বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষার যৌক্তিকতা কতটুকু
Published: 1st, August 2025 GMT
বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্ভবত দেশের সবচেয়ে সহজ কোনো ‘নিয়োগপ্রক্রিয়া’, যা বছরের পর বছর ধরে চর্চিত হয়ে আসছে। আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মাত্র কয়েক মিনিটের এক মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াচ্ছেন।
অথচ এই দেশে প্রাথমিক শিক্ষক হতে গেলেও কয়েকটি ধাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ফলে ‘ত্রুটিযুক্ত’ শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াকে যুগোপযোগী কিংবা বিশ্বমানদণ্ডের পরিসরে আনার আহ্বান সব সময় ছিল।
সমাজে এসব আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০১৬ সালের দিকে একটি কমিটি গঠন করে, যাঁরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য একটি ‘অভিন্ন নীতিমালা’ করার সুযোগ মিলে।
এই কমিটি কয়েকবার খসড়া করে ২০১৯ সালের দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নতির একটি ‘অভিন্ন’ নীতিমালা বা নির্দেশিকা চূড়ান্ত করে। যদিও এই নীতিমালার নানা অসংগতি ছিল, যা নিয়ে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে।
এই নীতিমালার ৩ ধারায় বিভিন্ন অনুষদের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ এবং স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের সিজিপিএকে যোগ্যতা পরিমাপের মানদণ্ড ধরে বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হচ্ছে, এক.
এই যে দুই নম্বর শর্তের বিষয়ে আমরা অনেকে প্রতিবাদ করে আসছি। এটা নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে অনেক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ‘নয়া অধ্যায়’ শুরু করছে।
আগে যেখানে কেবল মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক’ হওয়া যেত, সেই জায়গায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা হওয়ায় অনেকেই ভাবছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের এই নিয়ম যৌক্তিক এবং সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। যাঁরা যৌক্তিক মনে করছেন, তাঁরা আমার এই আলোচনার শেষে নিজের উত্তর খুঁজে পাবেন।
একজন শিক্ষক হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতা বাইরে বিবেচনা করা হয়, তা আমাদের দেশে অতিরিক্ত যোগ্যতা কিংবা যোগ্যতার শিথিলতায় আনা হয়েছে, সেসবকে কখনোই মুখ্য করেননি। ফলে মাস্টার্স পাস করা শিক্ষার্থীদের সহকর্মী করা হচ্ছে, রাজনৈতিক সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, আবার তাঁদেরকেই সবেতনে পিএইচডি করার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। অথচ সেই যোগ্যতার ডক্টরেট ডিগ্রিধারীকে এসে হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষার ফলে সেটিই হওয়ার কথা।দেখুন, বাংলাদেশে প্রচলিত এসব নিয়োগে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর ধরে নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু আছে, বিশ্বাস করুন, এ ধরনের শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া উন্নত কিংবা পার্শ্ববর্তী ভারতেও নেই। এমনকি এত সহজে বাইরের দেশে কখনো বাচ্চাদের স্কুলের শিক্ষকও হতে পারবে না।
গণ-অভ্যুত্থানের পরও সেই একই ধারায় নিয়োগপ্রক্রিয়া চলে আসছে। লিখিত পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা কীভাবে ভালো কিংবা যোগ্য প্রার্থীদের বেছে নেওয়ার উত্তম প্রক্রিয়া নয়, তার উদাহরণ হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক প্রার্থীর পাঠানো এক বার্তাকে কেস স্টাডি হিসেবে দেখা যাক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী আমাকে জানিয়েছেন, এই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আসা এক শিক্ষার্থী জাপান থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি করে এসেছিলেন শিক্ষক হওয়ার জন্য, কিন্তু ওই লিখিত পরীক্ষার কারণে তিনি বাদ পড়েছেন। এ ছাড়া সেখানে বেশ কিছু প্রার্থী ছিলেন, যাঁরা স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় এবং গবেষণা প্রবন্ধ আছে। ওই প্রার্থীর অভিযোগ, সবারই বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী রাজনৈতিক সুপারিশ আছে।
তাহলে প্রশ্ন উঠে লিখিত পরীক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পিএইচডিধারী, প্রকাশনাধারীদের শর্টলিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হলো, এই লিখিত পরীক্ষায় ভালো করা প্রার্থীই–বা কেন ভালো?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ র পর ক ষ য় প রক র য় প এইচড য গ যত র জন য হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউটিউবে কম রেজল্যুশনের ভিডিও এখন দেখাবে এইচডি মানে
ভিডিও দেখা মানেই এখন ইউটিউব। একসময় এই মাধ্যমে শুধু ২৪০পি বা ৩৬০পি রেজল্যুশনের ভিডিওই দেখা যেত। সময়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এইচডি, ফুল এইচডি ও ৪কে রেজল্যুশন। যা ইউটিউবে ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতাকে করেছে আরও প্রাণবন্ত। এবার বড় পর্দায় ভিডিওর মান আরও উন্নত করতে গুগল মালিকানাধীন মাধ্যমটি চালু করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর নতুন সুবিধা ‘সুপার রেজল্যুশন’।
নতুন এই সুবিধার মাধ্যমে ইউটিউব স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম রেজল্যুশনে আপলোড করা ভিডিওর মান উন্নত করবে। ২৪০পি থেকে ৭২০পি পর্যন্ত ভিডিওগুলো এআই প্রযুক্তির সহায়তায় রূপান্তরিত হবে এইচডি মানে। বড় পর্দায়, বিশেষ করে স্মার্ট টিভিতে, যাতে ভিডিও ঝাপসা বা বিকৃত না দেখায়, সেটিই এই প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য।
ইউটিউব জানিয়েছে, ‘সুপার রেজল্যুশন’ ভিডিওর প্রতিটি ফ্রেম বিশ্লেষণ করে ছবির সূক্ষ্মতা ও রঙের ভারসাম্য ঠিক করবে। ফলে পুরোনো বা নিম্নমানের ভিডিও আরও স্পষ্ট ও প্রাণবন্তভাবে দেখা যাবে।
প্রাথমিকভাবে এই সুবিধা ১০৮০পি ভিডিওর জন্য চালু করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে এটি ৪কে রেজল্যুশনেও কাজ করবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবহারকারীরা চাইলে এই সুবিধা বন্ধ রাখার সুযোগও পাবেন। এতে ভিডিওর মূল রেজল্যুশন অপরিবর্তিত থাকবে এবং নির্মাতারা আসল ফাইল অক্ষত রাখতে পারবেন।
ভিডিওর মান উন্নয়নের পাশাপাশি ইউটিউব হোমপেজেও আসছে নতুন পরিবর্তন। এখন ব্যবহারকারীরা হোমপেজ থেকেই কোনো চ্যানেলের ভিডিও প্রিভিউ আকারে দেখতে পারবেন। পাশাপাশি মাধ্যমটির ‘শো’ বিভাগ নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে, যাতে ধারাবাহিক সিরিজ বা সম্পর্কিত ভিডিও সহজে দেখা যায়। নির্মাতাদের জন্য বাড়ছে থাম্বনেইল আপলোডের সীমা। আগে যেখানে থাম্বনেইলের সর্বোচ্চ ফাইলের আকার ছিল ২ মেগাবাইট, এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০ মেগাবাইট। এতে নির্মাতারা ৪কে রেজল্যুশনের উচ্চমানের ছবি থাম্বনেইল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
পাশাপাশি ইউটিউব পরীক্ষামূলকভাবে চালু করছে কিউআর কোডভিত্তিক কেনাকাটার সুবিধা। এই সুবিধা চালু হলে দর্শকেরা ভিডিওতে প্রদর্শিত পণ্যের কিউআর কোড স্ক্যান করে সরাসরি তা কিনতে পারবেন।
সূত্র: টেক্লুসিভ