দুর্গম অঞ্চলে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এখনো পিছিয়ে
Published: 31st, July 2025 GMT
বাংলাদেশের চর, হাওর, পাহাড় ও সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকার নারী ও কিশোরীরা এখনো পর্যাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা, বাজেট ও জনবলের ঘাটতি এবং সচেতনতার অভাবে এসব অঞ্চলে প্রজনন অধিকার বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (ডিজিএফপি) ২০২৫-৩০ মেয়াদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সমন্বিত কৌশলপত্রের মোড়ক উন্মোচন করেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত কর্মশালায় ‘দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য পরিবার পরিকল্পনা কৌশল’ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। কর্মশালার আয়োজন করে স্বাস্থ্য ডিজিএফপির ‘ক্লিনিক্যাল গর্ভনিরোধক পরিষেবা ডেলিভারি প্রোগ্রাম’। কারিগরি সহায়তায় ছিল মেরি স্টোপস বাংলাদেশ।
কর্মশালায় কৌশলপত্রটি উপস্থাপন করেন মেরি স্টোপস বাংলাদেশের পার্টনারশিপ অ্যান্ড ফান্ডরাইজিং প্রধান মনজুন নাহার। তিনি জানান, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০১৭-১৮-এর তথ্য অনুযায়ী, দুর্গম এলাকায় পরিবার-পরিকল্পনার ‘অপূর্ণ চাহিদার হার’ উচ্চ, যা মা ও শিশু উভয়ের ঝুঁকি বাড়ায়। পাহাড়, চর ও হাওর অঞ্চলে অধিকাংশ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় না। নিয়মিতভাবে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাম্প হয় না। ফলে সচেতনতার অভাব ও যোগাযোগব্যবস্থার দুর্বলতায় সেবার গতি স্থবির হয়ে পড়েছে।
কী আছে ২০২৫-৩০ কৌশলে?
ডিজিএফপি ও মেরি স্টোপস বাংলাদেশ যৌথভাবে প্রণীত এই কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, দুর্গম এলাকার জন্য সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে; প্রতিটি সেবাকেন্দ্রে কমপক্ষে ৪ জন প্রশিক্ষিত ধাত্রী/এফডব্লিউভি থাকবেন; ওষুধ, গর্ভনিরোধক ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে; সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব জোরদার করা হবে; স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা কর্মসূচি বাড়ানো হবে এবং কিশোর-কিশোরী ও দম্পতিদের মধ্যে এসআরএইচআর সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছানো হবে।
কৌশল বাস্তবায়নে সমতা, প্রজনন অধিকার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পছন্দের স্বাধীনতা ও গুণগত যত্ন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নমুনা হিসেবে ভোলা, কয়রা, বাগেরহাট, কক্সবাজার, বান্দরবান, পটুয়াখালী, বরগুনা, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলায় প্রাথমিকভাবে এ কৌশল বাস্তবায়ন করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো.
সভাপতির বক্তব্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফী আহমেদ বলেন, ‘এই প্রস্তুতি আমাদের আগেই থাকা উচিত ছিল, কিন্তু আমরা এখন করেছি। এখন বাস্তবায়ন করাটাই জরুরি।’
স্বাগত বক্তব্যে মেরি স্টোপস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিশওয়ার ইমদাদ বলেন, ২০২৩ সালে এই কৌশলের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজিএফপির যৌথ বৈধতা কর্মশালায় এটি অনুমোদন লাভ করে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব আলম, এমসিএইচ সার্ভিসেসের পরিচালক মো. সুলতান আহম্মদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড জ এফপ প রজনন দ র গম
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল করতে চান উমামা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল করতে চান উমামা ফাতেমা।
গতকাল বুধবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে উমামা এ কথা জানান। তিনি তাঁর পোস্টের কমেন্টে একটি ফরম যুক্ত করেছেন। যেসব শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে চান, তাঁদের উমামা তাঁর প্যানেলের পক্ষ থেকে ফরমটি পূরণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে উমামা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ছিলেন। সে সময় তিনি ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিবও ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর তিনি ছাত্র ফেডারেশন থেকে পদত্যাগ করেন। গত বছরের অক্টোবরে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র হন। গত মাসে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়েন।
উমামার তাঁর ফেসবুক পোস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন—
‘আপনারা ইতোমধ্যে জানেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-২০২৫ এর তফসিল ঘোষণা হয়েছে এবং নির্বাচন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
আমি উমামা ফাতেমা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুনউমামা ফাতেমার ফেসবুক পোস্ট: ঠিকমতো খোঁজ নিলে বুঝবেন, এদের শেকড় অনেক গভীরে২৭ জুলাই ২০২৫আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম এবং রাজনৈতিক সংগঠনের ভিতরে বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করে আসছি। ১ম বর্ষে থাকাকালীন বৈধ সিটের দাবিতে ‘বৈধ সিট আমার অধিকার’ নামক প্ল্যাটফর্মটি গড়ে তুলি, পাশাপাশি আমার এই স্বল্প পথচলার অভিজ্ঞতায় আমি অনুধাবন করেছি যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের বিপ্লব ব্যতীত এখানকার সমস্যাগুলো সমাধান করা খুবই কঠিন, আর সে পরিবর্তন আনতে পারে কেবল শিক্ষার্থীরাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে সংঘঠিত ও লেজটিমেট একটি বডি, যেটি কেবল ছাত্র সংসদ।
আমি বিশ্বাস করি, এই ছাত্র সংসদে শিক্ষার্থীরা এমন নেতৃত্ব চায়, যারা কোনো পক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না, শিক্ষার্থীদের অধিকারের ব্যাপারে অটল থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধুমাত্র নেতা বানানোর কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে না। শিক্ষার গুণগত মান ও গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
আরও পড়ুনফেসবুক লাইভে উমামা ফাতেমা: জুলাইকে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে২৮ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনযে পরিকল্পনায় এগোচ্ছে ছাত্রসংগঠনগুলো, প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যাঁরা৩০ জুলাই ২০২৫সেই জায়গা থেকে, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে থাকা বা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবনাচিন্তা রয়েছে ঐ সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল করতে চাই যা আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে গবেষণাভিত্তিক ও দূরদর্শী কাজ করার চেষ্টা করবে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা যারা মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করা উচিত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে ও রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের ফলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে চান।
আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর২৯ জুলাই ২০২৫১ম বর্ষ থেকে বৈধ সিট, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার, সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করতে চান, আপনাদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি আমাদের প্যানেলে।
যেসকল শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে চান, তাদেরকে আমি আমাদের প্যানেলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি কমেন্টে প্রদত্ত ফর্মটি পূরণ করার জন্য—’
আরও পড়ুনএনসিপির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, হঠাৎ কেন এ কথা বললেন উমামা ফাতেমা২৯ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়লেন উমামা ফাতেমা, ফেসবুকে জানালেন কারণ২৮ জুন ২০২৫