বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্ভবত দেশের সবচেয়ে সহজ কোনো ‘নিয়োগপ্রক্রিয়া’, যা বছরের পর বছর ধরে চর্চিত হয়ে আসছে। আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মাত্র কয়েক মিনিটের এক মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াচ্ছেন।

অথচ এই দেশে প্রাথমিক শিক্ষক হতে গেলেও কয়েকটি ধাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ফলে ‘ত্রুটিযুক্ত’ শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াকে যুগোপযোগী কিংবা বিশ্বমানদণ্ডের পরিসরে আনার আহ্বান সব সময় ছিল।

সমাজে এসব আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০১৬ সালের দিকে একটি কমিটি গঠন করে, যাঁরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য একটি ‘অভিন্ন নীতিমালা’ করার সুযোগ মিলে।

এই কমিটি কয়েকবার খসড়া করে ২০১৯ সালের দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নতির একটি ‘অভিন্ন’ নীতিমালা বা নির্দেশিকা চূড়ান্ত করে। যদিও এই নীতিমালার নানা অসংগতি ছিল, যা নিয়ে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে।

এই নীতিমালার ৩ ধারায় বিভিন্ন অনুষদের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ এবং স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের সিজিপিএকে যোগ্যতা পরিমাপের মানদণ্ড ধরে বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হচ্ছে, এক.

এমফিল–সমমান বা পিএইচডি অতিরিক্ত ডিগ্রি হিসেবে গণ্য হবে, দুই. বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রভাষক নিয়োগের জন্য ‘প্রয়োজনে’ লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে একটি শর্টলিস্ট করে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে।

এই যে দুই নম্বর শর্তের বিষয়ে আমরা অনেকে প্রতিবাদ করে আসছি। এটা নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে অনেক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ‘নয়া অধ্যায়’ শুরু করছে।

আগে যেখানে কেবল মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক’ হওয়া যেত, সেই জায়গায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা হওয়ায় অনেকেই ভাবছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের এই নিয়ম যৌক্তিক এবং সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। যাঁরা যৌক্তিক মনে করছেন, তাঁরা আমার এই আলোচনার শেষে নিজের উত্তর খুঁজে পাবেন।

একজন শিক্ষক হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতা বাইরে বিবেচনা করা হয়, তা আমাদের দেশে অতিরিক্ত যোগ্যতা কিংবা যোগ্যতার শিথিলতায় আনা হয়েছে, সেসবকে কখনোই মুখ্য করেননি। ফলে মাস্টার্স পাস করা শিক্ষার্থীদের সহকর্মী করা হচ্ছে, রাজনৈতিক সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, আবার তাঁদেরকেই সবেতনে পিএইচডি করার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। অথচ সেই যোগ্যতার ডক্টরেট ডিগ্রিধারীকে এসে হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষার ফলে সেটিই হওয়ার কথা।

দেখুন, বাংলাদেশে প্রচলিত এসব নিয়োগে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর ধরে নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু আছে, বিশ্বাস করুন, এ ধরনের শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া উন্নত কিংবা পার্শ্ববর্তী ভারতেও নেই। এমনকি এত সহজে বাইরের দেশে কখনো বাচ্চাদের স্কুলের শিক্ষকও হতে পারবে না।

গণ-অভ্যুত্থানের পরও সেই একই ধারায় নিয়োগপ্রক্রিয়া চলে আসছে। লিখিত পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা কীভাবে ভালো কিংবা যোগ্য প্রার্থীদের বেছে নেওয়ার উত্তম প্রক্রিয়া নয়, তার উদাহরণ হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক প্রার্থীর পাঠানো এক বার্তাকে কেস স্টাডি হিসেবে দেখা যাক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী আমাকে জানিয়েছেন, এই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আসা এক শিক্ষার্থী জাপান থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি করে এসেছিলেন শিক্ষক হওয়ার জন্য, কিন্তু ওই লিখিত পরীক্ষার কারণে তিনি বাদ পড়েছেন। এ ছাড়া সেখানে বেশ কিছু প্রার্থী ছিলেন, যাঁরা স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় এবং গবেষণা প্রবন্ধ আছে। ওই প্রার্থীর অভিযোগ, সবারই বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী রাজনৈতিক সুপারিশ আছে।

তাহলে প্রশ্ন উঠে লিখিত পরীক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পিএইচডিধারী, প্রকাশনাধারীদের শর্টলিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হলো, এই লিখিত পরীক্ষায় ভালো করা প্রার্থীই–বা কেন ভালো?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ র পর ক ষ য় প রক র য় প এইচড য গ যত র জন য হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা

জাপানে পড়াশোনা করার আগ্রহ থাকতে পারে অনেকের। এ আগ্রহে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ এক সুযোগ নিয়ে এসেছে দেশটির হোনজো ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ ২০২৬-এ আবেদন শুরু হয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ জাপানি বৃত্তির মাধ্যমে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যাবে। এতে রয়েছে আংশিক অর্থায়নের বৃত্তির পাশাপাশি মাসিক ভাতা, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই আন্তর্জাতিক বৃত্তি মূলত তাঁদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার লক্ষ্যেই প্রদান করা হয়। পাশাপাশি এটি জাপান এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে।

হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপের উদ্দেশ্য—

১৯৯৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে হোনজো ফাউন্ডেশনকে আন্তর্জাতিক বৃত্তি সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন টাউন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মাসানরি হোনজো। তিনি ফাউন্ডেশনের প্রাথমিক মূলধন হিসেবে ২০ কোটি ইয়েন নগদ অর্থ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ শেয়ার দান করেন এ বৃত্তির জন্য। হোনজো ফাউন্ডেশন উন্নয়নশীল দেশের সেই সব শিক্ষার্থীকে সাহায্য করে, যাঁরা ভবিষ্যতে নিজেদের দেশকে উন্নয়নের পথে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি জাপানি শিক্ষার্থীরাও বিদেশে পড়াশোনার জন্য এ বৃত্তি পেয়ে থাকেন, যা বৈশ্বিক সংযোগ ও আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

আবেদনে যোগ্যতার শর্ত

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে—

—জাপান ব্যতীত সব দেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

—আবেদনকারীকে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া কোনো গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে বা ভর্তির পরিকল্পনা থাকতে হবে।

—বর্তমান শিক্ষার্থী, যাঁরা এখনো ভর্তি হননি বা কর্মরত, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন, যদি তাঁরা এপ্রিল ২০২৬-এ ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করেন।

—যাঁরা ২০২৫ সালের শরৎকালীন সেমিস্টারে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরাও এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

—প্রফেশনাল গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণত যোগ্য নন, তবে বৈধ গবেষণা পরিকল্পনা জমা দিতে পারলে তাঁরা আবেদন করতে পারবেন।

বয়সসীমা

—পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।

—মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর।

—পড়াশোনা শেষ করার পর নিজ দেশের উন্নয়নে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার থাকতে হবে।

—আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতি আগ্রহী হতে হবে এবং ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করতে হবে।

—দৈনন্দিন কথোপকথনের মতো জাপানি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে, কারণ, সাক্ষাৎকার কেবল জাপানি ভাষায় হবে।

বৃত্তির সুবিধা

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক আর্থিক ও একাডেমিক সহায়তা প্রদান করে:

১। পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ।

২। মাসিক ভাতা।

—১ বা ২ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার ইয়েন।

—৩ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ১০ হাজার ইয়েন।

—৪ বা ৫ বছরের কোর্সের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন।

—জাপানে যাওয়ার জন্য ট্রাভেল গ্র্যান্ট দেওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।

—আর্থিক দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ।

—জাপানের সংস্কৃতিময় জীবনযাত্রা উপভোগের পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগ।

—বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্লোবাল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ।

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তিতে শিক্ষার্থীরা পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ পাবেন এবং পাবেন মাসিক ভাতা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা