গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উপজেলার ভাঙ্গারজাঙ্গাল এলাকায় মকশ বিলে ঘুরতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হওয়া তিন বন্ধুর মধ্যে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যজনের এখনো সন্ধান মেলেনি। ঘটনার পর থেকে নদীপাড়ে স্বজনেরা আহাজারি করছেন।

লাশ উদ্ধার হওয়া দুই শিক্ষার্থী হলেন সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা হালিম মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম (১৮) ও কালিয়াকৈর উপজেলার সুরিচালা গ্রামের মজনু মিয়ার ছেলে মো.

শিমুল হোসেন (১৮)। নিখোঁজ শিক্ষার্থী হলেন একই এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ধামরাই উপজেলার শিমুলিয়া থেকে গত শুক্রবার সকালে রফিকুল তাঁর খালার বাড়ি কালিয়াকৈর উপজেলার সুরিচালা এলাকায় বেড়াতে আসেন। ওই দিনই বিকেলে পাঁচ বন্ধু মিলে একটি ছোট নৌকা নিয়ে মকশ বিলে ঘুরতে যান। এ সময় প্রচণ্ড বাতাসে বিলের পানিতে নৌকাটি উল্টে যায়। এ সময় দুই বন্ধু সাকিব হোসেন ও আরাফাত হোসেন সাঁতরে কিনারায় উঠতে পারলেও তিনজন পানিতে তলিয়ে যান। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন খুঁজে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।

খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধারকাজ শুরু করে। আজ সকাল আটটার দিকে রফিকুল ও বিকেল পাঁচটার দিকে শিমুলের মরদেহ বিল থেকে উদ্ধার করে। এদিকে সকাল থেকে নিখোঁজ তরুণদের পরিবার ও এলাকাবাসী বিলের বিভিন্ন পাড়ে অবস্থান নিয়ে আহাজারি করছেন।

মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আরিফুল ইসলাম বলেন, মকশ বিলে তিন শিক্ষার্থীর নিখোঁজ হওয়ার পর দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এখনো এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী বলেন, শুক্রবার রাত থেকে তাঁরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। আজ সকালে রফিকুল ও বিকেলে শিমুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আরও একজন নিখোঁজ আছে। উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ