিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ওই যুবক পালানোর সময় পুলিশ ও এলাকাবাসী তাঁর পিছু নেন। একপর্যায়ে থানার পাশে সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুরে যুবককে দেখা যায়। এ সময় পুলিশ ধরার চেষ্টা করলে ওই যুবক পুকুরে কচুরিপানার ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকেন। তখন পুলিশ সদস্য ও এলাকাবাসী পুকুরপাড়ে অবস্থান নেন। রাত গভীর হলে পুলিশ পাহারায় থাকলেও এলাকার লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। আজ সকালে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ওই যুবকের লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করেন। পরে লাশ থানায় আনা হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল্লাহ মণ্ডল বলেন, গতকাল রাত ১০টার দিকে থানায় হইচই শুনে তিনি এগিয়ে যান। গিয়ে দেখেন অপরিচিত এক যুবক দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। পেছনে পুলিশ ও কিছু লোক ধাওয়া করেছেন। একপর্যায়ে থানার পাশে বিদ্যালয়ের পুকুরে যুবককে দেখা যায়। সেখান থেকে যুবককে ধরার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় যুবক পুকুরের ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়েন। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁকে দেখতে না পেয়ে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। তবে পানিতে ডুবে নাকি অন্য কারণে মারা গেছেন, পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া না পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ জানা যাবে না। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যুবকের পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।

ওসি বাদশা আলম আরও বলেন, আহত এএসআই মহসিন মিয়ার হাতে ও কপালে জখম হয়েছে। তাঁকে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ব্রিফ করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘ ত কর পর য য় বন দ ক য বক র য বকক

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।

ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র‍্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র‍্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র‍্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই শিশুর ঝগড়ায় জড়ালেন বড়রা, বড় ভাইয়ের হাতে খুন ছোট ভাই
  • রাজশাহীতে ‘প্রেমিকার’ সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার