মহাসড়কের গর্তে উল্টে গেল অটোরিকশা, লরিচাপায় মা-ছেলেসহ নিহত ৩
Published: 4th, August 2025 GMT
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের গর্তে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উল্টে গিয়ে তিন যাত্রী লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাইপাইল কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন আলতাফ হোসেন (৫০), নূরজাহান বেগম (২৪) ও তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ (৪)। তাঁরা সবাই আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় থাকতেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে বাইপাইলের দিক থেকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে উল্টো পথে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) দিকে যাচ্ছিল। রাত সাড়ে নয়টার দিকে রিকশাটি বাইপাইল কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে একটি লরি আসছিল। তখন সড়কের পাশে পানি জমে থাকায় সড়কের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে অটোরিকশাটি। এ সময় রিকশাটি সড়কের গর্তে পড়ে উল্টে যায় এবং তিন যাত্রী লরির পেছনের চাকার নিচে পড়েন। ঘটনাস্থলেই আলতাফ হোসেন মারা যান। আহত অবস্থায় নূরজাহান বেগম ও তাঁর ছেলেকে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখানে তাঁদের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু সময়ের জন্য মহাসড়কের নবীনগরমুখী লেন আটকে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
লিটন আহমেদ নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘রাস্তা পার হওয়ার সময় দেখতে পাই, রিকশাটি গর্তে উল্টে গিয়ে একটি বড় লরির পেছনের চাকার নিচে পড়ে যায়। এতে একজন ঘটনাস্থলে মারা যান। অন্য দুজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ১০টার দিকে নবীনগর–চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আলতাফ নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা ও ছেলের মৃত্যু হয়। হাসপাতাল থেকে তাঁদের দুজনের মরদেহ থানায় আনা হয়েছে। অটোরিকশা চালকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
কলকাতায় এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যা
এনআরসি আতঙ্কে কলকাতায় আত্মহত্যা করেছেন এক ব্যক্তি। রবিবার (৩ আগস্ট) সকালে রিজেন্ট পার্ক এলাকার আনন্দপল্লী পশ্চিমের বাসিন্দা দিলীপ সাহা নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, সম্প্রতি বিজেপি সরকার এসআরআর করার মাধ্যমে ঘুরপথে এনআরসি কার্যকর করবে এমন আশঙ্কায় আতঙ্কে ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি। ১৯৭২ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে কলকাতায় আসেন তিনি। কলকাতা বেসরকারি স্কুলে চাকরি করতেন তিনি। তাকে আবার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এই আতঙ্কেই নিজেকে শেষ করেছেন বলে দাবি পরিবারের ।
পরিবারের লোকজন দাবি করছেন, এনআরসি আতঙ্কে আট বছর ধরে আতঙ্কিত ছিলেন। সম্প্রতি এসআইআর ও বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাদেশিদের ধরপাকড় নিয়ে তার আতঙ্ক চরমে পৌঁছায়। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, সবসময় ভয়ে থাকতেন এবং এনআরসি আতঙ্কের কথা তিনি সকলকেই বলতেন। টিভিতে এনআরসি সংক্রান্ত ইস্যুতে খবর দেখে তার আতঙ্ক আরো চেপে বসে। পরিবারসহ তাকে যেকোনো সময় বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এই আতঙ্ক তাকে তাড়া করত। এই আতঙ্ক তাকে এতটাই গ্রাস করে ফেলে যে, আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
আরো পড়ুন:
বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলায় ক্ষুব্ধ মমতা
১২৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে জিততে পারবে কি ইংল্যান্ড?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অন্তত ৩০ বছর ধরে সপরিবারে রিজেন্ট পার্ক এলাকায় থাকতেন দিলীপ কুমার সাহা। স্ত্রী-ছেলে-পুত্রবধূ নাতনি সকলকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন। একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি করতেন তিনি। ছয় বোনের একমাত্র ভাই তিনি। সকলেই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। কলকাতায় এসে বিয়ে, সংসার ইত্যাদি হয় তাদের। এনআরসি ইস্যু এবং পুশব্যাক করে দেওয়ার আতঙ্ক তাড়া করত। এর জেরে তার শরীর খারাপ হয়েছিল।
রবিবার সকালে তাঁর স্ত্রী বেশ কয়েকবার দিলীপ সাহাকে ডেকেছিলেন। কিন্তু বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। এরপর তিনি পাশের একটি বাড়ি থেকে তার ভাগ্নিকে ডাকেন। এরপর তারা দরজা ভেঙে তাকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
এরপরই পরিবারের এক সদস্যের ভিডিওসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে আক্রমণ করা হয় বিজেপি সরকারকে।
পোস্টে রাজ্যের শাসক দলের তরফে লেখা হয়, “বিজেপির আতঙ্কে আত্মহত্যা কলকাতার টালিগঞ্জের এক বাসিন্দার। বিজেপি দেশজুড়ে যেভাবে বাঙালি জাতির ওপর আক্রমণ শুরু করেছে, বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও এনআরসির নোটিশ পাঠাচ্ছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে, এসআইআর করে ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে- এই সব কিছুর আতঙ্কে দিন গুজরান করতে করতে শেষমেষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন এক বাসিন্দা। একটা জনবিরোধী, বাংলা-বিরোধী দল কীভাবে বাঙালিকে শেষ করে দিতে চাইছে নিজের চোখেই দেখুন, ছিঃ বিজেপি ছিঃ।”
এদিকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, “কেউ কোথাও আত্মহত্যা করলেই এনআরসি আতঙ্ক বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে শাসক দলের এত নেতা-কর্মী রোজ মারা যায় তাও কী আতঙ্কে মারা যাচ্ছেন?”
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ