১০ বছর ধরে জেড রিক ভারদিলো ও জ্যামাইকা আগুইলার পরস্পরকে জেনেছেন, চিনেছেন। অবশেষে এ দুই তরুণ-তরুণী বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার পর শুরু হয় নানা প্রস্তুতি।
সব ঠিকঠাকই চলছিল—বিয়ের পোশাক তৈরি, কেনাকাটা, অতিথি আমন্ত্রণ, ভোজের ব্যবস্থা। কমতি ছিল না কোনো কিছুর। কিন্তু এত সব আয়োজনে ‘পানি ঢালা’র উপক্রম হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় উইফার কারণে।
ভারদিলো ও আগুইলার বিয়ের তারিখ ছিল গত ২২ জুলাই। সে সময় উইফার প্রভাবে ফিলিপাইনে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। যদিও এই ঝড় সরাসরি ফিলিপাইনে আঘাত হানেনি। তবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে ফিলিপাইনের বুলাকান প্রদেশে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। তুমুল বৃষ্টিতে চারদিক জলমগ্ন হয়ে পড়ে, দেখা দেয় বন্যাও। বিয়ের আয়োজন যেখানে হওয়ার কথা, সেই বারাসোয়াইন গির্জার ভেতরও পানি থই থই করছিল। প্রকৃতির এ বিরূপ রূপকে নিজেদের ভালোবাসার পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করেন ভারদিলো ও আগুইলার।
বিয়ের দিন বৃষ্টি-বন্যার আশঙ্কার পূর্বাভাস অবশ্য ওই জুটি আগেই পেয়েছিলেন। চাইলে দিন পেছাতে পারতেন। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে বিশেষ দিনটির আনন্দ তাঁরা মলিন হতে দিতে চাননি। তাই বিয়েটা সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। যেমন ভাবা তেমন কাজ। প্লাবিত গির্জার ভেতরই হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে একে অপরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করলেন ভারদিলো ও আগুইলার।
বর ভারদিলো বলেন, ‘আমরা সাহস জোগাড় করে আজকের দিনটাই বেছে নিয়েছিলাম। কারণ, এটাও একধরনের ত্যাগ। আজ যদি বিয়ে না করতাম, তাহলে সামনে হয়তো আরও বড় ত্যাগ করতে হতো।’
কনে আগুইলারও তাঁর সাদা রঙের বিয়ের গাউন পরে হাঁটুপানি ভেঙেই এগিয়ে যান। গাউনের লম্বা অংশটি হাতে ধরে নয়; বরং পানির ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে বেদির কাছে পৌঁছান। সেখানেই হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে তাঁর অপেক্ষায় ছিলেন ভারদিলো।
বিপজ্জনক আবহাওয়ার মধ্যেও আত্মীয়স্বজনের অনেকেই এসেছিলেন এই জলমগ্ন বিয়েতে। অতিথিদের একজন জিগো সান্তোস বলেন, ‘আপনি দেখবেন ভালোবাসাই জিতেছে। ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা সব পেরিয়ে এই বিয়ে হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জলমগ্ন কালীগঞ্জ ডাকঘর, সেবার চেয়ে ভোগান্তি বেশি
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রধান ডাকঘরটি যেন এখন সেবার প্রতীক নয়, দুর্ভোগের নমুনা হয়ে উঠেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ডাকঘরের চারপাশে পানি জমে যায়। টানা বৃষ্টিতে সেই পানি ঢুকে পড়ে ডাকঘরের ভেতরে। জলাবদ্ধতার মধ্যেই চলে সরকারি সেবা কার্যক্রম। এমন পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেমন পড়ছেন বিপাকে, তেমনই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।
কালীগঞ্জ উপজেলার প্রধান এ ডাকঘর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। আশপাশে রয়েছে উপজেলা প্রশাসনিক ভবন, কলকারখানা, ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা। স্বাভাবিকভাবেই এখানে প্রতিদিন আসেন শত শত সেবাগ্রহীতা। কেউ আসেন চিঠি পাঠাতে, কেউবা টাকা উত্তোলন বা ডাক জীবনবিমার কাজে। কিন্তু, জলাবদ্ধতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে দিনের পর দিন মানুষ ডাক বিভাগের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন।
একসময় মানুষের বার্তা আদান-প্রদানের প্রধান ভরসা ছিল ডাক বিভাগ। কালের বিবর্তনে ডাক সেবা এখন সীমিত আকারে চললেও অনেকের কাছে এটি এখনো অপরিহার্য। তাই, কালীগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় প্রধান ডাকঘরের এমন করুণ অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে একদিকে যেমন নাগরিক সেবা মুখ থুবড়ে পড়বে, অন্যদিকে ডাক বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থাও বিলীন হয়ে যাবে।
কালীগঞ্জের প্রধান ডাকঘরে অব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিরাপত্তার সংকটও। এর চারপাশের সীমানা প্রাচীর ও লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে নির্মিত নিরাপত্তা বেষ্টনি দীর্ঘদিন আগেই খোয়া গেছে। কে বা কারা চুরি করেছে, তা কেউ বলতে পারছেন না। ফলে, এখন জায়গাটি খোলা মাঠের মতো পড়ে থাকে, যেখানে পরিবহন শ্রমিকরা রিকশা-ভ্যান-অটোরিকশা পার্ক করে রাখেন। সেবাগ্রহীতাদের হাঁটার জায়গাটুকুও থাকে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সামনের রাস্তাটি উঁচু হওয়ায় বৃষ্টির পানি গড়িয়ে আসে ডাকঘরের নিচু আঙিনায়। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। এটি হয়ে ওঠে মশার প্রজননস্থল। অফিসের ভেতরে বসে কাজ করা যেমন কষ্টকর, তেমনই বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাও যন্ত্রণাদায়ক।
স্থানীয়রা বলছেন, কালীগঞ্জ শিল্পসমৃদ্ধ ও জনবহুল উপজেলা। এখানে ডাকঘরের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের এই বেহাল দশা কাঙ্ক্ষিত নয়। সরকারের উচিত দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণ এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “ডাকঘরের পাশে ময়লার স্তূপ, তার ওপর পরিবহন শ্রমিকদের বেপরোয়া পার্কিং। অনেক সময় দেখি, সেখানে মানুষ প্রস্রাব করছে। দুর্গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। এমন পরিবেশে কেউ কি কাজ করতে চায়?”
ডাকঘরের রানার ফরিদ উদ্দিন ও শাহিন মিয়া বলেন, “প্রতিদিনই এই সমস্যার ভেতর দিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। বৃষ্টির দিনে জুতা খুলে পানি মাড়িয়ে অফিসে আসতে হয়। এটা কতটা কষ্টকর, তা বলে বোঝানো যাবে না।”
ডাক পিয়ন শামসুল হক বলেন, “এমনিতে মানুষ ডাক বিভাগের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। এখন যদি কেউ এসে এই দুর্দশা দেখে, সে ভবিষ্যতে আর আসবে না।”
পোস্ট মাস্টার মো. ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, “আমি প্রায় দুই বছর ধরে এখানে আছি। যোগদানের পর থেকেই দেখছি, দুরবস্থা শুধু বাড়ছে। চারপাশের লোহার বেড়া চুরি হয়ে গেছে। বৃষ্টির দিনে ডাকঘরের আঙিনায় হাঁটা যায় না, ভেতরেও পানি ওঠে। বিষয়টি লিখিতভাবে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা জানিয়েছেন, খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে কথা বলতে ডাক বিভাগের নরসিংদী অঞ্চলের ইন্সপেক্টর আঞ্জু মনোয়ারা বেগমকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/রফিক