ঢাবির হলে অধূমপায়ীদের কক্ষে ধূমপায়ীদের সিট দেওয়া হবে না
Published: 26th, July 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এএফ রহমান হলে অধূমপায়ী শিক্ষার্থীদের কক্ষে ধূমপায়ীদের সিট দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষ কাজী মাহফুজুল হক সুপণ।
শনিবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৭টার দিকে হলের ফেসবুক গ্রুপে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়টি জানান।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, “তোমরা যদি নিজেদের কক্ষটিকে ধূমপানমুক্ত কক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাও, তাহলে কমেন্টে রুম নম্বরটি লিখে দাও। রুমমেটদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নাও। তোমাদের কক্ষের বাইরে ধূমপানমুক্ত কক্ষ হিসেবে স্টিকার থাকবে এবং ভবিষ্যতে তোমাদের কক্ষে কোনো ধূমপায়ী ছাত্রকে সিট দেওয়া হবে না।”
আরো পড়ুন:
চলতি সপ্তাহেই ইবি শিক্ষার্থী সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদন
৭২ বছরে প্রথম রুয়া নির্বাচন: সভাপতি রফিকুল, সম্পাদক নিজাম
হল প্রাধ্যক্ষের এ স্ট্যাটাসের পর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো.
হলের আরেক শিক্ষার্থী মোবাশ্বির আলম বলেন, “হলের কক্ষে ধূমপান একটি গুরুতর সমস্যা, যা একই কক্ষে থাকা অধূমপায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য চরম অসুবিধার কারণ হতে পারে। কেবল শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, রুমের সামগ্রিক পরিবেশ এবং বসবাসযোগ্যতা রক্ষার স্বার্থেও ধূমপানের বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “যদিও প্রতিটি ছাত্রের ব্যক্তিগত অভ্যাসের ওপর প্রশাসনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকা সমীচীন নয়, তথাপি যে অভ্যাস অন্যের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে বা সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট করে, সেক্ষেত্রে প্রশাসনের ন্যূনতম হস্তক্ষেপ অত্যন্ত যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয়। বিগত সময়ে স্যার এএফ রহমান হলে এ বিষয়ে কিছু অলিখিত নিয়ম প্রযোজ্য ছিল। এখন সময় এসেছে সেই নিয়মগুলোকে লিখিত আকারে প্রণয়ন ও বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সুস্থ, নিরাপদ ও সহনশীল আবাসিক পরিবেশ নিশ্চিত করার।”
এর আগে, চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হলে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছিলেন হলটির প্রাধ্যক্ষ কাজী মাহফুজুল হক সুপণ। হলে প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ২০০ টাকা জরিমানা এবং ইয়াবা, গাঁজা বা অন্য কোনো মাদক সেবনের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ