উদ্বোধন হয়নি তিস্তা সেতু, অপেক্ষা আরো ২৩ দিন
Published: 3rd, August 2025 GMT
পূর্ব নির্ধারিত সময়ের অন্তিম মুহূর্তে তিস্তা সেতুর উদ্বোধন পেছানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বহুল প্রতিক্ষার এই সেতুটি শনিবার ২ আগস্ট উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিলেন গাইবান্ধা ও কুরিগ্রামের (হরিপুর-চিলমারী) লাখো মানুষ। নতুন সময় অনুযায়ী আগামী ২৫ আগস্ট এই সেতু উদ্বোধন করা হবে।
গত ৪ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো.
আরো পড়ুন: চলতি মাসেই খুলতে পারে চিলমারী-হরিপুর ব্রিজ
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জের ঘটনায় সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করবে: সেতু উপদেষ্টা
চলতি মাসেই খুলতে পারে চিলমারী-হরিপুর ব্রিজ
সেতু উদ্বোধনের তারিখ পেছানো সম্পর্কে জানতে চাইলে রবিবার (৩ আগস্ট) এলজিইডির গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, “আমাদের কাছে হঠাৎ নির্দেশনা এসেছে। আগস্ট মাস ঘিরে ওপর মহলে হয়তো ব্যস্ততা রয়েছে। সে কারণেও তারিখ পেছানো হতে পারে। ২৫ আগস্ট নতুন তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে। এর বেশি আমার জানা নেই।”
সেতুটি চালু হলে শুধু দুই উপজেলার মানুষ নয়, গাইবান্ধা এবং কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সেতুটি বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসা সংশ্লিষ্টরা।
তিস্তা সেতু বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করা শরিতুল্ল্যাহ মাস্টার বলেন, “স্বপ্নের তিস্তা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিলাম। তিস্তা সেতু (হরিপুর-চিলমারী) এবারো উদ্বোধন হলো না। ২ আগস্ট থেকে পিছিয়ে আগামী ২৫ আগস্ট সেতু উদ্বোধনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো উদ্বোধনের তারিখ পেছানো হলো।”
তিনি আরো বলেন, “এই তিস্তা সেতু বাস্তবায়নের দাবিতে ১৯৯৫ সালে আমি একাই আন্দোলন শুরু করি। তখন মানুষ আমাকে অবজ্ঞা করত। তিস্তা সেতুর কথা কল্পনাও করতে পারেননি তারা। আমি উত্তরবঙ্গের মানুষের ভাগ্য বদলাতে এই আন্দোলন করেছি। নিজের স্বার্থের জন্য কিছু করিনি।”
বারবার উদ্বোধনের তারিখ পেছানোয় আশাহত এবং ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি, এবার ২৫ আগস্ট তারিখটি যেন কোনোভাবেই পেছানো না হয়।
তিস্তা সেতুটি শরিতুল্ল্যাহ মাস্টারের নামে নামকরণের আন্দোলনের আহ্ববায়ক শামিম মন্ডল বলেন, “আমরা জানতাম ২ আগস্ট তিস্তা সেতু উদ্বোধন হবে এবং সেটি শরিতুল্ল্যাহ মাস্টারের নামে নামকরণ করা হবে। উদ্বোধনের আগে এবারো তারিখ পেছানো হলো।”
তিনি আরো বলেন, “যে মানুষটি ৩০ বছর ধরে মানুষের বঞ্চনা সহ্য করে তিস্তা সেতুকে বাস্তবে রূপ দিলেন, আমরা এলাকাবাসী তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তার কারণেই উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে। আগামী ২৫ আগস্ট তিস্তা সেতুর উদ্বোধনের আগেই সেতুটির নাম পরিবর্তন করে শরিতুল্ল্যাহ মাস্টারের নামে নামকরণ করার জোর দাবি জানাই।”
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি নির্মিত হয়েছে সৌদি সরকারের অর্থায়নে, চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে। ৮৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১,৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটি বাস্তবায়নে সরাসরি তদারক করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। দেশের ইতিহাসে এটিই এলজিইডির সর্ববৃহৎ প্রকল্প।
সেতুটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক। যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু। বেলকা বাজার, পাঁচপীর, ধর্মপুর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাদুল্যাপুর ও ধাপেরহাটসহ অন্তত ১০টি বাজার ও মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে পুরো সুন্দরগঞ্জ ও চিলমারী অঞ্চল।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়। এরপর ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর সেতুটি পরিদর্শনে আসেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ। সে সময়ে তিনি চলতি বছরের মার্চে সেতুটি উদ্ধোধন হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২ আগস্ট উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সেটি পিছিয়ে এখন আগামী ২৫ আগস্ট নির্ধারন করা হয়।
ঢাকা/মাসুম/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন য় সরক র ২৫ আগস ট ২ আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
সংস্কার শেষে ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এ কারার যাত্রা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামিদের রাখা হবে।
কারা সূত্র জানায়, দেশের পুরোনো চারটি কারাগারের মধ্যে ফেনী-২ কারাগার একটি। শত বছরের পুরোনো এ কারাগার ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এ কারণে ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে কারাগারটি অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল।
নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে জেলা এটিকে কারাগারে উন্নীত হয়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৭২ জন। এর মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন বন্দীকে আনা হয়েছিল। তাঁরা সবাই সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত। এ কারাগারে তাঁরা রান্নার দায়িত্বে থাকবেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনীর দ্বিতীয় কারাগারে আনা হবে। আপাতত এতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এ কারাগার নিয়ে বর্তমানে দেশে কারার সংখ্যা ৭১।
জানতে চাইলে ফেনী-২–এর জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের কেন্দ্র হোক। এরই অংশ হিসেবে সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে।’
কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার ফেরদৌস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সও যোগদান করেছেন। বেশির ভাগ পদে কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।’