রাঙামাটিতে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-গুলি উদ্ধার: আইএসপিআর
Published: 29th, July 2025 GMT
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে মাচালং এলাকার নরেন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আস্তানায় সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছে। এ সময় সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।
আজ মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) পরিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের একটি দল ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র কারবারি ত্রিপুরা পাড়া নামের একটি এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় ইউপিডিএফের সদস্যরা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়েন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এরপর তল্লাশি চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সেনাবাহিনীর টহল দল ১টি সাবমেশিনগান, দেশি তৈরি ৩টি বন্দুক, ১টি এলজি, ১টি সাবমেশিনগানের ম্যাগাজিন, ১টি পোচ, ৭ রাউন্ড অ্যামুনেশন, ১৭টি গুলির খালি খোসা, ২৫টি বিভিন্ন লটের সাবমেশিনগানের খালি খোসা, ৪টি ওয়াকি–টকি, ১টি মটোরোলা সেট, ৪টি ওয়াকি–টকি চার্জার, ২টি ক্যামেরা, ১টি স্পাই ক্যামেরা সানগ্লাস, ১টি স্পাই ক্যামেরা ডিভাইস চার্জার, ৩টি পেনড্রাইভ, ইউপিডিএফ সংগঠনের ৪টি পতাকা, ইউপিডিএফ সংগঠনের ৫টি আর্মব্যান্ড এবং ১২টি বিভিন্ন প্রকারের বই উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে আজ দুপুরে বাঘাইহাট জোনের অধিনায়ক লে.
ইউপিডিএফ বলছে সাজানো নাটক
এদিকে সেনাবাহিনীর অভিযান ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে ইউপিডিএফ সাজানো নাটক উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে। ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, সাজেকে ইউপিডিএফের আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুয়া, সাজানো এবং ইউপিডিএফকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর জঘন্য ষড়যন্ত্র।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইউপিডিএফের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এবং চলমান ধর্ষণবিরোধী ছাত্র-গণ আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা হিসেবে এভাবে একের পর এক গোলাগুলি ও অস্ত্র উদ্ধারের নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া আজ ‘ভুয়া অস্ত্র উদ্ধারের’ প্রতিবাদে সাজেকের উজোবাজার এলাকায় একটি মিছিল করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটির পাহাড়ে ইউপিডিএফের আস্তানায় সেনা অভিযান
রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে চালানো এই অভিযানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে একে-৪৭ রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। অভিযান এখনো চলছে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনে তৎকালীন সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে শান্তিচুক্তি সই হয়। চুক্তিতে বহু ধারার উল্লেখ ছিল—এর কিছু বাস্তবায়ন করা হয়, আর বাকিগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের অভিযোগ, চুক্তির অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ধারা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
এই চুক্তির বিরোধিতা করেই ১৯৯৮ সালের জুনে আত্মপ্রকাশ করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। সংগঠনটি মূলত চুক্তিবিরোধী অবস্থান নিয়ে পাহাড়ি তরুণদের মধ্যে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে।
এরপর থেকেই পার্বত্য অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে। দুই সংগঠনের সংঘর্ষে বিভিন্ন সময়ে বহু কর্মী নিহত হন, আর সশস্ত্র সহিংসতায় পাহাড়জুড়ে বিরাজ করে আতঙ্ক।
২০১০ সালে জেএসএসের মূল ধারা (সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন) থেকে একটি অংশ বেরিয়ে এসে জেএসএস (এম এন লারমা) নামে নতুন একটি সংগঠন গঠন করে।
পরে ২০১৭ সালে ইউপিডিএফের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের পর প্রসীত খিসার নেতৃত্বাধীন মূল সংগঠন থেকে আলাদা হয়ে আরেকটি অংশ ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক নামে আত্মপ্রকাশ করে।
ঢাকা/হাসান/ইভা